Tuesday, April 21, 2015

মামলার তথ্য লুকিয়ে নির্বাচনে ৬০ প্রার্থী:কালের কন্ঠ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নবী সোলায়মান। হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, চুরি, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মোট ৯টি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুটি হত্যা মামলা বিচারাধীন বলে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পুলিশ প্রশাসন যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। অথচ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় নবী সোলায়মান ত
াঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না, এমনকি বর্তমানেও কোনো মামলা নেই বলে উল্লেখ করেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নবী সোলায়মান রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার একজন চিহ্নিত দখলবাজ ও সন্ত্রাসী। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাপা হয়েছে। অথচ তিনি নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হওয়ার তথ্য গোপন করেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। পুলিশের তৈরি করা তালিকা থেকে দেখা যায়, ২০০৩ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরো মামলা ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা উত্তরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন দেলোয়ার হোসেন দুলু। এই প্রার্থীর নামে রাজধানীর কয়েকটি থানায় মোট ২৯টি মামলা রয়েছে। অথচ তিনি তাঁর হলফনামায় মাত্র দুটি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাহ উদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেলোয়ার হোসেন দুলুর বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় ২৫টির বেশি মামলা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে।' পল্লবী এলাকায় ডিএনসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলা। তাঁর বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু এ প্রার্থী তাঁর হলফনামায় কোনো মামলার তথ্য উল্লেখ করেননি। এঁদের মতো আরো ঘটনা রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমপক্ষে ৬০ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার তথ্য গোপন করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে রয়েছেন ১৮ জন ও ঢাকা দক্ষিণে রয়েছেন ৪২ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। এমনকি কোনো কোনো প্রার্থী অস্ত্র মামলায় এর আগে দণ্ডিত হলেও সেই তথ্য সম্পূর্ণ গোপন করেছেন হলফনামায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। পুলিশ প্রশাসন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তালিকা নির্বাচন কমিশনে সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে। তবে এই তালিকা শুধু সংগ্রহ করেই রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে তাঁদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়া হলে মনোনয়নপত্র বাতিল করার বিধান রয়েছে, কিন্তু মনোনয়নপত্র গ্রহণ করলে আর কিছু করা যায় না। এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যারা তথ্য গোপন করেছে তারা নির্বাচিত হলেও যোগ্য হবে না। ভোটারদের উচিত ওই সব প্রার্থীদের বয়কট করা। নির্বাচিত হওয়ার আগেই প্রতারণা করলে পরে তারা কী করবে তা সহজেই বোঝা যায়।' উত্তরের গোপনকারীরা : ডিএনসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি এম কফিল উদ্দিন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। এই প্রার্থী তাঁর বিরুদ্ধে থাকা ৯টি মামলার মধ্যে দুটির উল্লেখ করেছেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে স্বপ্না আহমেদ নির্বাচন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা থাকলেও তিনি দুটির কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম লাবুর বিরুদ্ধে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় মামলা নম্বর ৯(১১)১৩, ৫০(১)১৫ ও ৩১(২)১৫ রয়েছে। কিন্তু এই প্রার্থী তাঁর হলফনামায় কোনো মামলার কথা উল্লেখ করেননি। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মারুফ হাসান স্বপনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সাতটি মামলা থাকলেও তিনি দুটির তথ্য দিয়েছেন। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হাবিব উল্লাহর বিরুদ্ধে বনানী থানায় ৬(১)১৫, ১৩(১)১৫ ও ১(৩)১৫ নম্বরের মোট তিনটি মামলা থাকলেও হলফনামায় তিনি তা চেপে গেছেন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম মোস্তাফা বাড্ডা থানায় মামলা নম্বর ৪৭(৯)১৩-এর তথ্য গোপন করেছেন। একই ওয়ার্ডের আব্দুল মান্নান পাঁচটি মামলার মধ্যে তিনটির উল্লেখ করেছেন। এ ওয়ার্ডে বাড্ডা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ জি এম শামসুল হক তাঁর হলফনামায় ২০১৩ সালের তিনটি মামলার উল্লেখ করলেও চলতি বছরে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চারটি মামলার তথ্য দেননি। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাহমুদুল আলম মন্টুর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা থাকলেও তিনি তিনটি দেখিয়েছেন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আদাবর এলাকার প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা নম্বর ৫০(৪)২০০৯ থাকলেও তিনি তা জানাননি। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা নম্বর ৪০(২)১৫ থাকলেও তিনি তা প্রকাশ করেননি। