বিরোধীদের সমালোচনা ঝেড়ে ফেলতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল শেষ পর্যন্ত তাঁর সেরা হাতিয়ারই তুলে ধরলেন—দুর্নীতিবিরোধী জিহাদ। নিজের দল আম আদমি পার্টিতে (এএপি) তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিতি দুই নেতাকে কোণঠাসা করে সমালোচনার মুখে পড়েন কেজরিওয়াল। পরিস্থিতি সামলাতে এর পরই দুর্নীতিবিরোধী মহাস্ত্রটি তুলে নিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। গত রোববার রাজধানী নয়াদিল্লির লোকারণ্য তালকাটোরা স্টেডিয়ামে
ঘুষবিরোধী অভিযান নতুনভাবে শুরু করতে তিনি একটি নতুন হেল্পলাইন শুরু করলেন। অনুষ্ঠানে কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমার সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া যদি দুর্নীতিতে যুক্ত থাকেন, তবে তাঁকে জেলে যেতে হবে। যদি আমি দুর্নীতি করি, আমিও জেলে যাব।’ দুর্নীতি রুখতে কেজরিওয়ালের দাওয়াই, ‘কাজ করানোর জন্য কেউ ঘুষ চাইলে না বলবেন না। মুঠোফোনে কথাবার্তা রেকর্ড করুন। ফোন করুন ১০৩১-এ। আমার সরকার ঘুষের কারবারিকে জেলে পাঠাবে।’ দিল্লিতে এএপির প্রথম দফার ৪৯ দিনের রাজত্বে সরকারি পর্যায়ে ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার প্রবণতা ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছিল বলে কেজরিওয়ালের দাবি। বিকেল পাঁচটায় হেল্পলাইন খোলার কথা ঘোষণার তিন ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার ফোনকল চলে আসে। এমন হবে জেনেই গোটা দিল্লি তিনি ভরিয়ে দিয়েছেন হোর্ডিংয়ে। তাতে এক দিকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, অন্য দিকে ঘুষ বন্ধে ১০৩১-এ ফোন ও সেই সংক্রান্ত যা যা করতে হবে, তার নির্দেশ। তালকাটোরা স্টেডিয়ামে কেজরিওয়ালের সদর্প ঘোষণা, আগামী পাঁচ বছরে দিল্লি হবে গোটা বিশ্বের ঘুষমুক্ত পাঁচটি শহরের অন্যতম। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কেজরিওয়াল বেশ কিছুটা স্তিমিত ছিলেন। চিকিৎসার জন্য কিছুদিন বেঙ্গালুরু যান। ফিরে এসে দলে বিদ্রোহ সামাল দেন। তাত্ত্বিক নেতা যোগেন্দ্র যাদব, প্রশান্ত ভূষণদের দলে কোণঠাসা করায় নানা মহলের নানা সমালোচনা সহ্য করতে হয় তাঁকে। সেই বিরুদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে নিজের ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কেজরিওয়াল দুর্নীতিবিরোধী অস্ত্র প্রয়োগ করলেন, যা গোটা দেশে তাঁদের পরিচিতি দিয়েছে। দুর্নীতিতে জেরবার ভারতীয় সমাজকে অন্যভাবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন প্রবীণ গান্ধীবাদী আন্না হাজারে দেখিয়েছিলেন, তা বাস্তবে রূপ দিতেই কেজরিওয়ালের এই নতুন অঙ্গীকার। এভাবে ঘুষের বিরুদ্ধে নতুনভাবে যুদ্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে কেজরিওয়াল এক ঢিলে একাধিক পাখি মারলেন। তিনি জানিয়ে দেন, প্রতিটি সরকারি অফিসে দুর্নীতি দূর করার একটি নির্দেশিকা পাঠানো হবে। সেই নির্দেশগুলো সরকারি অফিসে এমনভাবে টাঙাতে হবে যাতে সবাই দেখতে পারেন। কেজরিওয়াল বলেন, ‘আগেরবার অনেক সরকারি অফিসে মুঠোফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এবার তা চলবে না। মুঠোফোন দারুণ উপযোগী। মুঠোফোনে অনেক গোপন ছবি তোলা যায়। আমি আমার অফিসে মুঠোফোন নিয়ে সবাইকে ঢুকতে দিই।’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুর্নীতি শেষ করতে কিছু আইন সরল করা হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে উদার হতে হবে। ঠিক চার বছর আগে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল দুর্নীতি দূর করতে আন্না হাজারে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। দলীয় রাজনৈতিক চাপ থেকে সরকার ও নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে সেই দিনটিকেই কেজরিওয়াল সচেতনভাবে বেছে নিলেন। বিদ্যুৎ ও পানিতে ভর্তুকি দেওয়ার পরে দুর্নীতি দূর করার অঙ্গীকার ছিল এএপি সরকারের তৃতীয় প্রতিশ্রুতি।
No comments:
Post a Comment