নম্বরটি ভিন দেশী। সংশ্লিষ্ট দেশের টাওয়ার ব্যবহার হয়েই বাংলাদেশের নম্বরগুলোতে আসছে কল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এই নম্বরগুলো শনাক্ত করতে পারছে না। ধরে নেয়া হচ্ছে ভিনদেশী নম্বর হিসেবেই। অথচ দেশে বসেই এ নম্বরগুলো ব্যবহার হচ্ছে। আর বেশ কিছু সন্ত্রাসী এই নম্বর ব্যবহার করে দেদার চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। বিদেশে আছে এই ধারণা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ওই সব সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করা এবং গ্
রেফতারের কোনোই উদ্যোগ নিচ্ছে না। কেস স্টাডি : রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী। দেশ-বিদেশে তার ব্যবসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী দীর্ঘ দিন ধরেই চাঁদাবাজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। হঠাৎ গত শুক্রবার বিকেলে তার মোবাইলে একটি ফোন আসে। নম্বরটি বিদেশী বলে মনে হয়েছে তার। ফোন রিসিভ করার পরে অপর প্রান্তে যার কণ্ঠ শোনা গেল সেটি ওই ব্যবসায়ীর পরিচিত। ব্যবসায়ীকে ওই সন্ত্রাসী জানাল সে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছে। যে দেশের কথা বলা হলো সে দেশেরই কোড নম্বর ব্যবহার করে ওই ফোনটি এসেছে। ব্যবসায়ী বিশ্বাস করে নিলেন ওই সন্ত্রাসী বিদেশে অবস্থান করছে। তার কাছে দাবি করা হলো মোটা অঙ্কের চাঁদা। তিনি কিছু টাকা দিতে রাজিও হলেন। কিন্তু রাতে জানতে পারলেন ওই সন্ত্রাসী ঢাকাতেই অবস্থান করছে। তিনি বেশ কয়েক জায়গা থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হলেন। কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব? তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বিষয়টি অবহিত করলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাফ জানিয়ে দিলো বিদেশী নম্বর। এই নম্বর কোথায় অবস্থান করছে তা উদঘাটন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এভাবে অহরহ বিদেশী নম্বর ব্যবহার করে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। রাজধানীর প্রতিটি সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছেই এভাবে ভিনদেশী মোবাইল কোম্পানিগুলোর সিমকার্ড রয়েছে বলে জানা গেছে। যে সিমকার্ড ব্যবহার হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে, এসব সিমকার্ডের কিছু রয়েছে রোমিং করা। আর বিশ্বের কোন কোন দেশের মোবাইল সিমকার্ড রয়েছে যা রোমিং ছাড়াই বিশ্বের যেকোনো দেশে বসে ব্যবহার করা যায়। ওগুলোর কলচার্জও বেশি নয়। সংশ্লিষ্ট দেশে বসে যে রেটে কল করা যায় সে রেটেই অন্য দেশে বসেও কল করা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য বলেন, এই নম্বরগুলোর অবস্থান নিশ্চিত করা খুবই দুরূহ। দেশে বসে এই নম্বরগুলো ব্যবহার করা হলেও তা সংশ্লিষ্ট দেশের টাওয়ার ঘুরে এদেশের নম্বরে প্রবেশ করে। ফলে ওই নম্বরগুলোর অবস্থান শনাক্ত করা অনেক সময়ই সম্ভব হয় নয়। আর এই সুযোগটি নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। চাঁদাবাজি করতে, মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতে এই নম্বরগুলো ব্যবহার করছে তারা। বিশেষ করে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশের নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে এসব কাজে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতের প্রায় সব মোবাইল কোম্পানির নম্বরই সীমান্তে বসে ব্যবহার করা যায়। সীমান্তে বসে ওপারের টাওয়ার হয়ে এসব কল চলে আসে বাংলাদেশের নম্বরগুলোতে। বেশির ভাগ চাঁদাবাজি হচ্ছে এই নম্বরগুলো ব্যবহার করে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারাও এ ধরনের ফ্রি সিম ব্যবহার করে থাকেন। কিছু অসাধু কর্মকর্তা চড়া দামে এসব সিম বা রিপ্লেসমেন্ট সিম অপরাধীদের সরবরাহ করে থাকেন এমন অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, এসব নম্বর শনাক্ত করা যায় না তেমন নয়। তবে একটু সময় লাগে। র্যাবের মিডিয়া উইং প্রধান মুফতি মাহমুদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেক সময় বিদেশে বসেও সন্ত্রাসীরা ফোন করে। এটা ভেরিফাই করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে, কোনটা দেশে বসে করছে আর কোনটা বিদেশে বসে করছে। তিনি বলেন, বিদেশী নম্বর ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা ফোন করছে এরূপ অভিযোগ আমাদের কাছেও আসছে। অনেক সময় রোমিং নম্বর থেকে এ ফোন করা হয়। তবে এগুলো যে একেবারেই শনাক্ত সম্ভব নয়, বিষয়টি তেমন নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
No comments:
Post a Comment