ইন্দোনেশিয়ার জাভা সাগরে বিধ্বস্ত এয়ার এশিয়া বিমানের বড় দু’টি অংশ খুঁজে পেয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। গত সপ্তাহে ১৬২ আরোহী নিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে জাভা সাগরে তলিয়ে যায় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের প্রধান বামবাং সোয়েলিসতো গতকাল শনিবার বলেন, আমরা বিমানের বড় দু’টি অংশের সন্ধান পেয়েছি। আমি নিশ্চিত করে বলতে প
ারি, এটি বিধ্বস্ত এয়ার এশিয়ার অংশ। তিনি জানান, যেখানে বিমানের অংশ পাওয়া গেছে, সেখানে লাশ উদ্ধারের জন্য ডুবুরি পাঠানো হয়েছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে বোর্নিও দ্বীপের কাছাকাছি জাভা সাগরে ব্যাপক তল্লাশি চালানোর সময় সাগরের তলদেশে কোনো একটা বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। সোয়েলিসতো বলেন, বৃহত্তম বস্তু দু’টির আকার প্রায় ৩২ ফুট লম্বা ও ১৬ ফুটের মতো চওড়া হতে পারে। তিনি বলেন, বস্তুগুলোর সন্ধান পাওয়ার পর সেখানে অভিযান চলছে। সমুদ্রের তলদেশে বস্তু দু’টির প্রকৃত চিত্র শনাক্ত করতে রিমোর্ট নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ যন্ত্র ব্যবহারে বেগ পেতে হচ্ছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর এখনো দুর্ঘটনার কারণও জানা যায়নি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও সাগর উত্তাল থাকায় বেশ কয়েকবার উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখা হয়। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম হায়াতি লুৎফিয়া হামিদ। বিমানের বেশ কিছু ধ্বংসাবশেষ ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বিমানের ফিউসলেগ এখনো পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা জানান, বেশির ভাগ যাত্রীর লাশ এর ভেতরে থাকতে পারে। সিটের বেল্টে বাঁধা পাঁচ লাশ এ দিকে বিধ্বস্ত বিমানটির সিটের বেল্টে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে আরো পাঁচটি লাশ। দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পর গতকাল ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী সাগর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে। নৌবাহিনীর কামান্ডার কর্নেল ইয়া ইয়ান সোফিয়াল মেট্রো টিভিকে বলেন, উত্তাল সাগর থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে পাঁচটি লাশ সিটের বেল্টের সাথে বাঁধা ছিল। বিধ্বস্ত বিমানটি গত মঙ্গলবার সাগরতলে খুঁজে পাওয়া যায়। এখন এটি সোনার নামক জায়গার কাছাকাছি সম্পূর্ণ ১০০ ফুট গভীরে ডুবে আছে। নির্ধারিত রুটে ওড়েনি এয়ার এশিয়া! রয়টার্স জানায়, জাভা সাগরে বিধ্বস্ত এয়ার এশিয়ার বিমানটি নির্ধারিত রুটে চলেনি। এটাকেই এখন দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল জাভা সাগর থেকে নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিনে মোট ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। প্লেনের বিভিন্ন অংশ পাওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা। হারানো বিমানটির সন্ধানে ফ্রান্স এবং সিঙ্গাপুরের তদন্তদলও অংশ নিয়েছে। অনুসন্ধানকারী দলটি সমুদ্রতলে উড়োজাহাজটি ও ব্ল্যাক বক্সের (যাতে ফাইটের তথ্য থাকে) অবস্থান জানতে সাইড-স্ক্যান সোনার যন্ত্র ও পিঙ্গার লোকেটর ব্যবহার করছে তারা। সমুদ্রপৃষ্ঠের ২৫ থেকে ৩২ মিটার নিচে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিমান পরিবহনের মহাপরিচালক দিজোকো মুরাজাতমুদজো বলেন, ‘নির্ধারিত ফাইটসূচি লঙ্ঘন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে রুটে চলাচলের কথা ছিল তা দিয়ে চলাচল করেনি ফাইটটি। তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ দিকে এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেএ বারাতা বলেন, রোববার এয়ার এশিয়ার ফাইটটি সুরাবায়া-সিঙ্গাপুরের নির্দিষ্ট রুটি ও সূচি মেনে চলেনি। কিন্তু বিমানটি কিভাবে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়া উড়তে সম হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানান তিনি। এয়ার এশিয়া ইন্দোনেশিয়ার ফাইট কিউজেড ৮৫০১ গত রোববার ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। এতে পাইলট, ক্রু সদস্য এবং শিশুসহ ১৬২ জন যাত্রী ছিল।
No comments:
Post a Comment