Friday, December 12, 2014

এসএসসি ফরম পূরণে বেশি অর্থ আদায়, শোকজ:কালের কন্ঠ

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় আদায় করা বাড়তি অর্থ ফেরত দিতে ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাত দিনের সময় দিয়েছিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত ৩০ নভেম্
বর এ নির্দেশ দিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছে কেবল পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অর্থ ফেরত না দেওয়ায় বাকি ২১ প্রতিষ্ঠানকে গত বুধবার কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বোর্ড। এর মধ্যে সরকারি স্কুল এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত একাধিক স্কুলও রয়েছে। শোকজের সন্তোষজনক জবাব না পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানের এমপিও স্থগিত করাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বোর্ড। এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। এবার বিজ্ঞান বিভাগে ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বোর্ড ফি ধার্য করেছে এক হাজার ৩৮৫ টাকা। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ফি এক হাজার ২৯৫ টাকা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুলগুলো বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করেছে। তারা পাঁচ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে।  শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা আদায় করায় ৩০ নভেম্বর ২৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বোর্ড। সেখানে বলা হয়েছিল, এই ২৬টি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে হাইকোর্টের রুলের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিলারা হাফিজের সই করা শোকজের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় নেওয়া বাড়তি অর্থ যাঁরা ফেরত দেননি তাঁদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হলো। শোকজের অনুলিপি শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে- জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. দিলারা হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বোর্ডের কাছে যেটুকু ক্ষমতা আছে তার সবটা প্রয়োগের চেষ্টা করব। প্রয়োজনে ওই সব প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিতসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা আশা করব কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানগুলো আদায় করা অতিরিক্ত টাকা অভিভাবকদের ফেরত দিবে।’ তবে বোর্ড যে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শোকজের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে, তারাও অভিভাবকদের কাছে টাকা ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা না দিয়ে তারা অভিভাবকদের হাত করেছে, যাতে তাঁরা ঢাকা বোর্ডের কাছে কোনো অভিযোগ না করেন। ২৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজও আছে। ওই স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক গত মঙ্গলবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন, বোর্ডের নির্দেশের পরও তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, বোর্ডের নির্দেশকে গ্রাহ্য করে না রাজধানীর নামিদামি বেসরকারি স্কুলগুলো। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারে বোর্ড। তবে তা স্থগিত করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের খুব বেশি কিছু যায়-আসে না। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শাস্তির পরিমাণ খুবই কম বলে স্কুলগুলো বোর্ডের কোনো নির্দেশ মানতে চায় না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা সরকারের কাছ থেকে বেতন পান ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর স্কুলের নিজস্ব আয় থেকে তাঁরা বেতন পান ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। এর বাইরে গাড়ি, স্টাফ, কোয়ার্টারসহ আছে নানা সুবিধা। অনেক স্কুলে যত দিন সরকার এমপিও স্থগিত রাখে তত দিন সরকারের দেওয়া বেতনের সমান অর্থ স্কুল থেকেই দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির কথামতোই বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা। এর আগে নানা অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুঞ্জু আরা বেগম, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম ও মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনের এমপিও স্থগিত করেছিল মাউশি। তবে বোর্ডের সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ লক্ষ করা যায়নি। কিছুদিন পর আবার ওই শিক্ষকদের এমপিও চালু করে মাউশি। শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল; ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর বাঙলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ, মোহাম্মদপুর; ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ, মিরপুর; রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ; রায়হান কলেজ, লালবাগ; উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আহমেদ বাওয়ানী একাডেমী, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আলিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর; আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর; মিরপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল, আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নৈয়ারবাড়ী বুহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কোটালীপাড়া। বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বুধবার কথা হয় উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালেমা বেগমের সঙ্গে। তখনো শোকজের চিঠি স্কুলে পৌঁছায়নি। সালেমা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কি কোনো নির্দেশ দেওয়া যায়? একটি প্রতিষ্ঠান যখন অভিভাবকদের টাকা ফেরত দেবে তখন প্রতিষ্ঠানের কি মেরুদণ্ড থাকবে? বাচ্চারা কি আর শিক্ষকদের কথা শুনবে? আমরা এখনো শোকজ লেটার পাইনি। পাওয়ার পর গভর্নিং বডির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

No comments:

Post a Comment