নেপালে গত শনিবারের ভূমিকম্পের পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও অনেক দুর্গম এলাকায় এবং ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো আটকা পড়ে আছে মানুষ। তাদের উদ্ধার ও ত্রাণ বন্টনে ধীরগতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্গত লোকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। আর মৃতদেহ এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়ছে হাজারো মানুষ। তাঁদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। নেপালে
৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের পর এ পর্যন্ত সেখানে ৫ হাজার ৫৭ জনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আহত হয়েছে আট হাজারের বেশি। জাতিসংঘ বলছে, ভূমিকম্পে ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ ক্ষণস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছে। সেখানে খাবার নেই, পানি নেই। নেপালের কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার দুর্যোগ-পরবর্তী সরকারি ভূমিকার ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, দুর্যোগের তীব্রতায় তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দুর্গম অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ পাঠানো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী মিনেন্দ্র রিজাল গত মঙ্গলবার রাতে বলেন, ‘নজিরবিহীন এই দুর্যোগে ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি রয়েছে।’ দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জগদীশ চন্দ্র পখেরেল বলেন, ‘এলাকাগুলো এতটাই দুর্গম যে সেখানে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগছে। আমাদের সৈন্যরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।’ এদিকে হাজারো মানুষ কাঠমান্ডু ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য গতকাল বাসের লাইনে দাঁড়ান। তবে বাসের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় যাত্রীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দাঙ্গা পুলিশ। গতকাল সকালের দিকে পুলিশের সঙ্গে তাদের মারামারির ঘটনাও ঘটে। বাসের জন্য অপেক্ষারত এক ব্যক্তি বলেন, ‘মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় মহামারি আকারে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি আমরা। তাই নিরাপদে থাকার জন্য কিছুদিনের জন্য আমি শহর ত্যাগ করছি।’ দুর্গম অঞ্চলগুলোতে থাকা পরিবারের সদস্যদের খোঁজ জানতেও অনেক লোকজনই কাঠমান্ডু ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে বাস সংকটের কারণে তীব্র দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি মহাসড়কে মানুষ, যানবাহন ও ত্রাণবাহী যানের ব্যাপক ভিড় দুর্ভোগের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আর পর্যটকসহ অন্যরা সড়কপথে ভারতের দিকে ছুটছেন। কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরের বাইরে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট পেতে পর্যটকেরা ভিড় করছেন। ফ্লাইটের পরিমাণ বাড়ানোর পরও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ত্রাণবাহী কার্গো বিমানের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও ছোট বিমানবন্দরটিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খারাপ আবহাওয়ার পর গতকাল থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছে দুর্গম এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান পুনরায় শুরু হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, প্রত্যন্ত গোর্খা এলাকায় ত্রাণবাহী যান পৌঁছেছে। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য একটি হেলিকপ্টার কাজ শুরু করেছে। ওই গ্রামগুলোর কোনো কোনোটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গ্রামবাসীরা উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ত্রাণবাহী হেলিকপ্টারের পেছনে ছুটছেন। তবে সেসব হেলিকপ্টার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবতরণ করতে পারছে না। ত্রাণবাহী হেলিকপ্টারে থাকা এক টেকনিশিয়ান বলেন, ‘গোর্খা অঞ্চলের পুরো পাহাড়ি এলাকা সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। সেখানে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অবতরণ করার মতো জায়গা খুঁজে পাওয়াটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ গোর্খার লাপরাক গ্রামের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, সেখানকার ১৬০০ থেকে ১৭০০ বাড়ি সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মাগনুস নামের ইসরায়েলের একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী সংগঠনের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার তুষারধসের পর প্রায় ১০০ ইসরায়েলিসহ কয়েক শ পর্যটক রাসুয়া অঞ্চলে আটকা পড়েছেন। সেখানে স্থানীয় লোকজন খাবারের জন্য পর্যটকদের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাঁদের ধারণা পর্যটকদের কাছে বেশি খাবার আছে।
No comments:
Post a Comment