Monday, January 19, 2015

চালের সরবরাহ কমেছে ঢাকায়:নয়াদিগন্ত

টানা অবরোধের কারণে ঢাকায় চালের সরবরাহ কমছে। প্রতিদিন পাঁচ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে প্রবেশ করছে মাত্র এক হাজার টনের মতো চাল। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে এবং উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে চাল আমদানি নিশ্চিত করা না গেলে ঢাকায় চালের সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও ঢাকায় এখনো পর্যন্ত চালের কোনো সঙ্কট নেই বলে নয়া দিগন্তের কাছে দাবি করেছেন খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো:
মইনুল হক। তিনি বলেন, সঙ্কট দেখা দিলে তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এক কোটি মানুষের জন্য দৈনিক পাঁচ হাজার টন চাল প্রয়োজন হয়। চাহিদার অর্ধেকই সরবরাহ করা হয় বাবু বাজারের প্রধান আড়ত থেকে। বাকি অর্ধেক চাল সরবরাহ করা হয় রাজধানী ও এর আশপাশের বিভিন্ন মোকাম থেকে। নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর প্রভৃতি চাল উদ্বৃত্ত জেলা থেকে পাইকাররা এসব চাল সংগ্রহ করেন। কিন্তু অবরোধের কারণে ট্রাক চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ঢাকায় চালের আমদানি কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। পাঁচ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টন চালও ঢাকায় প্রবেশ করছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আড়তদারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অন্তত ২০০টি চালভর্তি ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করে। কিন্তু দুই সপ্তাহের টানা অবরোধে প্রতিদিন গড়ে ৩০টির বেশি ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করছে না। আমদানি না থাকলেও এত দিন তারা গুদাম এবং আড়তে মজুদ থাকা চাল বিক্রি করেছেন। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় নিজেদের মজুদ কমছে বলেও জানান আড়তদারেরা। নওগাঁ ও দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের চাল কলগুলোয় প্রচুর পরিমাণ চাল মজুদ আছে জানিয়ে তারা বলেন, সরবরাহ না থাকায় অনেক চালকলে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর বাবু বাজারের পাইকারি চালের আড়তদার মেসার্স লক্ষ্মী ভাণ্ডারের মালিক নূর মোহাম্মদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, গত দুই সপ্তাহের টানা অবরোধে চাল সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণত মোকামগুলোয় যে পরিমাণ চাল মজুদ থাকে বর্তমানে তার চার ভাগের এক ভাগও নেই। তিনি বলেন, ট্রাকের মালিকেরা দ্বিগুণ ভাড়ায়ও গাড়ি ছাড়তে চান না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায়ও তারা ভরসা পাচ্ছেন না। ফলে আড়তদারদের চালের দাম এবং ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দেয়ার অঙ্গীকার করে ১২ হাজার টাকার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে চাল আনতে হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আড়তগুলোয় চাল সঙ্কটের আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে পুলিশ-বিজিবি পাহারায় প্রতিদিনই কিছু কিছু চাল আসছে। তবে চাহিদার তুলনায় এ সরবরাহ খুবই কম। বিশ্ব ইজতেমার কারণে গত দুই দিন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে না। ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া এখন ৩০ হাজার টাকা হয়েছে। বর্তমানে যেভাবে চলছে, দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে সময়মতো চাল পাওয়া না গেলে ব্যবসায়ীরা সঙ্কটে পড়বেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।  পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করা হলেও খুচরাপর্যায়ে দাম বেড়েছে আরো বেশি। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয় ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে। মিনিকেট ৫০ থেকে ৫২ টাকা, পারিজা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, নাজির শাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও বিআর আটাশ ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা কেজি দরে।  চাল মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: সারোয়ার খানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: মইনুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, অবরোধ সত্ত্বেও ঢাকায় চাল সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সে কারণে মজুদ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক আছে। মজুদের ক্ষেত্রে সঙ্কট বা কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি। ৫ শতাধিক মিল চাতাল বন্ধ : ২০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, টানা ১৩ দিনের অবরোধ-হরতালে ধান চালের ব্যবসায় মোকাম নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা সদরের বাণিজ্যনগরী চাঁচকৈড় মোকামসহ পাঁচ শতাধিক মিল চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়-বাণিজ্যের তি হয়েছে কমপে ১৫ কোটি টাকা। অবরোধ-হরতালে ধান চাল ব্যবসায়ীরা এক দিকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাল সরবরাহ করতে পারছেন না। অপর দিকে পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাইরের মোকাম থেকে ধান আমদানি করতে না পারায় সব মিল চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে অন্তত ২০ হাজার দিনমজুর-শ্রমিক কাজের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন।  অবরোধ-হরতালে প্রতিদিন এক থেকে সোয়া কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গুরুদাসপুর উপজেলা চাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি আলহাজ মো: সামছুল হক শেখ।  এ ছাড়াও অবরোধ-হরতালের কারণে দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের সঙ্কট এবং এলাকার উৎপাদিত মৎস্যসম্পদ ও শাকসবজিসহ কাঁচামাল শহরে পাঠাতে না পারায় আর্থিক তির শিকার হচ্ছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে স্থানীয় হাটবাজারে শাকসবজি তরিতরকারি বেশি আমদানি হওয়ায় ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন না কৃষকেরা। এ কারণে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে ক্রমেই অস্থিরতা, হতাশা ও আতঙ্ক বাড়ছে বলেও জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।

No comments:

Post a Comment