Wednesday, January 14, 2015

স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির ব্যয় বেশি, সরকারের কম:প্রথম অালো

স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বছর বছর বাড়ছে। অন্যদিকে এই খাতে সরকারের ব্যয়ের অংশ কমে যাচ্ছে। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যও আছে। ঢাকা বিভাগে মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ‘বাংলাদেশ জাতীয় স্বাস্থ্য হিসাব ২০০৭-২০১২’-তে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সরকারের সর্বশেষ এই হিসাবে বলা হয়
েছে, দেশে বছরে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ২ হাজার ১৬৭ টাকা (২৭ মার্কিন ডলার)। ২০০৭ সালে মাথাপিছু ব্যয় ছিল ১ হাজার ৫৫৮ টাকা (১৬ মার্কিন ডলার) এবং ১৯৯৭ সালে ছিল ৮২৬ টাকা (৯ মার্কিন ডলার)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘হেলথ ইকোনমিকস ইউনিট’ এই হিসাব তৈরি করেছে। এই হিসাব তৈরিতে সরকারকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রকেফেলার ফাউন্ডেশন, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জার্মানির প্রতিষ্ঠান জিআইজেড। আজ বুধবার এই হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। এর আগে ২০০৭ সালে এই হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল। এই হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয় হয়েছিল ৩ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তির অংশ ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। চাকরিদাতা, বিমা প্রতিষ্ঠান ও অন্যরা ব্যয় করে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। দাতা সংস্থা ও এনজিওদের অংশ ছিল ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর সরকার ব্যয় করে ২৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। হিসাবে বলা হচ্ছে, শতাংশের হিসাবে সরকারের অংশ কমছে। ১৯৯৭ সালে সরকার ব্যয় করেছিল ৩৭ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাথাপিছু ন্যূনতম ব্যয় বছরে ৪০ মার্কিন ডলার হওয়া দরকার। সর্বশেষ হিসাব বলছে, ন্যূনতম ব্যয়ের চেয়েও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় ২৭ মার্কিন ডলার। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ২৭ ডলারের বড় অংশ (৬৩ শতাংশ) খরচ করে ব্যক্তি; সরকার করে অনেক কম (২৩ শতাংশ)। সরকারের অংশ দিন দিন কমে যাওয়া দুঃখজনক। কারণ, সাধারণ মানুষ সরকারের ওপরই আস্থা রাখে, সরকারের সেবা বেশি নেয়। সরকারের অংশ কমে যাওয়ার অর্থ সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। কোথায় কত ব্যয়: স্বাস্থ্য ব্যয়ের বড় অংশ চলে যায় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেবা কিনতে। ২০১২ সালে স্বাস্থ্য খাতের মোট ব্যয়ের ৪১ শতাংশ গিয়েছিল এই খাতে। এরপর বেশি ব্যয় হয় হাসপাতালে (৩০ শতাংশ) এবং হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও পরিবার পরিকল্পনা সেবায় (১৫ শতাংশ)। একটি বড় অংশ ব্যয় হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য (৬ শতাংশ)। প্রশাসন (৪ শতাংশ) ও অন্যান্য খাতে (২ শতাংশ) ব্যয় হয় ৬ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য কর্মকাণ্ডে ব্যয় হয় মাত্র ২ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন নিয়ে গবেষণা করছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. জাহাঙ্গীর খান। জনস্বাস্থ্য কর্মকাণ্ডে ২ শতাংশ ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য খাতের মূল বিষয় রোগ প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া। এ দেশে জনস্বাস্থ্য খাতে কার্মকাণ্ড অত্যন্ত দুর্বল, চোখেই পড়ে না। এই পরিস্থিতিতে এই খাতে ২ শতাংশ ব্যয় অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধির (ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ইত্যাদি) প্রকোপ বাড়ছে। এসব ব্যাধির চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত বেশি। এগুলোর প্রকোপ কমাতে মানুষকে সচেতন করা জরুরি। তাই সরকারের উচিত জনস্বাস্থ্য কর্মকাণ্ডে ব্যয় ও বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো। হিসাবে বলা হচ্ছে, হাসপাতালে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার (১৯৯৭ সালে ছিল মোট ব্যয়ের ২৩ শতাংশ) অন্যতম কারণ ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি। অ্যাপোলো, ইউনাইটেড ও স্কয়ারের মতো হাসপাতাল যুক্ত হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। তা ছাড়া মহানগরগুলোতে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনও হয়েছে। মহানগর ও বড় বড় শহরে দক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালে নিজেদের চেম্বারে রোগী দেখেন, ওষুধের দোকানে রোগী দেখা আগের চেয়ে কমেছে। ব্যয়ে বৈষম্য: স্বাস্থ্য খাতের মোট ব্যয়ের ৪১ শতাংশই ব্যয় হয় ঢাকা বিভাগে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে, ১৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম ব্যয় হয় সিলেট বিভাগে, ৪ শতাংশ। তার চেয়ে একটু বেশি ব্যয় হয় বরিশাল বিভাগে, ৫ শতাংশ। খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ব্যয় হয় যথাক্রমে ১২, ১১ ও ৯ শতাংশ। অন্য বিভাগের চেয়ে ঢাকা বিভাগে জনসংখ্যা বেশি বলে ব্যয়ও বেশি, বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। এই বিভাগে বছরে মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় ২ হাজার ৭২২ টাকা। জাতীয়ভাবে মাথাপিছু গড় ব্যয়ের (২ হাজার ১৬৭ টাকা) চেয়ে ৫৫৫ টাকা বেশি। অন্যদিকে মাথাপিছু সবচেয়ে কম ব্যয় হয় সিলেট বিভাগে, ১ হাজার ৩৭৯ টাকা। জাতীয়ভাবে মাথাপিছু গড় ব্যয়ের চেয়ে ৭৮৮ টাকা কম।

No comments:

Post a Comment