সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব যৌথ বাহিনী ইয়েমেনে শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের ওপর গতকাল শনিবারও প্রচণ্ড বিমান হামলা চালিয়েছে। এটা ছিল সম্প্রতি দেশটির ক্ষমতা দখলকারী হুতিদের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফা বিমান হামলা। গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া আরব দেশগুলোর যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণ গতকালও অব্যাহত থাকে। খবর বিবিসি ও এএফপির। এডেনমুখী বিদ্রোহীদের রুখতে ইয়েমেনের দেশছাড়া প্রেসিডেন্ট আবদুরাব্দ মনসুর হাদির অনুগত বাহিনী
হুতিদের বিরুদ্ধে স্থলযুদ্ধ শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে হুতিদের পক্ষে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে জোটের যুদ্ধবিমানগুলো বিদ্রোহীদের দখলে থাকা রাজধানী সানায় প্রচণ্ড হামলা চালায়। এর পাশাপাশি হুতিদের কবজায় থাকা উত্তরাঞ্চলীয় সাদা শহরেও হামলা চলে। বিদ্রোহীদের অস্ত্রভান্ডার, সামরিক ঘাঁটি এবং তাদের বাসস্থান ছিল হামলার লক্ষ্য। বিমান হামলা শুরুর পর থেকে সানার বাসিন্দারা নগরটি ছাড়তে শুরু করেছেন। পেট্রলপাম্পগুলোতে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। সানার বাসিন্দা মোহাম্মদ আল জাবাহি বলেন, ‘বাড়ির ওপর দিয়ে বিমান উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে আমার তিনটি বাচ্চা ভয়ে ঘরের একপাশে জড়ো হয়ে কাঁদতে শুরু করে।’ গতকাল শনিবার ভোর পর্যন্ত সৌদিনিয়ন্ত্রিত জোট বাহিনীর হামলা চলে। এডেন বিমানবন্দরের দিকে হুতি বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযান ঠেকাতে জোট বাহিনী সেখানেও তাদের ওপর বিমান হামলা চালায়। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এডেন উপসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান থেকে বেরিয়ে আসা দুই সৌদি বৈমানিককে উদ্ধার করেছে। প্রতিবেশী সুন্নিপ্রধান সৌদি আরব হাদির সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা হুতি বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার জন্য শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানকে দায়ী করেছে। মিসরসহ ১০টি আরব দেশ হুতিবিরোধী হামলায় যোগ দিয়েছে বলে দাবি করে আসছে সৌদি আরব। গত বৃহস্পতিবার ইয়েমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ ইয়াসিন বিবিসিকে বলেন, ‘সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হস্তক্ষেপে কেউ খুশি নয়। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েই এর জন্য অনুরোধ করেছি।’ হুতিদের বিরুদ্ধে হামলা দ্রুত শেষ হওয়া উচিত বলেও তাগিদ দেন ইয়াসিন। হুতি বিদ্রোহীদের নেতা আবদুল মালেক আর-হুতি আত্মসমর্পণ না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাদের ওপর সৌদি হামলাকে ‘অন্যায্য আগ্রাসন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সৌদি হামলার সমালোচনা করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ গত শুক্রবার বলেছেন, ‘তাদের এ হামলা বন্ধ করতে হবে।’ তবে সৌদি বাদশাহ সালমান বলেছেন, ইয়েমেনের জনগণের ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত’ হামলা চলবে। ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপটে মিসরের অবকাশযাপন কেন্দ্র শারম আল-শেখে চলছে আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলন। এ সম্মেলনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি যৌথ সামরিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাগতিক মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সম্মেলনে বলেছেন, আরব অঞ্চল ‘নজিরবিহীন হুমকি’ মোকাবিলা করছে। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে কথা বলেন। ওবামা হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলমান সামরিক হামলার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে ওবামা ও বাদশাহ সালমান আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানে একমত বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
No comments:
Post a Comment