Monday, January 26, 2015

বড় অঙ্কের ঋণখেলাপিদের দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়:নয়াদিগন্ত

ঋণ পুনর্গঠনের নামে বড় অঙ্কের ঋণখেলাপিদের বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে। এছাড়ের আওতায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি অঙ্কের ঋণকে ১৫ বছর মেয়াদে পুনর্গঠন করা যাবে। ঋণের সুদের হার, কিস্তি পরিশোধ, ঋণ শোধের মেয়াদ পুনর্নির্ধারন করা যাবে। পুনর্গঠনের এক বছর পর থেকে তিন মাস পরপর কিস্তি শোধ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি ঋণও পুনর্গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নীতিমালার খ
সড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের (এসএমটি) বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদে উত্থাপন করা হচ্ছে। পর্ষদ অনুমোদন করলে পরিপালন করতে ব্যাংকগুলোর জন্য সার্কুলার জারি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচলিত নীতিমালা উপেক্ষা করে কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ বিশেষ বিবেচনায় বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নেয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়ায় এখন যারা বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি রয়েছেন তাদের সবার জন্যই এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ জন্যই ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুনর্গঠন নীতিমালায় বড় অঙ্কের ঋণের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এর নিচে অঙ্কের ঋণ এ নীতিমালার আওতায় সুযোগ রাখা হয়নি। ১৫ বছরের জন্য এসব ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে। এই নীতিমালার আওতায় বিশেষ সুযোগ নিয়ে নিয়মিত ঋণ শোধ করতে না পারলে প্রচলিত আইনি কাঠামো অনুসরণ করে দেউলিয়া আদালতে মামলা করার বিধান রাখা হয়েছে। প্রথমে ঋণ মঞ্জুরি হওয়ার সময় সুদের হার যা নির্ধারণ করা হয়েছিল পুনর্গঠনের সময় তা পরিবর্তন করা যাবে। একই সাথে ঋণের কিস্তি, ঋণশোধের মেয়াদও পুনর্নির্ধারণ করা যাবে। পুনর্গঠনের নীতিমালার আওতায় শর্তসাপেে স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণও স্বল্পমেয়াদে পুনর্গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে ঋণ পুনর্গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের বিধান রাখা হয়েছে। প্রথমে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পর্ষদ অনুমোদন করার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো হবে। বিচার বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব চাপ কতটুকু সামলাতে পারবেÑ সেটাই দেখার বিষয়।  বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন হলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যেতে পারে। কেননা প্রচলিত নীতিমালায় ঋণখেলাপিরা ব্যাংক থেকে নতুন করে কোনো ঋণ নিতে পারেন না। কিন্তু এ নীতিমালার আওতায় মন্দ ঋণ আবার নিয়মিত হয়ে যাবে। আর নিয়মিত হলেই খেলাপিরা আবার ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন। এতে বড় বড় খেলাপির কাছে ব্যাংকের আরো ঋণ আটকে যাবে।  বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খসড়া এ নীতিমালায় অনেক ফাঁকফোকর আছে। প্রচলিত নীতিমালায় ওই নীতিমালার আওতায় একবারই কেবল ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে। পুনর্গঠনের পর কোনো কারণে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঋণ আদায়ে দেউলিয়া আদালতে মামলা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে। প্রচলিত নিয়মে টাকা আদায়ের জন্য প্রথমে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে হয়। ওই মামলা নিষ্পত্তি হলে এতে ব্যাংকের পে রায় এলে তারপরে দেউলিয়া আদালতে মামলা করা যাবে। তবে ব্যাংকারেরা ইচ্ছে করলে গ্রাহককে টাকা পরিশোধের নোটিশ দিয়ে সরাসরিও দেউলিয়া আদালতে মামলা করতে পারবেন। এই েেত্র গ্রাহকের রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর নির্ভর করবে ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াটি। এই নীতিমালার আওতায় সুবিধাভোগী গ্রাহক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কত সময় লাগবে সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার দায়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ব্যাংকগুলোর নেই বলে মনে করেন অনেকে।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই নীতিমালার খসড়া ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে গভর্নরের নেতৃত্বে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম (এসএমটি)। দুই দফায় নীতিমালাটি উপস্থাপন করার পর এসএমটি গত বুধবার অনুমোদন করেছেন বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ায়ী মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে।

No comments:

Post a Comment