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাইদ ব্যাপারীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা থাকলেও তিনি একটি মামলার কথা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। দক্ষিণের গোপনকারীরা : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মাজেদ মিয়াকে ২০০৫ সালে কামরাঙ্গীরচর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা নম্বর ৫(১০)-এ ঢাকার সংশ্লিষ্ট আদালত ১৭ বছরের সাজা দিয়েছেন। কিন্তু এই প্রার্থী তাঁর হলফনামায় এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়টি গোপন করেছেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডে নিছার উদ্দিন আহমেদ কাজল অব্যাহতি পাওয়া একটি মামলার তথ্য দেননি। একই ওয়ার্ডের প্রার্থী ফারুক উল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা থাকলেও তিনি পাঁচটি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী মো. মামুনুর রশিদ আখন্দের বিরুদ্ধে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। কিন্তু তিনি হলফনামায় চারটির তথ্য দিয়েছেন। একই ওয়ার্ডে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা নম্বর ১২(১)১৫ থাকলেও তিনি তা হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এ ওয়ার্ডের হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তিনি একটি গোপন করেছেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী মো. সেলিম তাঁর বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানার মামলা নম্বর ১২(১)১৫-এর তথ্য গোপন করেছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মোরসালিন তাঁর বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মামলা নম্বর ৬(১)১৫ থাকলেও তিনি তা গোপন করেছেন। একই নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কমিশনার গোলাম হোসেন সবুজবাগ থানার ৬(১)১৫ নম্বর মামলার তথ্য হলফনামায় দেননি। এ ওয়ার্ডের প্রার্থী হারুন অর রশিদ সবুজবাগ থানায় ১৮(১১)১৩, ১৬(১১)১৩ ও ৬(১)১৫ নম্বরের তিনটি মামলা থাকার পরও তা গোপন করেছেন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মো. হামিদুল হক সবুজবাগ থানার মামলা নম্বর ৬(১)১৫ উল্লেখ করেননি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. কফিল উদ্দিন চারটি মামলার মধ্যে তিনটির তথ্যই গোপন করেছেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে বা ছিল। কিন্তু তিনি মাত্র দুটি মামলার তথ্য দিয়েছেন হলফনামায়। একই ওয়ার্ডে মকবুল আহমেদ আকন্দ ছয়টি মামলার আসামি হয়েও সবই হলফনামায় গোপন করেছেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মোশারফ হোসেন চঞ্চলের বিরুদ্ধে সাত মামলা থাকলেও সব গোপন করেছেন তিনি। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ সেকান্দার আলী একটি মামলার তথ্য গোপন করেছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জাফর মো. সাদেকুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় দায়ের মামলা নম্বর ৭(১২)১৩ ও ১০(১১)১৩-এর তথ্য হলফনামায় দেননি। একই ওয়ার্ডের মো. সিরাজুল ইসলাম পাঁচটি মামলার মধ্যে দুটির তথ্য গোপন করেছেন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. জাহাঙ্গীর আলমের নামে ১৪টি মামলা থাকলেও পাঁচটি উল্লেখ করে তিনি ৯টির তথ্য চেপে গেছেন। একই ওয়ার্ডে এ কে এম জুবায়ের এজাজ তিনটি মামলার তথ্য গোপন করেছেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মুন্সী কামরুজ্জামান কাজলের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা নম্বর ১৫(১)২০০৭-এর তথ্য গোপন করেছেন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিব ২০০৩ সালের ২ আগস্ট একটি অস্ত্র মামলায় ২৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তিনি হলফনামায় ওই তথ্যটি গোপন করেছেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মো. তরিকুল ইসলাম সবুজের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানা মামলা নম্বর ৮(১)১৩-এর তথ্য তাঁর হলফনামায় নেই। ২৪ নম্বর ওয়াডের্র শফি উদ্দিন সেন্টু ১৩ মামলার মধ্যে সাতটির তথ্য দিয়েছেন। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি আলতাফ হোসেনও আট মামলার মধ্যে চারটির তথ্য গোপন করেছেন। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে মো. টিপু সুলতান ছয় মামলার আসামি হয়েও তিন মামলার কথা চেপে গেছেন। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ মো. আবেদ উদ্দিন ১৫ মামলার আসামি হয়ে তিনটির তথ্য দিয়ে ১২টি গোপন করেছেন। একই ওয়ার্ডের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর হলফনামায় পুরনো মামলার তালিকায় চার মামলার তথ্য দেননি। এ ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মামুন আহমেদ ১৭টি মামলার তথ্য গোপন করেছেন। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদল নেতা মো. ইয়াকুব সরকার ১৬ মামলার তথ্য গোপন করেছেন। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ বি এম পারভেজ রেজা তাঁর নামের পাঁচ মামলার কথা জানাননি। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক কমিশনার মকবুল ইসলাম খান টিপু গেণ্ডারিয়া থানায় মামলা নম্বর ৬(১)১৫-এর তথ্য গোপন করেছেন। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হাজি লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে পাঁচ মামলা থাকলেও তিনি তিনটির তথ্য দিয়েছেন। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাজী মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তিন মামলা থাকলেও তিনি একটির তথ্য দিয়েছেন। একই ওয়ার্ডে গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু অব্যাহতি পাওয়া তিন মামলার তথ্য উল্লেখ করেননি। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জাহাঙ্গীর আলম ১২ মামলার আসামি হয়ে মাত্র একটির তথ্য দিয়েছেন। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে হাজি দেলোয়ার হোসেন খান যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা নম্বর ৫৮(১)১৫-এর তথ্য গোপন করেছেন। একই ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী মো. আল আমিন চার মামলার তথ্য হলফনামায় দেননি। ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে কাজী হাবিবুর রহমান হাবু তাঁর বিরুদ্ধে অব্যাহতি পাওয়া একটি মামলার কথা উল্লেখ করেনি। ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে রবিউল ইসলাম কদমতলী থানার ২৯(১)১৫ ও ৫(১)১৫ নম্বর মামলার তথ্য গোপন করেছেন। ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদুল ইসলাম কামরাঙ্গীরচর থানায় ৯(১)১৫, ৮(৭)১২ ও ৬(১১)১৩ নম্বরের তিনটি মামলার কথা সম্পূর্ণ গোপন করেছেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ১০টি মামলা থাকলেও তিনি পুরোপুরি তা গোপন করেছেন। এ ব্যাপারে মোসলেহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এগুলো রাজনৈতিক মামলা হওয়ায় তা উল্লেখ করিনি। তা ছাড়া সব মামলার তথ্যও আমার জানা ছিল না।'

No comments:

Post a Comment