Tuesday, April 7, 2015

ভারতের ওপর দিয়ে তিন পথে ৩য় দেশে বাণিজ্যের সুযোগ:কালের কন্ঠ

স্থল, নৌ ও রেলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে ব্যবসার সুযোগ রেখে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে তিন পথেই নেপাল বা ভুটানের মতো তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে বাংলাদেশ। ভারতও একই সুবিধা পাবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে 'বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তির' এ খসড়া অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
র সভাপতিত্বে সচিবালয়ে ওই বৈঠক হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তিটি মূলত ট্রানজিটের একটি 'আমব্রেলা চুক্তি'। ১৯৭২ সালের এ চুক্তির আওতায় নৌ প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ভারত তাদের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পণ্য আনা-নেওয়া করছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য পরিবহনে সড়ক বা রেলপথ ব্যবহারের কোনো প্রটোকল নেই। শুধু সড়ক ও রেলপথে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্রটোকল স্বাক্ষর করে বিভিন্ন শর্তারোপ করা হয়েছে। একইভাবে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে এমন প্রটোকল সই হবে। বিদ্যমান নৌ প্রটোকল অনুযায়ী, এক দেশের ভেতর দিয়ে পণ্য পরিবহনের ওপর কোনো ধরনের চার্জ বা ফি নেই। এ কারণে এ ধরনের নৌ প্রটোকলের ফলে বাংলাদেশের কোনো লাভ হচ্ছে না। নতুন চুক্তিতে সেবার বিপরীতে চার্জ বা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বেশি পণ্য পরিবহন করবে, তাই চার্জ বা ফি আরোপ করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরের কোন রাস্তা, কিভাবে ব্যবহার করবে, এতে মাসুল কী হবে- এসব বিষয়সহ অন্য নানা বিষয় পরবর্তী সময়ে আলাদা প্রটোকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে স্থলপথে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের সুবিধা পেলে বাংলাদেশের যতটা লাভ হবে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নিজেদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স) পণ্য পরিবহনের মধ্য দিয়ে এর চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হবে ভারত। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের সামনে চুক্তি সংশোধনের বিষয়টিকে 'বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন' হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ সুবিধার জন্য কী পরিমাণ 'ফি' দিতে হবে তা দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ চুক্তির মেয়াদ ছিল তিন বছর। এখন থেকে তা হবে পাঁচ বছর। কোনো পক্ষের আপত্তি না থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয়ে যাবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন 'ব্যবসায়ীরা যখন বিনিয়োগ করেন, তখন চুক্তির মেয়াদ বেশি থাকলে আস্থা তৈরি হয়, তাঁদের স্বস্তি হয়। চুক্তি সংশোধনের প্রয়োজন হলে দুই পক্ষ বসে তা ঠিক করে নিতে পারবে।' মন্ত্রিপরিষদসচিব আরো বলেন, ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ দুই দেশের মধ্যে প্রথম এ চুক্তি হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০০৯ সালে নতুন করে চুক্তি সই হয়। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে। সংশোধনের পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর ধরা হবে। 'দুঃসময়' মোকাবিলার জন্য প্রশাস?নকে ধন্যবাদ : হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নাশকতার কারণে প্রায় তিন মাস দুঃসময় গেল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ দুঃসময় মোকাবিলার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটতে পারে সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তাদের প্রতি নির্দেশও দিয়েছেন। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, পটুয়াখালী ও নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল বিভাগে পটুয়াখালী ও ঝালকাঠির মাঝখানে সেনাবাহিনীর জন্য একটি ডিভিশন হবে। ব্রিটিশদের গোলামির অভ্যাস এখনো যায়নি : গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্যুট-টাই পরা মন্ত্রীদের কড়া কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিচু স্বরে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলার পরই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) স্যুট-টাই পরা মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, এগুলো কি আমাদের ড্রেস নাকি? এগুলো ব্রিটিশদের ড্রেস। ব্রিটিশদের গোলামি করেছেন, এখনো তার অভ্যাস যায়নি। বৈঠক শেষে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান।    

No comments:

Post a Comment