তাঁরা ১৩ জন। তাঁদের মধ্যে কেউ দুই বছর, কেউবা দেড় বছর আগে মাস্টার্স পাস করেছেন। আবার কেউ মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ফলের অপেক্ষায় আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কেউ হলে থাকতে না পারলেও তাঁরা সবাই হলে অবস্থান করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের নেতৃত্বেও রয়েছেন তাঁরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ দৌলাহ এ বিষয়ে প্রথম আলো
কে বলেন, ‘ওরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় নিয়ে আবাসিক হলে থাকে। আমি প্রক্টর কী করতে পারি?’ ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, ওই ১৩ জনের মধ্যে শাহ আমানত হলে অবস্থান করছেন ছয়জন। তাঁরা হলেন অমিত কুমার, শাহাদাৎ হোসেন, সুমন মামুন, রাকিব হোসেন, আলাউদ্দিন আলম ও মোহাম্মদ ফারুক। তাঁরা সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ নামে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে শাহজালাল হলে অবস্থান করছেন বাকি সাতজন। তাঁরা হলেন আরিফুল ইসলাম, জালাল আহমেদ, হাবিবুর রহমান, রূপম বিশ্বাস, সরওয়ার পারভেজ, আশরাফুজ্জামান ওরফে আশা ও শফিক আহমেদ। তাঁরা ভিএক্স (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) নামে পৃথকভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গত রোববার শাহ আমানত হলের সামনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তাপস সরকার নিহত হন। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ভিএক্স পক্ষের ওই সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের একটি সূত্র বলছে, মামলার পর তাঁদের ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে না। ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, ভিএক্স পক্ষের আরিফুল ইসলাম শাহজালাল হলের সুনির্দিষ্ট কোনো কক্ষে থাকেন না। একেক দিন একেক কক্ষে রাত কাটান। জালাল আহমেদ ও শফিক আহমেদ ৩৩৭ নম্বর কক্ষে, হাবিবুর রহমান ৩১২, রূপম বিশ্বাস ৩১১, সরওয়ার পারভেজ ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকেন। ৩৩০ এবং ৩৩৩ নম্বর কক্ষ একাই দখলে রেখেছেন আশরাফুজ্জামান। তাপস খুনের প্রধান আসামিও আশরাফুজ্জামান। এ বিষয়ে শাহজালাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘ওরা ছোট ভাইদের সঙ্গে আবাসিক হলে মাঝেমধ্যে রাত যাপন করে। তাদের নামে আসন বরাদ্দ নেই। ছাত্রলীগের বড় নেতা বলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হলে থাকে ওরা।’ অন্যদিকে সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ পক্ষের অমিত কুমার, শাহাদাৎ হোসেন, সুমন মামুন, আলাউদ্দিন আলম, রাকিব হোসেন ও মোহাম্মদ ফারুক শাহ আমানত হলের ৩০১, ৩০২ ও ৪০১ নম্বর কক্ষে ভাগাভাগি করে থাকছেন। শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবুল মনছুর বলেন, ‘ওদের আসন বরাদ্দ নেই। আমি বিষয়টি তাদের জানিয়েছি, যাতে হলে অবস্থান না করে। ওরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথা বলে হলে ওঠে।’ প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘যারা ছাত্ররাজনীতি করে তারা আমাদের কথা শুনতে চায় না।’ এ বিষয়ে ভিএক্স পক্ষের নেতা আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাস্টার্স পরীক্ষায় পাস করেছি। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার অধীনে বিপিএড কোর্সে ভর্তি হয়েছি।’ পাস করার পরও ক্যাম্পাস ত্যাগ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। আমি সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী।’ ভিএক্স পক্ষের জালাল আহমেদ বলেন, ‘আমি উদ্ভিদবিদ্যা থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি। ছাত্ররাজনীতি করি বলে ক্যাম্পাসে থাকতে হচ্ছে। কেউ বললে হুট করে ছাত্রাবাস ছাড়তে পারি না। রাজনীতি গুছিয়ে দিয়ে চলে যাব।’ সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ পক্ষের অমিত কুমার বসু বলেন, ‘আমি এমফিল করছি। পিএইচডি গবেষণা করার ইচ্ছে আছে। পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে এমফিল গবেষণা করতে এক বছর কেন বাধা দিল?’ সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ পক্ষের সুমন মামুন বলেন, রাজনীতি বিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স পাস করার পর আরবি ভাষার কোর্সে ভর্তি হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে আগ্রহী। তাই গবেষণা করতে এমফিলে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ছাত্রাবাস ত্যাগ না করার কারণ জানতে চাইলে মামুন বলেন, ছাত্ররাজনীতি করি। ক্যাম্পাসে স্বচ্ছ রাজনীতির চর্চা থাকলে আগামী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগ্রহ রয়েছে। ওই ১৩ জনের হলে অবস্থানের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, মাস্টার্স পাস করেছে কিংবা পরীক্ষা দিয়েছে, এমন ছাত্রদের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসের সমস্যার মূল কারণ। তাঁদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে পারলে সমস্যা কেটে যাবে। উপাচার্য বলেন, শাহ আমানত হলে অবস্থান করছেন অমিত কুমার, শাহাদাৎ হোসেন, সুমন মামুন, রাকিব হোসেন ও আলাউদ্দিন আলম দেড়-দুই বছর আগে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। একইভাবে শাহজালাল হলে জালাল আহমেদ, আশরাফুজ্জামানসহ কয়েকজন মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছেন। এঁদের ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের নির্দেশনা রয়েছে। না গেলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
No comments:
Post a Comment