টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে গেলে চোখে পড়বে বিশাল বাগান। বাগানে জলপাই, আম, লেবু, সুপারি, কাঁঠাল, আমলকী, পেঁপে, পেয়ারাসহ অন্তত ২২ জাতের ফলদগাছ রয়েছে। চার শ’ একর এলাকাজুড়ে এ বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা হাবিব উল্লাহ হাবিব। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বাগানটি তৈরি হয়েছে বেকার যুবকের বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবেও। উদ্যোক
্তা হাবিব জানান, বাবার উপদেশ ছিল মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতাল দেয়া অথবা গাছ রোপণ করা। তার উপদেশ পালন করতে নিজের অর্জিত টাকা দিয়ে শামলাপুরে আল হোসাইন হেলথ কেয়ার নামে একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু এলাকার কুচক্রী মহলের কারণে হাসপাতালটি টিকে রাখা সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি পরিবেশ আর বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম রক্ষায় বাগান তৈরির উদ্যোগ নেন। হাবিব আরো জানান, পাহাড়ে একসময় হাতি, বানর, শেয়াল, ভালুক, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী বাস করত। কিন্তু কাঠ পাচারকারীরা পাহাড়ের গাছ কেটে ন্যাড়া করে ফেলে। ফলে বন্যপ্রাণীরা অভয়াশ্রম হারায়। ফলে বহু প্রাণী মারা পড়ে। অসংখ্য হরিণ ধরে জবাই করে খেয়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এসব বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম ফিরে আনা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তিনি ন্যাড়া পাহাড়ে ফের বনায়নের উদ্যোগ নেন। সেই লক্ষ্যে ২০১১ সালে ২২ হাজার জলপাই গাছ রোপণ করেন। এরপর আরো বিভিন্ন ফলের গাছ রোপণ করা হয়। গত ডিসেম্বর মাসেও সাড়ে তিন হাজার সুপারি ও আড়াই হাজার লেবুগাছের চারা রোপণ করেন। সব মিলে প্রায় ৩০ হাজার গাছ রয়েছে বাগানে। চার বছরে তার কোটি টাকারও বেশি খরচ হয় বাগানে। হাবিব উল্লাহ হাবিব জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বেকারের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও তিনি চিন্তা করেছিলেন। তার বাগানে ১২ জন কর্মচারী কাজ করছেন। তারা দৈনিক বেতনে যা পান তা দিয়ে সংসার চালান। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে ৩০-৩৫ জন শ্রমিকও প্রয়োজন হয়। চার বছরে গড়ে ওঠা বাগান এখন পরিণত হয়েছে বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থলে। হাতি, হরিণ, বাঘ, ভাল্লুক, চিতাবাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আশ্রয় নিয়েছে ওই বাগানে। উদ্যোক্তা হাবিব আরো জানান, ২০১১ সালে রোপণকৃত আম, জলপাই ও আমলকী গাছে এত দিনে ফল আসার কথা ছিল। কিন্তু একটি অসাধু মহল ২০১৩ সালে তার জলপাই গাছগুলো কেটে ফেলে। ফলে তার অনেক টাকার ক্ষতি হয়। এ ছাড়া অর্থাভাবে তিনি ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত বাগানের পরিচর্যা করা গেলে গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠবে। পাশাপাশি প্রচুর ফল পাওয়া যাবে। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেছেন।
No comments:
Post a Comment