ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার জন্য সকাল থেকে কল্যাণপুরে অপেক্ষারত আফজাল হোসেন বললেন, 'ভাগ্য ভালো থাকলে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি মিলতাছে। ডাবল ভাড়া দিতে হইতাছে। এখন ডাবল ভাড়া দিয়াও
বাস পাইতাছি না।' কাউন্টারের কর্মকর্তা মো. জহির রায়হান বললেন, 'ভিআইপি কম্পানির গাড়ি বন্ধ হইয়া গেছে। নরমাল গাড়ি ডাবল টাকায় ভাড়া আইন্যা ডাবল দামে টিকিট বেচতে হইতাছে। দিনে চার পাঁচটা গাড়ি যায়। এক টিকিট বেচলে ২০-৫০ টাকা পাই। এখন আগের মতো যাত্রীও নাই।' ওভারব্রিজ পার হয়ে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে খানিকটা খোলা জায়গা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সেখানে দাঁড়িয়েই চোখে পড়ল সারি সারি কাউন্টারের দরজা বন্ধ। বহুতল ভবনটির নিচতলা ও দোতলায় দূরপাল্লার পরিবহন কম্পানিগুলোর কাউন্টার। এখান থেকে উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলার বাসের টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টিকিটপ্রার্থী-যাত্রীদের পদচারণে গমগম করে পুরো এলাকা। কিন্তু সেই চঞ্চলতা উবে গিয়ে এখন রাজ্যের নিস্তব্ধতা। নিচতলায় একটু ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, খালেক এন্টারপ্রাইজ, হক স্পেশালসহ চারটি পরিবহনের কমিশন কাউন্টার খোলা। সেখানে যেন গোপনে বিক্রি হচ্ছে বগুড়া যাওয়ার টিকিট। নিজেদের পরিবহন বন্ধ থাকায় নরমাল বাসের (বেশির ভাগ ফিটনেসহীন) টিকিট বিক্রি করছেন কাউন্টারের কর্মীরা। গাবতলী থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় পাভেল পরিবহনের একটি বাস বগুড়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে- মুঠোফোনে তা নিশ্চিত হয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। বগুড়া পর্যন্ত সকাল থেকে চারটি গেলেও সাপাহার, রংপুর বা চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে কোনো বাস যাচ্ছে না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে প্রথমে দেশ অস্থিতিশীল এবং এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। অবরোধকারীদের নাশকতার প্রধান লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে সড়ক ও সড়ক পরিবহন। দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাজধানীর সঙ্গে দেশের চারদিকে ৩৬১টি পথের মধ্যে ৫০টি পথে কিছু ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল করছে। তাতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উঠেও দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর মধ্যে আবার নাশকতার মুখে পড়ে প্রাণও দিতে হচ্ছে অনেককে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উদ্দেশে কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা খলিল এন্টারপ্রাইজের একটি বাস রংপুরের মিঠাপুকুরে নাশকতার মুখে পড়লে পাঁচ যাত্রীর প্রাণ যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খলিল এন্টারপ্রাইজের বাসটি ছিল ফিটনেসহীন। রংপুরে ওই নাশকতার পর থেকে ঢাকা-উত্তরের পথে বাস চলাচল আগের চেয়ে কমে গেছে। বিজিবি ও পুলিশ পাহারায় গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থায়ও ভরসা পাচ্ছে না যাত্রীরা। দিনের বেলা রাস্তায় না নামিয়ে দূরপাল্লার অভিজাত কয়েকটি বাস রাতের আঁধারে মহাসড়কে নামানো হচ্ছে। বাস চলাচলের এই অবস্থার কারণে হাজার হাজার মুসল্লি টঙ্গীতে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে পারেননি। বিদেশিরাও এ ক্ষেত্রে দুর্দশায় পড়ে। ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে ৪০০ রেলস্টেশন থেকে যাত্রীরা সময়মতো চলাচল করতে পারছে না। পূর্ব ও পশ্চিম রেলে নাশকতা ঘটেছে ৪০টি। নাশকতা এড়াতে মোটরট্রলি দিয়ে রেলপথ পরীক্ষার কারণে সময়সূচি ভেঙে পড়েছে। কুয়াশার কারণে নৌচলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বাস চলাচল করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়কে। ২৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কে এখন সরাসরি বাস মিলছে না বললেই চলে। বিজিবি ও পুলিশ পাহারায় কিছু গাড়ি চলাচল করছে। বেশির ভাগ যাত্রী ভেঙে ভেঙে গাড়ি বদল করে চলাচল করছেন। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে যাওয়ার জন্য এক সপ্তাহ ধরে ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন না রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ফেনী পর্যন্ত বাস যাচ্ছে। এরপর সেখান থেকে কুমিল্লা যাওয়া যাবে লোকাল বাসে। কুমিল্লা থেকে ফের লোকাল বাসে যাওয়া যাবে সীতাকুণ্ড বা মিরসরাই পর্যন্ত। এভাবেই আমার এক আত্মীয় জরুরি প্রয়োজনে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে গেছেন। ট্রনের টিকিটও পাচ্ছি না যে যাব। ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে আটটি আন্তনগর ট্রন চলাচল করে। এগুলো ১২-১৫ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ার কথা ছিল। সেটি গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ছাড়ে। একই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে কমলাপুরের উদ্দেশে ছাড়ার কথা থাকলেও তূর্ণা নিশীথা গতকাল দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে কমলাপুরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ত্যাগ করে। কমলাপুর রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন রাজধানী থেকে ৫৫টি ট্রেন চলাচল করে থাকে। এসব ট্রেনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে। অবস্থা এমন যে স্ট্যান্ডিং টিকিট দিয়ে যাত্রীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের আগামী তিন দিনের যেকোনো দিনের একটি টিকিট চেয়ে পাননি রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আরফান আলী। গাবতলী মাজার রোডের বিভিন্ন কাউন্টারে দিনাজপুরে বাস যাচ্ছে কি না খোঁজ নিতে আসা সমীরণ বিশ্বাস বললেন, শান্তি পরিবহনের কোনো বাস যাবে কি না কেউ বলতে পারছে না। ট্রেনের টিকিটও পাইনি। জমিজমা সংক্রান্ত কাজে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে যাওয়া আমার খুব জরুরি। ডবল ভাড়া : গতকাল কল্যাণপুরের নাহার ও সালমা পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে পাশের শ্যামলী পরিবহনের কর্মকর্তা মো. নাসির হোসেন একজন যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা বলছেন। নাসির বললেন, নিজেদের গাড়ি যাচ্ছে না। পরিচিত যাত্রীদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আসছি। ওই সময় তার মুখে বগুড়ার বাস ভাড়া ৬০০ টাকা দিতে হবে জেনে যাত্রী জয়নাল আবেদীন সরকার দ্রুত কাউন্টার ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে ঠোঁট উল্টে বললেন, বিপদে পড়ছি বইলা এত ভাড়া দিতে হইব। এত ভাড়া দিতে হবে কেন জানতে চাইলে নাসির অবস্থা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে বললেন, রাজশাহী পর্যন্ত শিশির পরিবহন, কুড়িগ্রাম পরিবহনসহ নরমাল গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না। তাই এ অবস্থা। শ্যামলী পরিবহনের মতো কম্পানির বাস রাস্তায় নামানো হচ্ছে না। রাজধানীর গাবতলী ছাড়াও সায়েদাবাদ, মহাখালী টার্মিনাল, কল্যাণপুর ছাড়াও বিভিন্ন কাউন্টার থেকে দূরের বাস চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। গাবতলী ও কল্যাণপুরে আজিমপুর, নিউ মার্কেট, সদরঘাট, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী থেকে নগরসেবার বাসগুলো ছিল বেশি। সে তুলনায় দূরের বাস চলাচল চোখে পড়েনি। বিভিন্ন বাস টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে রওনা হয়ে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীবাহী বাস রাজধানীতে আসে গতকাল ভোরে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সায়েদাবাদ, মহাখালী থেকে বাস চলাচল ছিল সীমিত। পুড়ছে যাত্রী, জ্বলছে গাড়ি : হরতাল-অবরোধ শুরুর আগের রাত থেকেই গাড়িতে আগুন জ্বালানোর কর্মসূচি শুরু হয়। যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে নিভিয়ে দেওয়া হয় যাত্রী ও চালকসহ পরিবহন শ্রমিকের প্রাণপ্রদীপ। এবার ঘুমন্ত গাড়িচালকদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে পোড়ানো হয়েছে এক হাজার ১০০টি গাড়ি। প্রাণহানি ঘটেছে ৫৬ পরিবহন শ্রমিক ও ২২২ যাত্রীর। এক দিন গাড়ি বন্ধ থাকলে দিনে ক্ষতি হচ্ছে ৩৬০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ৮৬ দিন গাড়ি বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ওই বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সবেচেয়ে বেশি গাড়ি পোড়ানো হয়েছিল। পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিটি বাস-মিনিবাস ও ট্রাকে দিনে গড়ে আট হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে। এ হিসাবে তিন লাখ বাস ও ট্রাকে প্রতিদিন গড়ে আয় হওয়ার কথা ২৪০ কোটি টাকা। বাস-মিনিবাস ও ট্রাক ছাড়া যাত্রী ও পণ্যবাহী চার লাখ পরিবহনের প্রতিটিতে দিনে গড় আয় তিন হাজার টাকা ধরে আয় হওয়ার কথা ১২০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সাত লাখ গাড়িতে প্রতিদিন আয় হওয়ার কথা ৩৬০ কোটি টাকা। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দিনে ৩৬০ কোটি টাকা করে ১৪ দিনে (৪ জানুয়ারি থেকে) আয় বাবদ প্রায় পাঁচ হাজার ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এক দিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে সড়ক খাতে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। গত ৪ জানুয়ারি থেকে গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, ৩৫০টির বেশি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের ১৪ জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে।' পণ্যবাহী গাড়ি অচল : গতকাল কল্যাণপুর থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালে যাওয়ার একটু আগে চোখ আটকে গেল রাস্তায় ঠায় দাঁড়ানো হলুদ রঙের পিকআপগুলোতে। ২০০ থেকে ২৫০টি পিকআপ যেন বহুদিন ধরে অচল। এসব গাড়ি চললে চালক ও শ্রমিকদের বেতন হয়। না হলে আয়ের আর কোনো উৎস নেই তাদের। পিকআপের সারির প্রথমটিতে গিয়ে তিনজনকে একটি পিকআপের সামনে (নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ন- ১৪৬৬৬৪) হেলান দিয়ে বসে কথা বলতে দেখা গেল। পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে পিকআপটির চালক মো. বাদশা বলে উঠলেন, 'দেনা কইরা চলতেছি। বাসার লোকজন শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িত পাঠাইয়া দিছি। বাসা ভাড়া দিবার পরতাছি না। দেনা করতে হইতাছে। চাইর দিন ধইরা গাড়ি চলতাছে না।' প্রতিটি পিকআপে স্বাভাবিক সময়ে মালিক ও শ্রমিকের আয় হয়ে থাকে আট থেকে ১০ হাজার টাকা। বাদশা জানান, জ্বালানি, চাঁদা, গ্যারেজ খরচ বাদ দিয়ে আয়ের ৭০ শতাংশ মালিককে দিতে হয়। ২৫ শতাংশ পান চালকরা। ট্রিপ কমে গেছে। আগের মতো এখন আর গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। যাত্রী কম বলে লোকসান : গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী থেকে বগুড়ার উদ্দেশে পাভেল পরিবহনের চারটি বাসসহ কয়েকটি রুটে উত্তর ও দক্ষিণের নরমাল বাস চলাচল করে। গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে সারি সারি ৩০০ কাউন্টার খোলা দেখতে পাওয়া গেল। তবে সেখানে টিকিটপ্রার্থী ছিল একেবারে কম। কারণ টার্মিনালে সারি সারি বাসের চাকা ছিল বন্ধ। হানিফ পরিবহনের ছয়টি কাউন্টারে কোনো ভিড় ছিল না। ১ নম্বর কাউন্টারে দায়িত্ব পালনরত সনজিৎ বাবু বলেন, 'বহু গাড়ির মধ্যে সুযোগ বুঝে গাড়ি ছাড়তে হয়। আজ রাতে বরিশাল যাবে ৪০ আসনের একটি বাস। ঈগল পরিবহনের ৩০০ বাসের মধ্যে সুযোগ বুঝে খুলনা, বরিশাল ও যশোরের পথে ছাড়ছে কয়েকটি।' ঈগল পরিবহনের একটি কাউন্টারের কর্মী মো. আলী বলেন, 'চার দিন আগে নড়াইলে আমাদের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে বাস গেলেও যাত্রী অর্ধেকও হয় না।' গাবতলী টার্মিনালে ঢাকা-খুলনা রুটের বাসচালক মো. মুকুল হোসেন (গাড়ি নম্বর-ঢাকা মেট্রো জ-যশোর-১১৩৩১) জানান, যাত্রী না হলে বাস চালিয়ে লাভ হয় না। কারণ খুলনায় একবার আসা-যাওয়া করলে ১৫ হাজার টাকার ডিজেল লাগে। তিনজন স্টাফের খরচ দিনে দুই হাজার ৫০০ টাকা। চালকের বেতন দিনে এক হাজার ২০০ টাকা। এখন বাস চালালে দুই দিনে ৫০০ টাকাও আয় হচ্ছে না। কল্যাণপুরে বরেন্দ্র এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, উত্তরের কোনো রুটে রাজধানী থেকে একবার আসা-যাওয়ায় ডিজেল লাগে ১৫ হাজার ৪০০ টাকার। ৪০ আসনের বাসের সব আসনে যাত্রী থাকলে ১৮ হাজার টাকা করে আসা-যাওয়ায় ৩৬ হাজার টাকা আয় হয়। তা থেকে জ্বালানির খরচ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল ১৮০০ টাকা, চাঁদা ১২০০ টাকা, স্টাফ খরচ দুই হাজার টাকা, কাউন্টার স্টাফের বেতন ৯০০ টাকা, অফিস খরচ ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে। নাশকতার কারণে যাত্রীও নেই, বাস চালিয়েও লাভ নেই। দিনে ছয় হাজার থেকে আট হাজার টাকা রোজগারের সম্ভাবনা ছিল। সেটা শেষ হয়ে গেছে। শ্রমিক পরিবারে হাহাকার : পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি বন্ধ থাকায় ৭৫ লাখ পরিবহন শ্রমিক ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছে। অবরোধ চলাকালে নাশকতায় প্রাণ গেছে ১৫ জন পরিবহন শ্রমিকের। এ অবস্থায় নাশকতা ঠেকাতে বাস মালিকদের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। অবরোধে এযাবৎ ৪০০ গাড়ি ভাঙচুর এবং ৭৫টি গাড়ি আগুনে পোড়ানো হয়েছে। বাসে রাখা হবে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র : গতকাল বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. ফারুক তালুকদার সোহেল স্বাক্ষরিত পরিবহন মালিকদের কাছে পাঠানো চিঠি থেকে জানা গেছে, নাশকতা এড়াতে প্রাথমিকভাবে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার সুপারিশ করে বলা হয়েছে, এ ধরনের যন্ত্র এক হাজার টাকায় পাওয়া যায়। এবিসি ও ই নামের কম্পানি থেকে এ ধরনের যন্ত্র কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বাস মালিকদের থানায় করা জিডির ফটোকপি, ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ছবি ও গাড়ি নিবন্ধন সনদের ফটোকপি সংগঠনের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মো. সালাহউদ্দিন বলেন, 'গাবতলী থেকে উত্তর ও দক্ষিণের ৪৮টি জেলায় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার গাড়ি চলাচল করে। আমরা গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করতে সভা করছি। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কেনার জন্য সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছি।'
No comments:
Post a Comment