Thursday, January 22, 2015

ছয় দিনেই মূলধন কমল ১০ হাজার কোটি টাকা:যুগান্তর

দেশের শেয়ারবাজারে নীরব রক্তক্ষরণ চলছে। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আতংকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে। শেষ ছয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। আর বুধবার একদিনেই কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে ডিএসইর সূচক ১৮৬ পয়েন্ট কমেছে। একই অবস্থা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। রাজনৈতিক অস্থিরতার খবরে গণমাধ্
যমেও শেয়ারবাজারের এ দুঃসংবাদ চাপা পড়ে যাচ্ছে। সংকট উত্তরণের দাবিতে বুধবার বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে মিছিল করতে চাইলেও পুলিশের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের একটি সংগঠন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক কারণে বাজারে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আর পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শেয়ারবাজারের সংকট কাটবে না। ছয় দিনের বাজারচিত্র : ১৩ জানুয়ারি ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। বুধবার তা কমে ৩ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ছয় কার্যদিবসে ডিএসইর বাজারমূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বুধবার একদিনেই ৩ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এ ছাড়া ৬ কার্যদিবসে ডিএসইর মূল্যসূচক ৪ হাজার ৯৬৯ পয়েন্ট থেকে কমে ৪ হাজার ৭৮৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ডিএসইর সূচক ১৮৬ পয়েন্ট কমেছে। এ সময় বেশিরভাগ শেয়ারের দাম ছিল নিুমুখী। বিনিয়োগকারীদের স্মারকলিপি : বাজারের পরিস্থিতি উন্নয়নে বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের একটি সংগঠন। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য নামের এ সংগঠনটি ১০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা মোট দায়ের ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট সমন্বয় সময়সীমা ২০১৬ সালের জুন থেকে আরও বাড়ানো এবং কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের বোনাস শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে লকইন দেয়ার দাবি জানানো হয়। অর্থনীতিবিদদের অভিমত : জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতংক রয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা কেউ বলতে পারছে না। ফলে আতংকেই মানুষ শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গণমাধ্যমে শেয়ারবাজারের সংবাদ চাপা পড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বাজারের মূল সংকট রাজনৈতিক। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আর রাজনৈতিক অস্থিরতা না কাটলে বাজার ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বুধবারের বাজারচিত্র : ডিএসইতে বুধবার ৩০৯টি কোম্পানির ৮ কোটি ৬৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ২৮১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের, কমেছে ২৬৫টি এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর ব্রডসূচক আগের দিনের চেয়ে ৭৩ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৮৩ দশমিক ২১ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ২৭ দশমিক ৩০ কমে ১ হাজার ৭৭৪ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৩৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৩ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সিএসই : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বুধবার ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ১৯ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৩২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের, কমেছে ১৯৫টি এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক ২১৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৬৫৯ দশমিক ১৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সিএসই-৩০ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৩১ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৮৭১ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।  

No comments:

Post a Comment