Sunday, April 26, 2015

দিদার পর পর তিনবার:প্রথম অালো

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলায়ও লেগেছিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উত্তাপ। গতকাল শনিবার লালদীঘি ময়দানের বলীখেলা ও মেলায় বাঁশি, ঢোল ও নাগরদোলার শব্দ ছাপিয়ে কানে লাগছিল প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৭৮ বলীর দু-একজনের হাতেও দেখা গেছে নির্বাচনের প্রতীক চিহ্নিত হাতপাখা। এসব ডামাডোলের মধ্যে এবারও চাম্পিয়ন হলেন কক্সবাজারের রামুর দিদার বলী। এ নিয়ে পর পর তিনবার শিরোপা জিত
লেন তিনি। প্রতিযোগিতায় এবারের ১০৬তম আসরের ফাইনালে মাত্র সাড়ে তিন মিনিটের লড়াইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলি বলীকে পরাস্ত করেন দিদার। একক ও যুগ্মভাবে সব মিলিয়ে দশম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এর আগেই ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন অলি। এবারের আসরে মোট ৭৮ জন বলী নাম তালিকাভুক্ত করেন। সেমিফাইনালে নারায়ণগঞ্জের হাবিব বলীকে পরাজিত করেন দিদার। আর কক্সবাজারের শহীদ বলীকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন অলি। এবারের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৯ বছরের বৃদ্ধ রাঙ্গুনিয়ার নুরুচ্ছফা যেমন ছিলেন তেমনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ফাহাদ ইসলামও বলী ধরেছেন। মিজান নামে আরেক তরুণকে হারিয়ে উচ্ছ্বসিত ফাহাদ। তিনি বলেন, ‘আমি এমনিতে কৌতূহলবশত অংশগ্রহণ করেছি। জিতে ভালোই লাগছে।’ আর নুরুচ্ছফার দাবি এ নিয়ে ৩০ বার তিনি জব্বারের বলীখেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বলীখেলার টানে প্রতিবার বাড়ি থেকে এখানে চলে আসি।’ তিনি হেরেছেন শহীদ বলীর কাছে। তবে আগত মানুষের অপেক্ষা ছিল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য। ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে সেমিতে জয়ী দুই বলী দিদার ও অলি এগিয়ে যান মঞ্চের (রিং) দিকে। দুই মিনিটের মাথায় অলিকে একবার কাবু করলেও ফেলতে পারেননি দিদার। শেষে তিন মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে অলিকে হটিয়ে দিদার চ্যাম্পিয়ন হন। দিদার বলেন, ‘আমি নিয়মিত অনুশীলন করে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। এটা আমার নেশা। ছোটবেলা থেকেই এই বলীখেলা আমাকে টানে।’ শতবর্ষী এই বলীখেলার সাক্ষী হতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন তরুণ, বৃদ্ধ সবাই। মঞ্চ বা রিংয়ের আশপাশে ছিল ভিড়। পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের ভবনের আশপাশ এমনকি জেলা পরিষদ মার্কেটের ছাদে পর্যন্ত উৎসুক দর্শক। এর আগে বিকেলে বেলুন উড়িয়ে আবদুল জব্বার স্মৃতি শতবর্ষী বলীখেলার উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী সভায় অতিথি ছিলেন নগর পুলিশের উপকমিশনার কামরুল আমিন, বাংলালিংকের আঞ্চলিক প্রধান সৌমেন মিত্র, মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার প্রমুখ। অতিথিরা চ্যাম্পিয়ন, রানারআপসহ সব বিজয়ী বলীর হাতে মেডেল ও পুরস্কার তুলে দেন। চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপকে যথাক্রমে ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বলীখেলা আমাদের চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে আমরা প্রতিবার এখানে মিলিত হই।’ ১৯০৯ সালে স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই কুস্তি প্রতিযোগিতা বা বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার সূচনা করেন। ক্রমে এই খেলা ও মেলাটি এই অঞ্চলের প্রাণের মেলায় রূপ নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক বছর বলীখেলা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। বলীখেলা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও লালদীঘির পাড় ও আশপাশের প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় তিন দিনব্যাপী মেলা বসেছে। মেলায় ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী, আসবাব, পিতল, থালা-বাসন, তামা লোহা, দা, খুন্তি, ফল, খাবার, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র ইত্যাদি সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। আজ রোববার মেলার শেষ দিন।

No comments:

Post a Comment