Sunday, March 29, 2015

উদ্ধারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নেই:প্রথম অালো

১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের খোঁজ মেলেনি। তাঁর সন্ধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। এদিকে, গতকাল শনিবার একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সালাহ উদ্দিনকে সশরীরে জনসমক্ষে বা আদালতে হাজির করতে পারলে প্রমাণিত হবে যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সালা
হ উদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সালাহ উদ্দিনকে আটক বা তুলে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে। সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ গতকাল প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ধরে নেওয়ার ১৮ দিন পার হলেও তাঁর স্বামীর খোঁজ দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো তৎপরতা নেই। তারা তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি আবারও অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তিনি যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন—যেভাবে তাঁর স্বামীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে, অক্ষত অবস্থায় তাঁর স্বামীকে যেন সেভাবেই ফিরিয়ে দেয়। তাঁর স্বামী কোনো অপরাধ করে থাকলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যেন আদালতে হাজির করা হয়। হাসিনা আহমদ জোর দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি পুলিশের উত্তরা বিভাগ ও ডিবি তদন্ত করছে। জানতে চাইলে ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্ধান পেতে ডিবি তৎপর আছে। তদন্তে সহায়তার জন্য ডিবি পুলিশ সালাহ উদ্দিনের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবে। হাসিনা আহমদ এর আগে সালাহ উদ্দিনের খোঁজ পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া ১৪ মার্চ তিনি উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেন। এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান: গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে মাইনরিটি রাইটস ফোরামের আলোচনা অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘শুনলাম পুলিশের মহাপরিদর্শক বললেন, সালাহ উদ্দিন আহমদকে আমরা ধরি নাই, আটক করি নাই এবং তাঁকে আমরা খুঁজে বের করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সালাহ উদ্দিন আহমদকে আটক করে নাই—এই সত্যতা তখনই আমরা গ্রহণ করব, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে দ্রুততার সঙ্গে জনসমক্ষে বা আদালতে হাজির করে। বলবে এই যে আমরা তাঁকে উদ্ধার করেছি, তিনি রয়েছেন, তাঁকে আটক করিনি।’ মিজানুর রহমান বলেন, যেকোনো নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রথম বর্তায় রাষ্ট্রের ওপরে। রাষ্ট্র এই দায়িত্ব কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। সুতরাং যিনি যেমনই হোক না কেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, এটিই তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, বড় অধিকার। এই অধিকারের ভিত্তিতেই তিনি দাবি করতে পারেন নিরাপত্তার। রাষ্ট্র তাঁকে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার দায়িত্ব কখনোই এড়িয়ে যেতে পারে না। সালাহ উদ্দিনের বাসায় প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক: গতকাল বিকেলে সালাহ উদ্দিন আহমদের গুলশানের বাসায় যান প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক। তিনি সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদের কাছে বিএনপির এই নেতার খোঁজখবর নেন। সাক্ষাৎ শেষে রফিক-উল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিশ্বাস সালাহ উদ্দিন আহমদ এখনো বেঁচে আছেন, হয়তো কোথাও আটকে আছেন।’ তিনি বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমদ সম্পর্কে পুলিশ অবশ্যই জানে। কিন্তু কিছুই বলছে না। আশা করি, তিনি ভালো আছেন। বেঁচে আছেন।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে খুব শিগগির ফিরিয়ে দেবে। রফিক-উল হক বলেন ‘সালাহ উদ্দিনের মতো এত বড় মানুষের অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে। দেশের যেকোনো নাগরিকের এ ধরনের অবস্থা হতে পারে। একজন সাধারণ নাগরিক এভাবে ভ্যানিশ হয়ে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি আগামী ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় আদালতের শুনানিতে সালাহ উদ্দিনের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান।

No comments:

Post a Comment