Thursday, December 11, 2014

সিআইএর ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার হন আবু জুবাইদা:নয়াদিগন্ত

সিআইএর বর্বর ও পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার অসংখ্য মানুষের একজন হলেন সৌদি নাগরিক আবু জুবাইদা। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা সিআইএর (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) ভাষায়, তিনি আলকায়েদার সাবেক অপারেশন পরিকল্পনাকারী ও সন্ত্রাসীদের জোগানদাতা। ২০০১ সালের ১১ নভেম্বর  টুইন টাওয়ারে হামলার পর পাকিস্তান থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর  গোপনে নেয়া হয় থাইল্যান্ডে।   আবু জুবাইদাকে এমন একটি সেলে রাখা হয়,
যেখানে ছিল না স্বাভাবিকভাবে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা। ছিল না কোনো জানালাও। তবে চারটি বাতি ছিল। সাথে একটি এয়ারকন্ডিশনার। সেলটিতে দু’টি চেয়ার ছিল। ৪৭ দিন অত্যন্ত গোপনীয় অবস্থায় রাখার পর ২০০২ সালের ৪ থেকে ২৩ আগস্ট তাকে ওই সেলে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হয়। এই সময়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো তাকে।   আবু জুবাইদাহর সেলে গোয়েন্দারা প্রবেশের পরই তার হাত-পা শেকল দিয়ে বেঁধে ফেলতেন। মুখমণ্ডল  ঢেকে দেয়া হতো। পরনের তোয়ালে খুলে নিয়ে পুরোপুরি নগ্ন করে রাখা হতো আবু জুবাইদাকে।  গোয়েন্দারা সার্বণিক এমন আচরণ করতেন, যেন তিনি ঘুমাতে না পারেন। তার হাত পেছন দিয়ে বেঁধে  মেঝেতে রাখা একটি বক্সের ওপর শোয়ানো হতো। ঠিক মৃতদের শুইয়ে রাখা কফিনের মতো। এরপর পাত্রে রাখা পানির মধ্যে চুবানো হতো তার মুখমণ্ডল।   প্রথমবার আবু জুবাইদাহকে পানিতে চুবানোর পর তার কাশি, বমি ও খিঁচুনি দেখা দেয়। এ অবস্থা দেখে  গোয়েন্দারা সম্ভবত বেশ উৎফুল্ল হয়েছিলেন! এরপর আরো দ্রুতগতিতে বেশ কয়েকবার তার মুখমণ্ডল পানিতে চুবানো হয়।   শুধু তাই নয়, তথ্য নেয়ার জন্য নিয়মিত চুল ধরে টানা ও চড় মারা হতো তাকে।   শুধু আবু জুবাইদাই নন, সিআইএর হাতে এমন নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছেন অনেক বন্দী।  প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের এই গোয়েন্দা সংস্থাটি ১১৯ বন্দীর ওপর এ ধরনের নির্যাতন চালানোর কথা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে অন্তত ২৬ বন্দীকে ভুলে আটক করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে তারা।   সন্দেহভাজন ওই বন্দীদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ধারে অনেককে টানা ১৮০ ঘণ্টাও ঘুমহীন রাখা হয়েছে। এ সময় তাদের দাঁড় করিয়ে ও ব্যথাযুক্ত অবস্থায় রাখা হয়। এ ছাড়া পায়ুপথ দিয়ে পানি ঢুকানো, মৃত্যুর হুমকি, পানিতে চুবানো, মারধর, নগ্ন করে রাখাÑ এ সব তো ছিল নিয়মিত ঘটনা।এতদিন অবশ্য এই নির্মম নির্যাতনের কাহিনী স্বীকার করেনি সিআইএ। গত মঙ্গলবার সিনেটের প্রকাশ করা প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্টে এ ভয়ানক তথ্য উঠে এসেছে। প্রকাশিত রিপোর্টটি ছয় হাজার ২০০ পৃষ্ঠার মূল  রিপোর্টের সারাংশ। প্রায় ৬৩ লাখ পৃষ্ঠার নথিপত্র ঘেটে  এটি তৈরি করা হয়েছে।   ডেমোক্র্যাটদের উদ্যোগে রিপোর্টটি প্রকাশের ফলে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সংস্থাটির বর্বরতার সমালোচনা করেছে।  দেশটির রাজনৈতিক নেতারাও এর কঠোর সমালোচনা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘এ আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মূল্যবোধের সাথে মানানসই নয়’।   বিভিন্ন সমালোচনা সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে সিআইএ। সংস্থাটির সাবেক আইনজীবী জন রিজ্জো বলেছেন, ‘আমি মনে করি না এ ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় ছিল’।     

No comments:

Post a Comment