Tuesday, December 2, 2014

পরের উৎসব কাইয়ুম চৌধুরীকে উৎসর্গ:প্রথম অালো

বিদুষী কিশোরী আমনকরের বয়স এখন ৮৩। বিস্ময়করভাবে স্বরের চূড়ায় উঠে তড়িৎ নিচে নেমে আসায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এই বয়সে এসে স্বরের সেই প্রয়োগে কিছুটা খামতি ধরলেও মায়াবী কণ্ঠে ‘ঝন না ঝন না বাজে’ বন্দিশে সুরের মায়াজাল তৈরির ব্যাপারে এখনো পটু।  কিশোরী আমনকরের বেশ কিছু হৃদয় নিংড়ানো রাগের মধ্যে অন্যতম একটি সুহা। গতকাল সোমবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের শেষ দিনে আবারও হৃদয় নিংড়ে গাইলেন রাগ সুহা।
এ যেন নিজেকে উজাড় করে দেওয়া। গভীর মমতায় সুরমঙ্গলকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরা এবং চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে গাওয়া—সবই আগের মতো। তার ওপর নিভিয়ে দিলেন মঞ্চের আলো। যদিও পরে তাঁর অনুমোদনে মৃদু আলো জ্বলেছিল। জয়পুর ঘরানার ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বরের শুদ্ধতার ব্যাপারে যত্নশীল কিশোরী আমনকর গতকাল কিছুটা অসুস্থ থাকায় ঘন ঘন কাশছিলেন। তবু দরদি কণ্ঠে সুহা রাগের ঘুমপাড়ানি সুরে ৫০ মিনিট ধরে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন শ্রোতা-দর্শকদের। ‘ঝনানা ঝানানা বাজে মোরি পায়েল’ বন্দিশটি ছিল বিলম্বিত ও দ্রুত তিনতালে বাঁধা। তাঁর সম্মোহনী কণ্ঠের সঙ্গে তবলায় সহযোগিতা করেন ভরত কামাত এবং হারমোনিয়ামে সইয়োগ কুণ্ডলকর। সুহা রাগের আগে তিনি পরিবেশন করেছিলেন রাগ কেদার। কিশোরী আমনকর মঞ্চে ওঠার আগে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ঘোষণা দেন, বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীতের আগামী উৎসব সদ্য প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হবে। পাঁচ দিনব্যাপি উৎসবের সমাপনী দিনের উদ্বোধনী আলোচনায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের প্রস্তাবে আবুল খায়ের এ ঘোষণা দেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, সংস্কৃতিতে সেবা করা একধরনের বিনিয়োগ। এই উৎসব নবজাগরণের সৃষ্টি করেছে, যা নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করবে এবং তাদের ভাবালোককে সমৃদ্ধ করবে। বিশেষ অতিথি প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি আছেন। আছেন আমাদের হৃদয়ে। ভবিষ্যতেও থাকবেন। বীরের মৃত্যু হয় সম্মুখ সমরে। শিল্পসাধক কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে হাজার হাজার মানুষের সামনে গানের কথা বলতে বলতে।’ ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের রুচির অবক্ষয় ঘটছে। এই উৎসব মানুষের উন্নত রুচি গঠনে সাহায্য করছে। আমরা যেন সেই রুচি ধরে রাখতে পারি। আবুল খায়ের বলেন, ‘উচ্চাঙ্গসংগীতে আমাদের ঐতিহ্য আছে। সেই হারানো ঐতিহ্য আমরা ফিরিয়ে আনব।’ এই প্রতিবেদন লেখার সময় মঞ্চে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন বাংলাদেশের শিল্পী এম মনিরুজ্জামান। এবারের মহোৎসবের শেষ শিল্পী হিসেবে মঞ্চে ওঠার কথা রয়েছে গোয়ালিয়র ঘরানার সরোদিয়া ওস্তাদ আমজাদ আলী খানের। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৪। দিনের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আগে বাংলাদেশের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, ‘বেঁধেছে এমনও ঘর’ ও ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গান তিনটি। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন অদিতি মহসিন, অনিন্দিতা চৌধুরী, আজিজুর রহমান, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বুলবুল ইসলাম, চন্দনা মজুমদার, ইলোরা আহমেদ, ফাইম হোসেন চৌধুরী, ফরিদা পারভীন, ইফফাত আরা দেওয়ান, জান্নাত ই ফেরদৌস, ঝুমা খন্দকার, খায়রুল আনাম শাকিল, কিরণ চন্দ্র রায়, লাইসা আহমেদ, মাসুদা নার্গিস আনাম, মিতা হক, মহিউজ্জামান চৌধুরী, নাসিমা শাহীন, প্রিয়াঙ্কা গোপ, শাহীন সামাদ, শামা রহমান, শারমীন সাথী ইসলাম, সুবীর নন্দী, ইয়াসমীন মুশতারি, ইয়াকুব আলী খান। এরপর কত্থক নাচ পরিবেশন করেন বিশাল কৃষ্ণ। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীতের পাঁচ দিনের মহোৎসবে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে প্রথম আলো। স্কয়ার নিবেদিত এই আয়োজনে আরও সহায়তা দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক, ডেইলি স্টার, এবিসি রেডিও ও মাছরাঙা টেলিভিশন।

No comments:

Post a Comment