Tuesday, January 20, 2015

জনবিচ্ছিন্ন বলেই সরকার গুলির নির্দেশ দিচ্ছে : ড. কামাল:নয়াদিগন্ত

বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়ার মধ্য দিয়ে পুলিশকে একটি অসম্ভব অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। পুলিশকে অসাংবিধানিক নির্দেশ দিলেও সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়। তিনি বলেন, এই সরকারকে এটা করতে দেয়া হবে না। সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন বলেই এ ধরনের নির্দেশ দিচ্ছে। গতকাল জাতীয় প্রেস কাবের সামনে সিপিবি-বাসদ ও ঐক্য প্রক্রিয়ার যুগপৎ মানববন্ধনে ড. কামাল হোসেন এ কথা
বলেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণ সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে মুক্তি চায়। দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ থেকে মুক্তি চায়। কথায় কথায় বন্দী হওয়া থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন হবে না বলে সরকারের নেতাদের বক্তব্য সংবিধানপরিপন্থী। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে এমন বক্তব্য অসাড়। সরকারের লোকেরা রাষ্ট্রপতি শাসনামলের মতো কথা বলছেন। ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, গুলি করার মতো নির্দেশ দেয়ার কথা যারা বলছেন তারা সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। তেমনি যারা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করছেন তারাও সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। তিনি বলেন, ভুলে গেলে চলবে না জনগণ ক্ষমতার মালিক। আর এ জন্য আমরা মালিক হয়ে রাস্তায় নেমেছি এসব প্রতিবাদের জন্য। সংবিধান রক্ষার জন্য। তিনি বলেন, জনগণ এখন কার্যকর গণতন্ত্র চাচ্ছে। ড. কামাল হোসেন মানববন্ধনে অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, তাকে নিয়ম ও সংবিধান রক্ষায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে হচ্ছে। কিন্তু এখন তাদের পক্ষ থেকে এটা অস্বীকার করা হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে একটি জাতীয় সংলাপ ডাকার জন্য সরকারের কাছ আহ্বান জানান। সভা-সমাবেশসহ গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে গণফোরাম, সিপিবি, বাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এবং নাগরিক ঐক্যসহ সমমনা দলগুলোর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে যুগপৎভাবে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল পোকায় খাওয়া। এটা কোনো স্বাভাবিক নির্বাচন ছিল না। প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন, এটা নিয়ম রার নির্বাচন। কিন্তু এখন তাদের বক্তব্য পাল্টে গেছে। সেলিম বলেন, দেশের মানুষ এদের থেকে মুক্তি চায়। তিনি অবিলম্বে সভা-সমাবেশ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানান। পাশাপশি বিএনপিকেও সভা-সমাবেশ করতে সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, বিজিবি প্রধান দেশের ভেতরে গুলি চালালে সীমান্ত রা করবে কে? তিনি বলেন, এ সরকার ভোট ডাকাতি করে মতায় এসেছে। এদের দেশ চালানোর অধিকার নাই। এ ধরনের নির্দেশ দেয়ারও তাদের অধিকার নেই। তিনি দেশে রাজনৈতিক সব ধরনের সঙ্কট রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার আহ্বান জানান। বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, তাদের কাছে দেশের মানুষের স্বার্থ ও গণতন্ত্র কোনোটাই নিরাপদ নয়। এদের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার জন্য বাম-গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল উদারনৈতিক রাজনৈতিক শক্তি ও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নিরাপত্তার নামে যে ভণ্ডামি করা হচ্ছে তা বন্ধ করা হোক। তিনি একই সাথে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ বন্ধ করারও আহ্বান জানান। তিনি পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, কোনো দলের নয়। বে-আইনিভাবে মানুষ হত্যা করার অধিকার কারো নেই। তিনি সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর অন্যথা হলে মানুষ আপনার সরকারকেও এক টাকা, দুই টাকার খুচরা নোটের মতো বাতিল করে দেবে। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাফর আহমদ, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো: মনসুর আহমদ, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাসসহ কয়েক শ’ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment