তিতাসের কূপ খননে ত্রুটি বা গাফিলতির কারণে অতিরিক্ত পানি উৎপাদনে বাড়তি যে অর্থ ব্যয়ে হয়েছে তার দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হচ্ছে। কূপ উন্নয়নে গ্যাসের সাথে অতিরিক্ত পানি ওঠার কারণে ঠিকাদারকে ১৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে সরকারকে। ঠিকাদারকে চুক্তির বাইরে অর্থ দিতে চুক্তিমূল্য সংশোধন করতে হয়েছে। অন্য দিকে, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করায় কূপ খনন প্রকল্পে ব্যয় ৫৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়
েছে বলে কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশনের এক সভার পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে, তিতাসের ২০ নম্বর কূপ হতে গ্যাসে সাথে অতিরিক্ত পানি উঠে আসার কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রোম ইপি ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট বিভি রেমিডায়াল কাজ করে। আর এর জন্য তাকে অতিরিক্ত এক কোটি ৭৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৫৪.৮৫ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়Ñ যা ছিল চুক্তিমূল্যের বাইরে। এর জন্য ডিপিপিতে চুক্তিমূল্য সংশোধন করতে হয়েছে। এই খননকাজে অতিরিক্ত পানি ওঠার দায় কার তা তদন্তের জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, খননকাজে ত্রুটি বা গাফিলতির কারণে রিমিডায়াল কাজের জন্য ঠিকাদারকে যে অতিরিক্ত প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে এই ব্যয়ের দায় শুধু বাংলাদেশ সরকারই বহন করবে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। গাফিলতির জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রোম ইন্টারন্যাশনালের কোনো দায় আছে কি না সেটাও দেখতে বলা হয়েছে। কিন্তু আজো এর দায় কার তা বের করা হয়নি। কিন্তু ঠিকাদারকে অতিরিক্ত টাকা ঠিকই দেয়া হয়েছে। কমিশন বলছে, এই রেমিডায়াল কাজ করার আগে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। কাজটি কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে করা হয়েছে কি না তা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পিইসি সভায় জানানোর জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু পিইসি পরবর্তী সভায় সেটা পরিষ্কার করা হয়নি। সূত্র জানায়, অনুমোদিত ও নির্ধারিত ব্যয়ে কোনো প্রকল্পই যথাসময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অগমেন্টেশন অব গ্যাস প্রোডাকশন আন্ডার ফার্স্টট্র্যাক প্রোগ্রাম প্রকল্পের পর্যালোচনায় এসব বেরিয়ে এসেছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকল্পের ব্যয় দ্বিতীয় দফায় ৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা প্রথম সংশোধনীর চেয়ে ৬.২৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ২০১০ সালে মহাজোট সরকারের আমলে এই প্রকল্পটি ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক তিতাস গ্যান ফিল্ডে মূল্যায়নসহ চারটি নতুন উন্নয়ন কূপ (১৯.২০.২১ ও ২২) খননের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কূপ চারটি থেকে প্রাপ্ত গ্যাস প্রক্রিয়ার জন্য দু’টি নতুন প্রসেস প্লান্ট স্থাপনের প্রস্তাবও করা হয়। এ ছাড়া রশীদপুর গ্যাসফিল্ডের ৫ নম্বর কূপটি ওয়ার্ক ওভার এবং রশীদপুর ফিল্ডে একটি কূপ (৮ নম্বর) খননের প্রস্তাব দেয়া হয়। আর এ উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি নেয়া হয়। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনকালে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হবে। কিন্তু এরই মাঝে দেড় বছরের মাথায় প্রথম দফায়ই ৪৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ব্যয় এক হাজার ২২৪ কোটি ২০ লাখ টাকা করা হয়। রশীদপুর গ্যাস ফিল্ডের ৫ নম্বর কূপে লগিং রানের ফলাফলে ওয়ার্ক ওভারের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত না হওয়ায় ওই কূপের ওয়ার্ক ওভারের কার্যক্রম সংশোধিত ডিপিপিতে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ব্যয় কমেনি। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রকল্প খাতে ব্যয় কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যার কারণে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে অযাচিত ব্যয় প্রতি বছরই বাড়ছে বলে কমিশন মনে করছে। প্রকল্প শেষ করার জন্য যে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হচ্ছে বিধি অনুযায়ী চলমান প্রকল্পের জন্য থোক বরাদ্দ থেকে অর্থায়ন করা করা যায় না বলে কার্যক্রম বিভাগ থেকে জানা গেছে।
No comments:
Post a Comment