সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চের এজলাসে গতকাল সোমবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে একে একে আসন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাসহ বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা। কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনের ওপর আদেশ দিয়ে মামলার নথি বেঞ্চ অফিসারের কাছে এগিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি। 'রিভিউ পিটিশন ডিসমিসড'- এটুকু বলেই নেমে গেলেন বিচারপতিরা। মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই ভাগ্য ন
ির্ধারিত হয়ে গেল জামায়াত নেতা ও একাত্তরের আলবদর কমান্ডার মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগেই এজলাস ছাড়লেন বিচারপতিরা। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এ বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা ছাড়া কামারুজ্জামানের কাছে আর কোনো আইনগত পথ খোলা নেই। তবে গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আপিল বিভাগের আদেশের কপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়নি। সুপ্রিম কোর্ট থেকে কখন তা পাঠানো হবে সেটি নির্ভর করছে আদালতের ওপর। রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছার পর তা জানানো হবে কামারুজ্জামানকে। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করবেন কি না। তিনি প্রাণভিক্ষা চাইলে তা পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। এরপর রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। তবে কামারুজ্জামান যদি প্রাণভিক্ষা না চান সে ক্ষেত্রে সরকার দণ্ড কার্যকর করার সময় নির্ধারণ করবে এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ তা কার্যকর করবে। এদিকে কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কামারুজ্জামানের ফাঁসির মঞ্চ ও ফাঁসির রশিও প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মহড়াও দেওয়া হয়েছে। যে দড়ি দিয়ে ফাঁসি দেওয়া হবে সেটিতে কামারুজ্জামানের ওজনের সমান ওজনের ইট ও বালু বাঁধা বস্তা ঝুলিয়ে মহড়া দেওয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে। গতকাল দুপুরের দিকে দীর্ঘ দুটি বাঁশ ও ত্রিপল কারাগারের ফটক দিয়ে ভেতরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সঙ্গে নেওয়া হয় দুই বস্তা বালি। ফাঁসির মঞ্চের ওপর আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহারের জন্য বাঁশ ও ত্রিপল নেওয়া হয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির সময়ও এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল যাতে আশপাশের কোনো উঁচু ভবন থেকে দেখা না যায়। কামারুজ্জামানের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য গতকাল দুপুরে চিঠি পাঠানো হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে। পরে সন্ধ্যায় কামারুজ্জামানের পরিবারের ১২ জন সদস্য দেখা করতে যান। সাক্ষাৎ শেষে রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী সাংবাদিকদের বলেন, 'রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আবেদন করার বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি (কামারুজ্জামান) বলেছেন, এ বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি চাইবেন না।' জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আবেদন খারিজ হওয়ার পরপরই রাজাধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনেক এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আবেদন খারিজ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। কিন্তু দুপুরে টেলিফোনে কারাগার থেকে আইনজীবীদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাঁরা সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন না। এরপর কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামীকে টেলিফোন করে কারা কর্তৃপক্ষ। ওয়ামীকে বলা হয়, 'পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আজই (সোমবার) আসার সুযোগ আছে।' এরপর সন্ধ্যায় কামারুজ্জামানের সঙ্গে কারাগারে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন পরিবারের ১২ সদস্য। 'হাসি মুখে বিদায় দিয়ে গেলাম' : এদিকে কামারুজ্জামানের সঙ্গে কারাগারে দেখা করে বেরিয়ে তার ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, 'আমরা হাসি মুখেই বিদায় দিতে এসেছিলাম। হাসি মুখেই বিদায় দিয়ে গেলাম। এই রায়ের জন্য তিনি বিচলিত নন, আমরাও বিচলিত নই।' গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে একটি মাইক্রোবাসে করে কামারুজ্জামানের স্ত্রী-সন্তানসহ ১২ জন দেখা করতে যান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কামারুজ্জামানের স্ত্রী নুরুন্নাহার, ছেলে হাসান ইকবাল, হাসান ইমাম ও আহমেদ হাসান; মেয়ে আতিয়া নূর; ভাই কামরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী আফিয়া নূর; ভাতিজা আরমান, ভাতিজি আরিফা ও মলি; শ্যালক রুম্মান; ভাগ্নি রোকসানা জেবিন, জিতু, মুন ও মনি এবং বিউটি নামের এক আত্মীয়া। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ রকম ক্ষেত্রে সব সময়ই পরিবারকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী পরিবারকে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যায়ে আলোচনার জন্য আইনজীবীদের সাক্ষাতের সুযোগ নেই। এ কারণে তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।' এক কারারক্ষীর মাধ্যমে জেনেছেন কামারুজ্জামান : কারা সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে আবেদন খারিজ হওয়ার পরপরই টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ দেখানো শুরু হয়। সেই নিউজ দেখেন কারাগারের কর্মকর্তা ও কারারক্ষীরা। সকাল ১০টার দিকে গিয়ে এক কারারক্ষী সেই খবর জানান কামারুজ্জামানকে। পরে সন্ধ্যায় তার স্ত্রী-সন্তানরা দেখা করেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে নিয়ে দেখা করানো হয় স্বজনদের। ওই সময় কামারুজ্জামানকে বিমর্ষ দেখালেও তিনি স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করেন। জানতে চাইলে এক কারা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রায়ের কপি না পাওয়ার আগ পর্যন্ত অফিসিয়ালি দণ্ডপ্রাপ্তকে রায়ের বিষয় জানানোর নিয়ম নেই।' স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আইজি প্রিজন্সের সাক্ষাৎ : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে গতকাল দুপুরে সাক্ষাৎ করেন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে আইজি প্রিজন্স সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। দুই-তিন মিনিট কথা বলেই বিদায় নেন আইজি প্রিজন্স। জানা গেছে, বৈঠকে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যথাযথ নিয়ম মেনেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে।' আইনমন্ত্রী বললেন, আমরা সন্তুষ্ট : আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, 'কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়েছে। ফলে ফাঁসির রায় বহাল রয়েছে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ৪৩ বছর পর হলেও বাংলাদেশের মানুষ বিচার পাচ্ছে, এটাই বড় অর্জন।' তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রায় কার্যকর করা হবে। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত আপিল বিভাগের রায়ের কোনো কপি আমার হাতে আসেনি।' দণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করার দিনক্ষণ ঠিক করবে সরকার। তিনি বলেন, 'কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর করার আগে প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। তিনি (কামারুজ্জামান) যদি রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন তবে ওই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। আর যদি না করেন এবং তা কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন তবে সরকার যেকোনো মুহূর্তে তা কার্যকর করতে পারবে।' তিনি বলেন, তবে দণ্ড কার্যকর করার আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন। কত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করতে হবে সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তবে আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, আসামিকে যুক্তিসংগত সময় দিতে হবে। তবে যুক্তিসংগত সময় তো আর সাত দিন বা ১৫ দিন হতে পারে না। জেল কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে তাঁকে কতক্ষণ সময় দেবে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির বলেন, 'আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপি না পাওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করবে না বলে আশা করি।' তিনি বলেন, এখন কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, 'কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদন করেছিলাম। আমাদের সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়নি।' রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া : রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'উচ্চ আদালতের এ রায়ে আমরা খুশি। এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা।' প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, এ রায় ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের রায়। এর মধ্য দিয়ে সত্য ও স্বাধীনতার বিজয় অর্জন হয়েছে। এটি যেমন সত্যের বিজয়, তেমনিভাবে মানবতাবিরোধী সবচেয়ে বড় অপরাধ নারী নির্যাতনেরও উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে, ন্যায়বিচার হয়েছে। তিনি বলেন, 'কামারুজ্জামানের মামলায়ই আমি প্রথমবারের মতো আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। সে মামলায় চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ রায় পেয়ে ভালো লাগছে।' একই মঞ্চে ফাঁসি : ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল আবদুল কাদের মোল্লার। এরপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চটিতে আর কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়নি। সেই মঞ্চেই এবার কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে। আপিল বিভাগের তৃতীয় রায়, তবে দ্বিতীয় মৃত্যুদণ্ড : কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার আপিল বিভাগের তৃতীয় রায়। এর আগে আপিল বিভাগ একই অপরাধে আবদুল কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পরিবর্তন করে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন আপিল বিভাগ। সাঈদী কারাদণ্ড ভোগ করছেন। আর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। এরপর কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে। কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ (১, ২, ৩, ৪ ও ৭) প্রমাণ করতে সক্ষম হয়। এ কারণে পাঁচটিতে সাজা দেওয়া হয়। এরমধ্যে দুটিতে (অভিযোগ ৩ ও ৪) ফাঁসি, দুটিতে (অভিযোগ ২ ও ৭) যাবজ্জীবন এবং একটিতে (অভিযোগ ১) ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অবশিষ্ট দুটি অভিযোগ (৫ ও ৬) প্রমাণ করতে না পারায় তা থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামান আপিল করলে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রায়ে সই করেন বিচারকরা। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ের কপি পাওয়ার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এ পরোয়ানা পেয়ে সেদিনই কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে পরোয়ানার কথা অবহিত করে। এর ঠিক ১৫ দিনের মাথায় ৫ মার্চ রিভিউ আবেদন দাখিল করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মামলার চূড়ান্ত রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়। ওই দিন রায় ঘোষণায় বলা হয়, আপিলকারী কামারুজ্জামানকে এক নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হলো। অভিযোগ নম্বর ২ ও ৭-এর সাজা সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে বহাল রাখা হলো। অভিযোগ নম্বর-৩ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে সব বিচারক একমত হয়েছেন, তবে ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে। অভিযোগ নম্বর-৪ প্রমাণিত হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো। সর্বোচ্চ সতর্কতা : কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। সভায় বলা হয়, 'যুদ্ধাপরাধীদের' বিচারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন তৎপরতার দিকেও সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া নাশকতা সৃষ্টিকারীদের দমন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের যেসব কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে বা যারা বিভিন্ন নাশকতার কাজে জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশের জামায়াত-শিবিরপ্রবণ এলাকায় র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেহেতু রিভিউ খারিজ হয়ে গেছে, সে জন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।' পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বিশেষ করে এ রায়ের সঙ্গে যাঁদের সম্পৃক্ততা রয়েছে তাঁদের এলাকায় বাড়তি নজর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে কামারুজ্জামানের রায় ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার ও যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে র্যাবকে। নিরাপত্তা জোরদার : গতকাল মধ্যরাতে নিরাপত্তা জোরদারে ঢাকায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সব মিলিয়ে ১১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আদালত ভবনসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবিও থাকবে।
No comments:
Post a Comment