Tuesday, April 21, 2015

হয়রানির শিকার সাধারণ ওয়ার্ডের নারী প্রার্থীরা:যুগান্তর

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৩ সাধারণ ওয়ার্ডের ১৭টিতে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থী পুরুষ প্রার্থীদের দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে তারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
5f' target='_blank'> ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি কর্মী শরমিলা ইমাম। তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। শরমিলা ইমাম বলেন, এ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসী। বিভিন্ন মামলার আসামি তারা। আমাকে প্রচার চালাতে তারা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছেন। আমার ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সাবেক এ কাউন্সিলর বলেন, এ ওয়ার্ডে ১৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এরমধ্যে শুধু আমি নারী। অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা আমি নারী হওয়ার কারণে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। আমার লোকদের মাঠে প্রচার চালাতে দিচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক কাউন্সিলর ও লালবাগ থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহিদা মোর্শেদ। সাবেক কাউন্সিলর হলেও নারী প্রার্থী হওয়ার কারণে এবারও দলীয় সমর্থন পেতে অনেক ফাইট করতে হয়েছে তাকে। তার সঙ্গে দলীয় সমর্থন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এসএম সায়েম। তবে বিগত দিনের দলীয় পারফরমেন্সের কারণে দল আমাকে সমর্থন দিয়েছে। এখন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তার পক্ষে কাজ করছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না। নারী প্রার্থী হওয়ার কারণেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী সাজেদা আলী হেলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাতে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। আমাদের কর্মীদের মাঠে প্রচার চালাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকেরা সমস্যা তৈরি করছেন। বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, নারী হওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন অন্য প্রার্থীরা। তিনি এ এলাকায় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মেহেরুন নেছা। তার স্বামী কাজী আবুল বাশার দীর্ঘদিন এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। স্বামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় এবার তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেহেরুন নেছা যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রচার চালাতে তার কোনো ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না। নারী হওয়ার কারণে তাকে মাঠে কেউ হেয়ও করছে না। ঢাকা উত্তরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাবেয়া আলম। তিনি গুলশান থানা মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা থাকলেও পুরুষ প্রার্থীদের অপপ্রচারের কারণে দলীয় সমর্থন বঞ্চিত হয়েছেন। রাবেয়া আলম বলেন, এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরও শুধু নারী হওয়ার কারণে আমি বিএনপির দলীয় সমর্থন পাইনি। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু পুরুষ নেতা ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে আমার ব্যাপারে নানা রকম ভুল বুঝিয়ে আমাকে সমর্থন বঞ্চিত করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মহানগর বিএনপি নেতা ফেরদৌসী আহমেদ। দল থেকে সমর্থন পেতে তাকে কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি। আর এখন প্রচার চালাতে পুরুষ প্রার্থীদের নানারকম হুমকি-ধমকি শুনতে হচ্ছে। আমি প্রচার চালালে নাকি তাদের ভোট নষ্ট হবে, তাই প্রচার বন্ধ করে দিতে হবে। আমার জয় নিশ্চিত, এমনটা ভেবে আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রচার করতে দিচ্ছে না। পুশিল ক্ষমতাসীন দলের দলীয় পুরুষ প্রার্থীদেরই পক্ষ নিয়ে আমার কর্মীদের হয়রানি করছে। যত্রতত্র আটক করছে। পুরুষ প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। নোংরা কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। স্থানীয় এমপি আসলামুল হক আসলামের লোকজন তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শিরিন রুখসানা। তিনি দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে কি ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, কাকে কাকের মাংস খায় না কিন্তু নিজের দলীয় লোক হয়ে কিভাবে হিংস হয়। কিভাবে ভয়ভীতি দেখায়। সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে। স্থানীয় এমপিসহ সন্ত্রাসীরা ভয় দেখাচ্ছেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে। এ কাউন্সিলর প্রার্থী আরও বলেন, দল থেকে তাকে সমর্থন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে লড়ছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন টিটু। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাতে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু প্রকাশ্যে আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে তার লোকজন। স্থানীয় এমপি আসলামুল হক তার বিরোধিতা করছেন জানিয়ে বলেন- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ আর দুর্নীতিকে তিনি ঘৃণা করেন বলেই তার বিরুদ্ধে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঢাকা মহানগর মহিলা দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা মিসেস স্বপ্না আহমেদ। দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে জোর প্রচার চালাচ্ছেন তারা। যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পুশিল তো মানুষের বন্ধু, এখন তাদের ভয়ে নির্বাচন প্রচারণা করতে পারছেন না। দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি থেকে শুরু করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে খোদ পুলিশ। তিনি আরও বলেন, তার সঙ্গে তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন দিলুও নির্বাচন করছেন। তার স্বামীর নামে ১২০টি মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশ কোনো বাধা দিচ্ছে না। তবে আমার নামে কোনো মামলা না থাকলেও পুলিশি ভয় তাকে তাড়া করছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রুনু আক্তার। বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট থেকে তাকে সমর্থন দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। ওয়ার্ডের উন্নয়নে যথাযথ চেষ্টা করেছেন। এবারও ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। জানালেন, ‘পুলিশ কী করে এমন নির্মম হয়। বর্বর হয়’। আপনার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন? নিজের দলেরই একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আরেক নারী প্রার্থী বাবুল আক্তার নামক একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, তিনি সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। তাকে যেন প্রচার করার সুযোগ দেয়া হয়। অযথা হয়রানি করবেন না। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন নীলুফার ইয়াসমিন নীলু। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জাড়িত থাকলেও নীলু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনী প্রচারনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাহমুদা বেগম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও স্থানীয় এমপি ও একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মতিউর রহমান মোল্লা তাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। মাহমুদা বেগম যুগান্তরকে বলেন, দলীয়ভাবে তাকে মনোনীত করলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার ও তার মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান মোল্লা প্রতিনিয়ত তাকে ও তার কর্মীদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এছাড়া সাবেক যুবলীগ নেতা মোরশেদ আলম বাচ্চু হত্যা মামলার আসামি চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মেসবাউল আলম সাচ্চু তার কার্মীদের মাঠে নামতে ও কাজ করতে দিচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরশেনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সাবিনা জাহান বলেন, কে বা কারা বারবার তার পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছে। এনডিএফের মনোনীত এ প্রার্থীর নামে কোনো মামলা নেই। পেশায় তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এসএসসি পাস এ প্রার্থী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- এনডিএফের কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। সাবিনা জাহান যুগান্তরকে জানান, মনোনয়ন পেতে তার কোনো সমস্যা না হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় তার নান সমস্যা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাবিবা চৌধুরী। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দলীয়ভাবেই তাকে মনোনীত করা হয়েছে বলে জানিয়ে হাবিবা বলেন, নির্বাচনে আগ্রহী পুরুষ প্রার্থী থাকলেও দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা সরে দাঁড়ান। দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেতে তাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় পুলিশ ও সরকার সমর্থিতদের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান তিনি। হাবিবা বলেন, আমার পোস্টার, ব্যানার খুলে ফেলা হচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা কম। তারপরও যেসব নারী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে খবর পাচ্ছি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচনের অনেক ক্ষমতা দেয়া আছে। কমিশনের উচিত দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।  

No comments:

Post a Comment