Thursday, January 22, 2015

সরকার আরও কঠোর:প্রথম অালো

আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু কৌশল নিচ্ছে সরকার। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক—দুভাবেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চায় সরকার। নাশকতাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার ক্ষমতাও দেওয়া হতে পারে। নাশকতা ঠেকাতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে গ্রামপুলিশ, দফাদার থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করা হবে। দেশের সব জেলা-উপজেলায় সন্ত্রাস
-নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিকে সক্রিয় করা হবে। বিভাগীয় কমিশনারদের এসব নির্দেশনা দিতে স্বরাষ্ট্রসচিব আজ তাঁদের সঙ্গে ভিডিও করফারেন্সে কথা বলবেন। গতকাল বুধবার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এ বৈঠকে দেশের সার্বিক অপরাধচিত্র পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হয়। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের কৌশল তুলে ধরেন। সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এমন মন্তব্য করার পাশাপাশি চোরাগোপ্তা হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সময় খালেদা জিয়াকে ‘খুনি’ বলে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এরপর পুরস্কার ঘোষণা, গ্রেপ্তার ও সরকারের নেওয়া নানা কৌশলে জনগণ সহজেই বুঝতে পারছে, সরকারের চেষ্টার ত্রুটি নেই। তিন ঘণ্টার এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মোটরসাইকেলে একজনের অধিক উঠতে পারবে না। তবে নারী বা ক্ষেত্রবিশেষে দুজন চড়তে পারবে। বৈঠকে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বলেন, বিকাশ হিসাবে সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন করা হচ্ছে, টাকা লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু বিকাশ হিসাব খোলার সময় সঠিক পরিচয়পত্র না দেওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে না, কারা এ টাকা লেনদেন করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এ বিষয়টি তদারক করার কথা বলা হয়। বিকাশ হিসাবদাতাদের ফোনে আড়িপাতা জোরদার করার কথা বলা হয়। বৈঠকে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সমালোচনা করা হয়। কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য প্রশ্ন করেন, খুব ভোরে যানবাহনে পেট্রলবোমা হামলা হলে তার ভিডিওচিত্র টিভি চ্যানেলগুলো কীভাবে পায়? কারা তাদের ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে নেয়? এ বিষয়গুলো খুঁজে দেখার জন্য বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে অনুরোধ করা হয়। একজন মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগের দিনের ভিডিও পরের দিন সন্ধ্যায় প্রচার করে বলা হয়, এইমাত্র পাওয়া খবর। কখনো কখনো মনে হয়, টিভি চ্যানেলগুলোই মনে হচ্ছে অবরোধ পালন করছে। বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে সারা দেশের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ৫ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিনে সারা দেশে ৭ হাজার ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ঢাকায়। পুলিশের হিসাবে এই ১৫ দিনে নিহত হয়েছে ২২ জন। আহতের সংখ্যা ২৩০। পুলিশ আহত হয়েছে ৮৭ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাংসদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকার সন্ত্রাসীদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। সহিংসতাকারী, গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী, হাতবোমা ও পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারীকে ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানা গেছে, গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পুরস্কারের মূল্যমান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা মনে করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শুধু চোরাগোপ্তা হামলার কারণে কিছুটা আতঙ্ক রয়েছে এবং অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী সারা দেশের ৩২ জেলায় ১২০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৮ হাজার ৩২৭ জন আনসার-ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ-বিজিবির বিশেষ পাহারায় বাস-ট্রাক চালানো হচ্ছে, রেললাইন পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার নিয়োগসহ নাশকতা মোকাবিলার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার। বৈঠকে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা প্রচলিত মুঠোফোন ছেড়ে টুইটার, ভাইবার, ই-মেইলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটসঅ্যাপ, মাইপিপলের সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে আমির হোসেন আমু বলেন, গত ১৫ দিনে সারা দেশে ৭ হাজার ১৫ জন বিএনপি-জামায়াত কর্মীকে নাশকতার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment