Thursday, March 12, 2015

হরতালে সব চালু বিএনপি নেতাদের:কালের কন্ঠ

‘হরতালে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমাদের অফিস কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। পিকনিক, ভ্রমণ বা রিসোর্ট বুকিং নিচ্ছি। এই যে এখনো মিটিং করছি কাস্টমারের সঙ্গে। আমাদের রিসোর্ট ও পিকনিক স্পটও খোলা আছে। আছে বিশেষ প্যাকেজ ব্যবস্থা। যাতায়াতেও কোনো অসুবিধা নেই।’ গতকাল বুধবার হরতাল চলাকালে বিকেল সাড়ে ৩টায় যমুনা রিসোর্টের রিজার্ভেশন বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান এভা
বেই বলেন নিজেদের প্রতিষ্ঠান সচল থাকার কথা। রাজধানীর ব্যস্ততম কারওয়ান বাজার এলাকার বিনোদন বা প্রমোদ ভ্রমণের এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটির মালিক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শিল্পপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু। ধামরাইয়ের ইসলামপুরে ‘মুন্নু সিরামিকস’-এর বিশাল কারখানার মালিক বিএনপির সাবেক মন্ত্রী হারুন অর রশিদ খান মুন্নু। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হরতালে দিব্যি সচল রয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর আসাদ গেটে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, মিরপুর সড়ক ধরে গাবতলীর দিকে যাত্রী বোঝাই করে ছুটে যাচ্ছে ‘হানিফ’। হানিফ এন্টারপ্রাইজ বা হানিফ পরিবহনের এমন আরো একাধিক বাস চোখে পড়ে একই সড়কে। হানিফ পরিবহনের অন্যতম মালিক বিএনপি সমর্থিত সড়ক পরিবহন নেতা কফিল উদ্দিন। হানিফ পরিবহনের কেন্দ্রীয় অফিসের কর্মচারী মো. শাওন বললেন, ‘সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আমাদের পরিবহন সবগুলো রুটেই চলাচল করছে। কেবল রাতে বন্ধ থাকে।’ এভাবে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় টানা অবরোধ ও ঘন ঘন হরতাল ডাকলেও জোটের প্রধান শরিক বিএনপির নেতাদের হরতাল-অবরোধ পালনের কোনো বালাই নেই। তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, পরিবহন, দোকানপাট, অফিস-প্রতিষ্ঠান- সবই চালু রয়েছে। অথচ অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রলবোমা মেরে পৈশাচিকভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে পেটের দায়ে, জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নামা নিরীহ মানুষকে। পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে।  কথা বলার জন্য গতকাল বিএনপিপন্থী পরিবহন নেতা কফিল উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। হানিফ পরিবহনের রাজশাহীর ব্যবস্থাপক মঞ্জুর রহমান খোকন বলেন, ‘এখন প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গড়ে আমাদের ১৬ থেকে ১৮টি যাত্রীবাহী ঢাকাগামী বাস চলাচল করছে।’ গতকাল হরতালের মধ্যেই দুপুর ১টার দিকে ফার্মগেট এলাকা অতিক্রম করতে দেখা যায় পারটেক্স গ্রুপের একটি মাইক্রোবাস। গাড়ির ভেতরে কয়েকজন আরোহীও দেখা যায়। এ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি আবুল হাশেম। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার অন্যদিনের মতো গতকালও হরতালের মধ্যে আদালতে যাওয়া-আসা করেন ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়েই। আরো কয়েকজন বিএনপিপন্থী আইনজীবীকে একইভাবে গাড়িতে করেই হরতালের মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে আসতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার গত রাতে ‘আমি ১০ মিনিট পরে কথা বলছি’ বলেই মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু ১০ মিনিট পর থেকে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁর আর সাড়া মেলেনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন হরতাল-তামাশার দৌড়ে পিছিয়ে নেই তৃণমূলের নেতারাও। সাধারণ মানুষের মতো তাঁরাও নিজ দলের ডাকা হরতাল উপেক্ষা করে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা-বাণিজ্য। সিলেট মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রিপন বলেন, দুই মাস ধরে টানা অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বেহাল দশা। এ অবস্থায় দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় দোকান খোলা রাখতে হরতাল আহ্বানকারীদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সে আহ্বানে সাড়া পাওয়া যায়নি। অথচ বিএনপি নেতাদের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঠিকমতোই খোলা থাকছে। ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলায় গতকাল বুধবার বিএনপি নেতাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রতিদিনের মতো যথারীতি চালু দেখা গেছে। এর মধ্যে বিএনপি আমলের দুই মন্ত্রীর মালিকানাধীন কারখানাও রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ধামরাইয়ের ইসলামপুরে ‘মুন্নু সিরামিক’-এর বিশাল কারখানা চালু রয়েছে। প্রয়াত মুন্নু খানের মেয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। হরতালের মধ্যে কারখানা চালু বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল লতিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।’ এ ছাড়া ঢুলিভিটায় অবস্থিত ‘দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড’-এর মালিক বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান সিনহা। এ কারখানাটিও হরতালের মধ্যে চালু রয়েছে। এ ছাড়া আবদুল আউয়াল মিন্টুর মালিকানাধীন ‘কে অ্যান্ড কিউ সিএনজি ফিলিং স্টেশন’, কুষ্টিয়া বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকারের মালিকানাধীন ‘সরকার স্টিল মিল’ও চালু রয়েছে। ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিনের ‘কিষান অটোরাইস মিল’ ও ‘কিষান কোল্ড স্টোরেজ’-এর প্রধান ফটকে পুলিশ তালা দেওয়ার কিছুদিন পর আবার খুলে দেয়। এখন সেটা চালু রয়েছে। পৌর বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান নাজিম উদ্দিনের মালিকানধীন ‘দেওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা’ ও ‘সীমা সিনেমা হল’, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু তাহের মুকুটের মালিকানাধীন দক্ষিণপাড়ায় অবস্থিত ‘সান ইঞ্জিনিয়ারিং’, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা. আবদুর রহমানের মালিকানাধীন ‘ধামরাই সিএনজি ফিলিং স্টেশন’, উপজেলা যুবদলের সভাপতি ওয়ালিদ খানের ‘ডি-লিংক পরিবহন’ চালু রয়েছে। এদিকে গতকাল বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাস্টারবাড়ী ও নয়নপুর শিল্প এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া  আরএকে সিরামিক ও আরএকে ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন চলেছে পুরোদমে। চালু ছিল বিএনপি ঘরানার ব্যবসায়ী নেতা রেজাউল করিমের মালিকানাধীন নয়নপুর এলাকার তিব্বত গ্রুপের রিদিশা নিটিং, মাস্টারবাড়ীতে অবস্থিত কুমিল্লা এলাকার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া সুমনের ডেনিম্যাক নিটিং, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান টুকুর এপেক্স নিটিং, অনটেক্স লিমিটেড, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ। অন্যান্য কারখানার সঙ্গে উৎপাদন চলেছে গাজীপুরের মির্জাপুরে অবস্থিত তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ওয়ান টেক্সটাইল, ওয়ান ডেনিম, সাবেক এমপি সিলভার সেলিমের সিলভার লাইন টেক্সটাইল, সিলভার স্পিনিং, বাংলাবাজার এলাকায়  এম এ হাসেমের পারটেক্স ডেনিম, আম্বার কটন, পারটেক্স বেভারেজ, পারটেক্স পাস্টিক, সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ বলে খ্যাত বর্তমানে কারাগারে থাকা মাহমুদুর রহমানের আর্টিজেন সিরামিকস লিমিটেড এবং বিরোধীদলীয় হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের তামান্না গার্মেন্ট কারখানায়। কাশিমপুর শিল্প এলাকায় পটুয়াখালীর সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক হোসেনের ডেল্টা কম্পোজিট, ডেল্টা স্পিনিং ও ডেল্টা টেক্সটাইল, গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের গাজীপুর ফ্যাশন, খালেক পাঠানের খালেক গ্রুপের কেয়া কসমেটিকস, কেয়া টেক্সটাইল, স্পিনিং কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। চালু ছিল জামায়াত নেতা বদরুদ্দোজা মমিনের বিডি ফুড কারখানাও। তবে মোবাইল ফোন নাম্বার না থাকায় এসব নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সিলেট নগরের সোবহানী ঘাটে জেলা ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এম এ হকের মালিকানাধীন বেঙ্গল গ্যাসোলিন অ্যান্ড সার্ভিসিং, মহানগর বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বাবুলের খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফিজা অ্যান্ড কোং, জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার মালিকানাধীন আল-হামরা শপিং সিটি, বিএনপি নেতা আজমল বখত সাদেকের পারিবারের মালিকানাধীন ইদ্রিছ মার্কেট হরতালের মাঝেও খোলা থাকছে। জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক নূরুল হক পেশায় একজন আইনজীবী। হরতাল অবরোধের সময় তিনি মাঠে না থাকলেও নিয়মিত কোর্টে আইন পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি হরতালের সময় নিজের প্রাইভেট কার নিয়েই চলাচল করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিকবার ফোন করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদ অবশ্য বলেন, ‘আমাদের বিএনপি জোটের অনেক নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। প্রশাসনের চাপেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন হুমকি দিচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা না রাখলে লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে।’ গ্যাসোলিন ফিলিং স্টেশনের মালিক এম এ হক বলেন, ‘প্রথম দিকে আমার পাম্পটি বন্ধ ছিল। প্রশাসন আমাকে নোটিশ দিয়েছে পাম্প খোলা রাখার জন্য, অন্যথায় তারা আমার লাইসেন্স বাতিল করে দেবে। এ অবস্থায় আমাকে পাম্প খোলা রাখতে হচ্ছে।’ বরিশাল শহরে গতকাল দুপুর ২টার দিকে চকবাজারের অভিজাত কাপড় বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘ময়ূরী ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্স’-এ ক্রেতাদের ভিড়। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১০ জন কর্মচারী ক্রেতাদের নিয়ে ব্যস্ত। আর ক্যাশ কাউন্টারে বিক্রীত কাপড়ের মূল্য রাখছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক বরিশাল জেলা যুবদল নেতা শেখ মো. হানিফ। এর আধাঘণ্টা আগে ক্যাশ কাউন্টার ত্যাগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অপর মালিক জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শেখ আ. রহিম। বরিশালের আটা-ময়দা তৈরি ও বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘চিস্তিয়া ফ- াওয়ার মিলস’। হরতাল-অবরোধের মধ্যেই এই মিল থেকে প্রতিদিন ৫০০ বস্তা (৫০ কেজির) ময়দা ও আটা বিক্রি হয়। প্রায় ৩৫ জন শ্রমিক ব্যস্ত সময় কাটায় মিলটিতে। নিয়মিত খোলা থাকা ‘অভিরুচী’ সিনেমা হলসহ এ দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক এবায়দুল হক চান। তিনি বরিশাল জেলা বিএনপির সভাপতি। বরিশালের ব্যস্ততম বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘খোন্দকার ব্রাদার্স’। হরতাল-অবরোধ চললেও বন্ধ থাকেনি দোকানটি। প্রতিষ্ঠানের মালিক খোন্দকার আবুল হাসান লিমন প্রায়ই এখানে এসে ব্যবসা দেখভাল করছেন। বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও নগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত এ নেতার ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভালোভাবেই চলছে চলমান হরতাল-অবরোধে। জানতে চাইলে বরিশাল জেলা যুবদল নেতা শেখ মো. হানিফ কালের কণ্ঠকে জানান, বহু সমস্যার মধ্যেও তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। আর দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চানকে ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। রাজশাহীতে বিএনপি নেতা লুৎফর রহমানের মালিকানাধীন ‘দেশ ট্রাভেলস’-এর পরিবহন চলছে হরতালের মধ্যেই। ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, এখন প্রতিদিন তাঁদের কম্পানির ২০টি করে বাস ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকার উদ্দেশে। সিটও ফাঁকা থাকছে না। নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন (সাবেক কমিশনার) শহরের টানবাজার এলাকায় অবস্থিত রং-সুতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘পারু এন্টারপ্রাইজ’ অবরোধের প্রথম দিন থেকেই খোলা আছে। অনবরত চলছে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের মালিকানাধীন শহরের চাষাঢ়ার হক প্লাজায় অবস্থিত ওয়েসটেক টেইলার্স, শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমেদের এ এইচ আবাসিক প্রকল্প, কেন্দ্রীয় যুবদলের কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুর মালিকানাধীন রূপগঞ্জের ভুলতায় অবস্থিত গাউছিয়া মার্কেট, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এ এম বদরুজ্জামান খসরুর মালিকানাধীন জাহিন স্পিনিং মিল। গতকাল বুধবারও খোলা ছিল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরের ম্যাক্স অ্যাপারেলস, বন্দর পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেনশাহর ডকইয়ার্ড, বন্দর উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি হাজী নুরুদ্দিনের হাজী রাইস মিল, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শাহ আলমের মালিকানাধীন শাহ ফতেউল্লাহ টেক্সটাইল মিল ও শাহজালাল স্পিনিং মিল। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে নগর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু যেসব বিএনপি নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে তাঁদের সশরীরে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রকৃত নেতা-কর্মীরা আজ জেলজুলুম ও হুলিয়ার শিকার। অথচ যাঁরা নমিনেশন আনার জন্য টাকা-পয়সা খরচ করে দৌড়ঝাঁপ করেন তাঁরা আন্দোলন-সংগ্রামে তো থাকেনই না, বরং তাঁদের মিল-কারখানাও খোলা রয়েছে। এটা তাঁদের স্ববিরোধী কর্মকাণ্ড। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা এলাকার নতুন বাজারে ‘জনতা ট্রেডার্স’ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক নান্দাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এনামুল কাদির। এই প্রতিষ্ঠানের শাখা তমাল ট্রেডার্সে রড-সিমেন্টসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাইকারি ও খুচরা বিকিকিনি হয়। অবরোধ-হরতালে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে মালামাল আনা-নেওয়া কম থাকলেও জনতা ট্রেডার্সে রয়েছে ব্যস্ততা। নিজের ট্রাক দিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা ছাড়াও দেশের অনেক জায়গা থেকে মালামাল আনা হচ্ছে রীতিমতো রুটিনমাফিক। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বা তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে হরতাল না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দৃশ্যত ঢাকায় হরতাল পালন না হলেও ঢাকার বাইরের ভিন্ন চিত্র। অবশ্য প্রায় সব জায়গায়ই বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলার মুখে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই তাদের গাড়ি চলাচল বা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকার বিষয়টি সবার ক্ষেত্রে সঠিক নয়। এ ছাড়া আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। নেতা-কর্মীরা আমাদের জানিয়েছে তারা কেউ হরতাল অমান্য করছে না।’ (প্রতিবেদনটির জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সিলেটের আহম্মেদ নূর, বরিশালের রফিকুল ইসলাম, রাজশাহীর রফিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের দিলীপ কুমার মণ্ডল, গাজীপুরের শরীফ আহম্মেদ শামীম, ঈশ্বরগঞ্জের আলম ফরাজী ও ধামরাইয়ের আবু হাসান)।

No comments:

Post a Comment