Tuesday, January 13, 2015

স্পর্শকাতর ২২ জেলায় ৫৯ প্লাটুন বিজিবি:যুগান্তর

দেশের স্পর্শকাতর ২২ জেলায় অতিরিক্ত বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্য মোতায়েন শুরু হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ কর্মসূচির সহিংসতা রোধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে ৫৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলায় অতিরিক্ত বিজিবি পাঠানো হয়েছে।
erve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'> এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের তিন ডজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে দুই শতাধিক নেতাকে গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জোটের এসব নেতাকে গ্রেফতারে তালিকা হাতে মাঠে নেমেছে। গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এসব নেতা পলাতক রয়েছেন। চলমান আন্দোলনে সারা দেশে বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এসব নেতা ইতিমধ্যেই আসামি হয়েছেন। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে চলছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলারও প্রস্তুতি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীসহ স্পর্শকাতর জেলাগুলোতে বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি মোতায়েন করা হচ্ছে র‌্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য। অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও এসব জেলায় সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ রাখতেও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান ছাড়াও বাড়ানো হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে টেলিফোনে বলেন, ‘অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত সাধারণ মানুষের ওপর বোমা মারছে, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করছে। এদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা মামলার আসামি তাদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাবে এটাই স্বাভাবিক।’ অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। আমাদের পুলিশের সংখ্যা কম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে। এটি উদ্বেগজনক কিছু নয়।’ সূত্র জানায়, গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ-সহিংসতায় সারা দেশে সোমবার পর্যন্ত ১২ জন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে তিন শতাধিক। মামলায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের প্রায় অর্ধশত কেন্দ্রীয় নেতা আসামি হয়েছেন। এর বাইরে মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয়ভাবে তালিকা তৈরি করে এসব আসামিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেয়া হয়। ওই তালিকার মধ্যে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সহিংসতার মামলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সামসুজ্জামান দুদু, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। এ ছাড়া ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতারে তাদের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে গ্রেফতারের তালিকায় রয়েছেন তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর নাছির উদ্দিন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জয়নুল আবদিন ফারুক, নাদিম মোস্তফা, ফজলুল হক মিলন, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও জাগপার প্রধান শফিউল আলম প্রধানসহ জোটের অন্তত তিন ডজন নেতা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের চলমান আন্দোলন রুখতে ঢাকাসহ স্পর্শকাতর ২২ জেলায় ৫৯ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ডিএমপি চেয়েছে ১০ প্লাটুন, ১৫টি জেলায় চেয়েছে ৪৯ প্লাটুন। বাকি ছয়টি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি সদস্য চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ স্পর্শকাতর জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে : ঢাকা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েনের জন্য ‘চাহিদাপত্র’ পাঠানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সোমবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, রাজশাহী শহরে দুই প্লাটুন বিজিবি আইনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করছে। আপাতত আর প্রয়োজন নেই। কারণ বিভাগীয় শহর হওয়ায় অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। বিজিবি সদস্যরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন। সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি চার প্লাটুন বিজিবি চেয়ে দুই প্লাটুন পেয়েছেন। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। কোনো ধরনের হামলার আশংকা করছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশংকা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নোয়াখালী জেলায় তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। আরও বিজিবি প্রয়োজন আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। প্রসঙ্গত, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী বাজারে অবরোধকারীরা কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে। পিকেটাররা পুলিশের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ৪২০ রাউন্ড গুলি চালায়। দু’জন নিহত হন। ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার যুগান্তরকে জানান, নোয়াখালীতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি ‘আন্ডার কন্ট্রোল’ জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি আর কোনো সমস্যা হবে না। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে ফেনী শহরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বহনকারী মাইক্রোবাসে তিন-চারটি ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। ওই হামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল কাদের মিয়া ও মো. রাশেদুর রহমান আহত হন। ঘটনা তদন্তে দু’সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, এর আগে ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় বেশিরভাগ হতাহতের ঘটনা ছিল ঢাকার বাইরে। এবার ঢাকায়ও সহিংসতা হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রাজধানীর নিরাপত্তায় বিভিন্ন থানা ও পুলিশ লাইনে কর্মরত প্রায় ৪০ হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশ। বিশেষ করে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের এক বৈঠকে আন্দোলনের নামে একটি চক্র রাজধানীতে নাশকতা চালাতে পারে এমন আশংকা প্রকাশের পর উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রাজধানীর সব থানার ওসিকে ডিএমপি সদর দফতর থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় নিজ নিজ থানা এলাকায় বিভিন্ন মেস ও বাসা-বাড়িতে নজরদারির পাশাপাশি খোঁজখবর নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। নিজ নিজ থানা এলাকায় কোন বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে কারা বসবাস করছেন সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নজরদারির আওতায় আনতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। ওই নির্দেশের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত সোর্স নিয়োগ করেছে নিজ নিজ থানা পুলিশ। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কাজ করছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।  

No comments:

Post a Comment