Tuesday, January 13, 2015

অপেক্ষা, শুধু অপেক্ষা!:প্রথম অালো

ট্রেন আসছে, প্ল্যাটফর্ম থেকে রেললাইন ঘেঁষে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অগণিত যাত্রী। না, এই ট্রেন তো নয়, অন্য ট্রেন। তাহলে? আজও কি ট্রেন আসবে না? মরিয়া হয়ে উঠছেন যাত্রীরা। কখনো মাইকিং হচ্ছে, কখনো হচ্ছে না। মাইকে বলা হচ্ছে, যাঁরা সময় বাড়াতে চান, তাঁরা কাউন্টারে যোগাযোগ করুন...। টিকিট রাত ১২টার পর ফেরত দেওয়া যাবে না...। চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথা বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ছেড়ে যাবে...(যদিও তিন ঘণ্টা পরও ছাড়েনি
)। তাই রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা, শুধু অপেক্ষা! কখন ট্রেন ছাড়বে নয়, কখন আসবে সেই অপেক্ষা। বেশির ভাগ ট্রেনেরই সময়সূচির বিপর্যয়। বিলম্ব ১৫ থেকে ২৪ ঘণ্টার বেশি। ঢাকা থেকে প্রতিদিন ২৬টি আন্তনগর ট্রেনসহ ৬২টি ট্রেন ছাড়ার কথা। হরতাল-অবরোধে গত কয়েক দিন সময়সূচির অস্বাভাবিক বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন অগণিত যাত্রী। শীতে সারা রাত জেগে কাটাচ্ছেন অনেক যাত্রী। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে তিনটা থেকে বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত এমন চিত্র পাওয়া গেল কমলাপুর স্টেশনে। ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বসে ছিলেন কেরানীগঞ্জের চাকরিজীবী আবুল কাশেম। জানালেন, আন্তনগর তূর্ণা নিশীথায় চট্টগ্রাম যেতে নির্ধারিত সময় ছিল রোববার রাত সাড়ে ১১টা। তিনি স্টেশনে আসেন রাত ১০টায়। এসে জানলেন, রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রামের মহানগর গোধূলী আসার কথা থাকলেও কোনো খবর নেই। সেই ট্রেনটিই তূর্ণা নিশীথা হয়ে চট্টগ্রামে যাবে। এই আসছে, এই আসছে করে করে সারা রাতেও এল না। সকাল-দুপুর পার হয়ে বিকেলেও এল না। এল গোধূলিবেলায়। পরে মুঠোফোনে আবুল কাশেমের কাছে জানা গেল, গতকাল সন্ধ্যা সাতটায়ও তূর্ণা নিশীথা ছাড়েনি। ইঞ্জিন নেই। সেখানে অপেক্ষা করছেন আবুল কাশেমের পরিবারের মতো অনেকেই, অগণিত মানুষ। আবুল কাশেম বললেন, জরুরি দরকার হলেও অবরোধের কারণে গত কয় দিন চট্টগ্রাম যেতে পারছিলেন না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রোববারের (১১ জানুয়ারি) তূর্ণা নিশীথার টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন। রোববার গভীর রাতে রেলওয়ের কয়েকজন বলেছিলেন, ‘বাসায় চলে যান, কাল সকালে আসেন।’ কিন্তু কেরানীগঞ্জে হরতাল। পরিবার নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। শীতের মধ্যে ২১ ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা প্ল্যাটফর্মের আসনে। আসন ছাড়লে দখল হয়ে যাবে। দিনাজপুরের ‘একতা’র যাত্রী আবদুল কাদের রোববার সকাল ১০টার ট্রেন পেয়েছেন গতকাল সকাল ১০টা ১০-এ। চট্টগ্রাম থেকে মহানগর সুবর্ণ সন্ধ্যা সাতটায়ও আসেনি। সিলেটের পারাবতের অপেক্ষায় আছেন ব্যাংক কর্মচারী বকুল। রাজশাহীর পদ্মা সকালে ছাড়েনি। আসেইনি। বিকেলেও পথের দিকে তাকিয়ে আছেন জামালপুরের বিপ্লব মজুমদার। দিনের অনেক সময় চলে গেছে শুধু পাউরুটি আর কলা খেয়ে। এ রকম একজন যাত্রী ফেনীর তৌহিদুর রহমান। প্রশ্ন করলেন, অবরোধ-হরতালে আর কত কষ্ট করতে হবে সাধারণ মানুষকে? বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কমলাপুর স্টেশনমাস্টারের কক্ষে অনেক যাত্রীর ভিড়। পারাবত কখন ছাড়বে? সুবর্ণ কি আজ আসবে? আজকের টিকিট দিয়ে কি কাল যাওয়া যাবে ভাই? প্রশ্নের পর প্রশ্ন। শীতের মধ্যেও ঘেমে যান স্টেশনমাস্টার নৃপেন্দ্র সাহা। নৃপেন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ভোগান্তি সহ্য করতে না পেরে অনেক যাত্রী টিকিট ফেরত দিয়ে পরদিনের টিকিট চাচ্ছেন। কিন্তু টিকিট ফেরত নিয়ে কী হবে? আগের দিনের ট্রেন এমনিতেই যাচ্ছে পরদিন। তার পরও যতটা সম্ভব টিকিটের গায়ে বাড়তি সময় যোগ করা হচ্ছে। তবে কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের কিছু ট্রেন খানিকটা সময় মেনে চলছে। স্টেশন ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানে ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলায় দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয় ঘটছে। বেশির ভাগ আন্তনগর ট্রেনের নির্ধারিত গতি ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার। কিন্তু চলতে হচ্ছে ৪০ কিলোমিটারের কম গতিতে।

No comments:

Post a Comment