Wednesday, November 12, 2014

কোন্দল মেটাতে প্রধানমন্ত্রীই ভরসা!:প্রথম অালো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোন্দল মেটাতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন রাজনৈতিক নেতাদের শরণাপন্ন হয়েছেন। ছাত্রলীগের একটি পক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আরেক পক্ষ কোনোভাবেই এদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিতে রাজি নয়। পাঁচ মাস ধরে এখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। ছাত্রলীগের অব্যাহত কোন্দলের ইতি টানতে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর
দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সেনাবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং একটি উড়ালসেতু উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ চট্টগ্রাম সফরের কথা রয়েছে। সে সময়ে চ্ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিষয়ে আলাপ করার প্রস্তুতি নিয়েছে এই পক্ষগুলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে ছাত্রশিবিরের ধর্মঘট বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম পুলিশের বিশেষ শাখা। ওই প্রতিবেদনে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাত্র-শিক্ষকের সমন্বয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর বিদ্যমান বিরোধসহ তাদের দাবি-দাওয়া দ্রুত নিরসন করার সুপারিশ করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতা, জেলা প্রশাসন ও ছাত্রসংগঠন সূত্রে জানা গেছে, কোন্দল ও মারামারির কারণে গত ১০ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কোনো নেতৃত্ব না থাকায় কোন্দল কমার বদলে বিস্তৃত হয়েছে। কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগ এখন তিন ভাগে বিভক্ত। তিন পক্ষই মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এর মধ্যে শাটল ট্রেনে চলাচলকারী বগিভিত্তিক একটি পক্ষ ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস বা ভিএক্স’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শাটল ট্রেনে চলাচলকারীদের আরেকটি অংশ ‘চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার বা সিএফসি’ নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাকি অংশটি ‘ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ’ নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ এখন একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করে। এই তিন পক্ষের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হলে তাতে কোন পক্ষের সংখ্যাধিক্য থাকবে—এই বিরোধের মূল কারণ সেখানে নিহিত। এই বিরোধ নিরসনে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, জেলা প্রশাসক, এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরসহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ নেতৃস্থানীয়দের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আনোয়ারুল আজিম আরিফ ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আগামী শনিবার তাঁদের আবারও বৈঠক করার কথা রয়েছে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতারা চান, ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা ছাত্ররা হলে উঠুক, তাঁরা ছাত্রলীগের বড় পদে আসীন হোক। তবে যাঁদের বহিরাগত বা অছাত্র বলা হচ্ছে, সেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, তাঁরা এখনো ছাত্র আছেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাইরে রাখা হয়েছে, ছাত্র হিসেবে তাঁদের কাছে সব ধরনের কাগজপত্র আছে। ভিসিকে এ জন্য দায়ী করে তাঁরা বলেন, তিনি নিজের স্বার্থে ছাত্রলীগের ওই নেতা-কর্মীদের ব্যবহার করছেন বলেই প্রকৃত ছাত্রদের বহিরাগত বলে চিহ্নিত করছেন। ছাত্রলীগের এই কোন্দল মেটাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ছাত্রলীগের কর্মিসভায় সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো গ্রুপ থাকবে না। কাউকে কথায় কথায় অবাঞ্ছিত করা যাবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আসার পর এ বিষয়ে আলোচনা হলেই কেবল তিনি মুখ খুলবেন। এখন এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে আ জ ম নাছিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাইয়ের অনুসারীদের মধ্যেই এসব কোন্দল চলছে। আমি মনে করি, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার উপযুক্ত, তাদেরই সেখানে থাকা উচিত।’ আনোয়ারুল আজিম আরিফ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি চান বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠুক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চায় না প্রাক্তন ছাত্ররা আবার ক্যাম্পাসে আসুক। পাস করার পর ছাত্ররা কেন হলে উঠবে, এ প্রশ্ন আমারও। হলে বৈধ ছাত্রদের ধারণক্ষমতাই যেখানে নেই, সেখানে অবৈধদের কোথায় জায়গা দেব?’ এই পক্ষের সবাই বহিরাগত কি না, জানতে চাইলে ভিসি বলেন, ‘না, এদের সঙ্গে জুনিয়র কিছু ছাত্র আছে।’ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি, এ ধরনের কোন্দল চলছে। সমঝোতা হয়, আবার পরিস্থিতি উল্টে যায়। রাজনৈতিক উদ্যোগই এ অবস্থার অবসান করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ চট্টগ্রামে এলে আমরা বিষয়টি নজরে নেওয়ার চেষ্টা করব।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, গত ১১ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো. জালালকে তাঁর নিজ এলাকায় কথিত ছাত্রশিবির মারধর করে। এর প্রতিবাদে ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে শাহ আমানত হলের ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হোসেন (মৃত্তিকাবিজ্ঞান) নিহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহ আমানত হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুনভাবে আবেদনের ভিত্তিতে আসন বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিলে এর প্রতিবাদে ছাত্রশিবির সংগঠিত হয়। গত ২৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় আবার উত্তপ্ত হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি বৈঠক করে সোহরাওয়ার্দী হল সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখে। অন্যদিকে শাহজালাল, শাহ আমানত ও সোহরাওয়ার্দী হলে বৈধ আবাসিক ছাত্রদের বরাদ্দ করা সিটে ওঠার দাবিকে কেন্দ্র করে শিবির সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে এর পর থেকে নিয়মিতভাবে অনির্দিষ্টকালের ছাত্র ধর্মঘট, ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ চালাতে থাকে। ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও ভিএক্স গ্রুপের নেতা জালাল আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে বহিরাগত বা অছাত্ররা। বাইরে থেকে কোনো ছাত্র হলে ঢোকানোটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এঁদের এখন ঢোকাতে চাইছেন রাজনৈতিক নেতারা। আর এঁরা হলে উঠলে এঁরাই নেতৃত্ব নিয়ে নেবেন। তাই যখনই বহিরাগতরা হলে ওঠার জন্য চাপাচাপি করেন, তখনই সমস্যা শুরু হয়। এ সমাধান একমাত্র দিতে পারবেন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতারাসহ প্রধানমন্ত্রী।’ বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের অন্যতম নেতা অমিত কুমার বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দুই শতাধিক নিয়মিত শিক্ষার্থীকে অছাত্র বলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভিসি তাঁর অপকর্ম ঢাকতেই আমাদের বিরুদ্ধে এসব মন্তব্য করছেন।’

No comments:

Post a Comment