রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের খরাপ্রবণ উঁচু পোড়া মাটিতে এবার প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে কার্পাস জাতের তুলা। রাজশাহী জোনের আওতাধীন চারটি জেলায় (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর) তুলা উন্নয়ন বোর্ডের খরাপ্রবণ অঞ্চলে তুলা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কার্পাস জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। রাজশাহী জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল নয়া দিগন্তকে জানান, রাজশাহী জোনের আওতাধীন বরেন্দ্র অঞ্চল হিস
েবে পরিচিত চারটি জেলার খরাপ্রবণ উঁচু পোড়া মাটিতে এবার প্রথমবারের মতো কার্পাস জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। তুলার ফলনও ভালো দেখা যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রথমবারের মতো হলেও এই তুলা চাষে কৃষকেরা অনেক লাভবান হবেন। প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, রাজশাহী জোনের আওতায় দুই হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে কার্পাস জাতের তুলা চাষের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এর বিপরীতে চাষ হয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে। তিনি আরো জানান, তুলার দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। এ বছরের দাম এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে গত বছর প্রতি মণ তুলার দাম ছিল দুই হাজার ৫২০ টাকা। বাংলাদেশে উৎপাদিত তুলা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বলেও জানান তিনি। এ দিকে রাজশাহী জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের খরাপ্রবণ অঞ্চলে তুলা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এবার গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে কার্পাস জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার খরাপ্রবণ জমিতে তুলা চাষে সফলতা পেয়ে এবারই প্রথম গোদাগাড়ী উপজেলায় তুলা চাষ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গোদাগাড়ীর পাহাড়পুর, আমতলা, জৈটাবটতলা, বসন্তপুর ও উদপুরসহ কয়েকটি এলাকার উঁচু জমিতে পরীামূলক তুলা চাষ হয়েছে। এ বছর সফলতা পেলে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে তুলা চাষ করা হবে বলে জানিয়েছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। উপজেলার উদপুর মাঠের তুলাচাষি আবদুল কুদ্দুস (৫০) জানান, এই মাঠে গভীর নলকূপের সেচব্যবস্থা না থাকায় বছরে একটি মাত্র ফসল আবাদ করা যায়। বেশির ভাগ সময় জমিগুলো পতিত পড়ে থাকে। অন্য দিকে তুলা চাষে খরচ একটু বেশি হলেও সেচের প্রয়োজন কম হওয়ায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে এই মাঠের কৃষকেরা এবার তুলা চাষ করেছেন। আবদুল কুদ্দুস ও তার ভাই নূর-ইসলাম মিলে এবারই প্রথম ৯ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন বলেও জানান তিনি। জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কৃষকেরা এবার প্রথমবার তুলা চাষ করায় তাদের বিশেষভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। কৃষকদের সব সময় সহায়তা দিতে তুলা চাষ হওয়া এলাকাগুলোতে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি ইউনিট অফিস খোলা হয়েছে। এই অফিস দু’টিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দু’জন কটন অফিসার সার্বণিক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিনই তারা তুলার জমিগুলো পরিদর্শন করেন। মাঝে মাঝে ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারাও পরিদর্শন করেন। সূত্রটি আরো জানায়, গোদাগাড়ী উপজেলায় চাষ হওয়া ৩৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ২০০ জন কৃষকের ২০০ বিঘা জমিতে প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এই ২০০ বিঘা জমির সম্পূর্ণ খরচ তুলা উন্নয়ন বোর্ড বহন করছে। এর বাইরের জমিতেও বীজ, সার ও কীটনাশক দিয়ে সহায়তা করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। তবে এই খরচটি কৃষককে দেয়া ঋণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। জমি থেকে তুলা উঠলে তারা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কাছেই সেগুলো বিক্রি করবেন। সেখান থেকে কৃষকের ঋণের টাকা কেটে নেয়া হবে। তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশের কটন শিল্প অনেকটা ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, সুদানসহ বিভিন্ন দেশের তুলার ওপর নির্ভরশীল। এই পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এ কারণে আমেরিকান বীজ আমদানি করে দেশে তুলা চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
No comments:
Post a Comment