Monday, April 20, 2015

টাইগারদের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়:যুগান্তর

কাল প্রায় সারাদিন মেঘেঢাকা সূর্য উঁকি দিয়েছে কদাচিৎ। আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও শাওন ধারা ঝরেনি। রবিবাসরীয় রজনীতে ঝরল জয়োধারা। দীর্ঘ ১৬ বছরের খরা ঘুচিয়ে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। নাকি বৈশাখী জয়। বৈশাখ ঝড় নিয়ে আসে। এই সিরিজও ঝড় নিয়ে এলো। তামিম ঝড়। সেই ঝড়ে উড়ে গেল পাকিস্তান। তামিমের টানা দ্বিতীয় শতকে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। সেই হিরন্ময় সাফল্য এলো সাত উইকেটের মধুর জয়ে।
inum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'> বাংলাদেশ তখন জয় থেকে ৫৭ রান দূরে। তখনই বিদ্যুৎ বিভ্রাট। গোটা স্টেডিয়াম ডুবে গেল আলো আঁধারিতে। দৃশ্যটা প্রতীকী। লাল-সবুজের দেশ আলোয় উদ্ভাসিত। প্রতিপক্ষ নিমজ্জিত আঁধারে। ফ্লাডলাইটে সমস্যার দরুন ১৫ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। বাংলাদেশের প্রত্যাশিত জয় তাতে বিলম্বিত, বিঘ্নিত হয়েছে। অতিথিদের এটুকু সান্ত্বনা। মাশরাফিদের আত্মবিশ্বাস যেভাবে আকাশ ছুঁতে চাইছে, তাতে ২৪০ করে জেতা ছিল সময়ের ব্যাপার। আবারও তামিম-মুশফিক যুগলের ব্যাটিং ঐশ্বর্যে প্রায় ১২ ওভার বাকি থাকতে বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণ করে। তামিম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১১৬ বলে ১১৬ রান করে। ১৭টি চার ও একটি ছয় তার ম্যাচজয়ী ইনিংসটিকে মাধুর্যমণ্ডিত করে তোলে। মুশফিকুর রহিমের (৬৫) সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ১১৮ রান যোগ করে ম্যাচসেরা তামিম নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের প্রত্যাশিত সিরিজ জয়। প্রথম ওডিআইতে তামিম ও মুশফিক দু’জনই সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ম্যাচসেরা মুশফিকুর পুরস্কার নিতে এসে বলেছিলেন, তার ম্যান অব দ্য ম্যাচ তামিম। মুশফিকুরের ইচ্ছাপূরণ হল এবার তামিম ম্যাচসেরা হওয়ায়। যিনি বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন কাল। কখনো কভার দিয়ে, কখনো বা ডিপ স্কোয়ার লেগ দিয়ে বল দড়ির ওপারে পাঠিয়েছেন তিনি। নবম ওভারে সাঈদ আজমলের শেষ তিন বলে তিনটি চার এবং পরের ওভারে ওয়াহাব রিয়াজকে চার মেরে তামিম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাত্র ৩১ বলে। কোনো সন্দেহ নেই, মিরপুরে এদিন তামিম ইকবালের একক প্রদর্শনী হয়ে গেল। ৭৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানো পাকিস্তান ২৩৯-এ পৌঁছে সাদ নাসিম ও ওয়াহাব রিয়াজের অর্ধশতকের ইনিংসে। ২৪০ তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ ১৫তম ওভারে হারায় বিশ্বকাপে জোড়া সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহকে। এরপর ক্রিজে আসেন মুশফিকুর। তামিম পেয়ে যান তার প্রার্থিত জুটি। আজমলকে ছয় মারার দুই ওভার পর মুশফিক রাহাত আলীকে পরপর তিনটি চার মেরে তার অধিনায়কের কথার সত্যতা প্রমাণ করেন। আগেরদিন মাশরাফি বলেছিলেন, ‘মুশফিকুর হলেন বাংলাদেশ দলের রানমেশিন।’ এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে নিজের ১৫০তম ওডিআই খেলতে নামা মাশরাফি নির্ভার হলেন তার দুই প্রিয় সৈনিক তামিম-মুশফিকের ব্যাটে। পাকিস্তান এই ম্যাচেও কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। সাময়িক প্রতিরোধ গড়েছিল বিদ্যুৎ বিভ্রাট। আজহার আলীরা নিশ্চয় চাননি যে, আঁধার কেটে যাক। কিন্তু কী আর করা। অন্ধকারই যে তাদের ললাট লিখন। প্রথম ম্যাচে হারের পর গুঞ্জন ছিল পাকিস্তান একাদশে দুটি পরিবর্তন আসবে। অথচ রোববার তারা আগের দল নিয়েই মাঠে নামল। জয়ী বাংলাদেশ দলের একটি পরিবর্তন আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল। আবুল হাসানের জায়গায় ফিরবেন মাশরাফি। আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছে, কালও সারা দিন ছিল মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি চোখ রাঙাচ্ছিল শুরু থেকেই। টস জিতে তাই ব্যাটিং নিতে দ্বিধা করেনি পাকিস্তান। তবে প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা শুরুতে যেটা করে দেখিয়েছেন, কাল বোলাররা সুযোগ পেয়ে সেটাই করে দেখালেন। অপেক্ষাকৃত স্বল্প রানে বেঁধে ফেললেন পাকিস্তানকে।    টস জয়ের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক আজহার আলী দেখেশুনেই শুরু করেন। প্রথমদিকে বাংলাদেশের বোলিং দেখে মনে হয়নি কী ম্যাজিক লুকিয়ে আছে এই উইকেটে। প্রথম ছয় ওভারে মাশরাফি ও তাসকিন ২৯ রান দেয়ার পরই বোলিংয়ে পরিবর্তন আনা হয়। আরাফাত সানির সঙ্গে রুবেল হোসেন। এই যুগলবন্দি ভালোভাবেই কাজে লেগে যায়। বিশ্বকাপ থেকে রুবেল দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করছেন। কাল প্রথম বলেই রুবেলের তুখোড় বাউন্সে সরফরাজ আহমেদ স্লিপে ক্যাচ ওঠাতে বাধ্য হন। ওভারের বাকি পাঁচটি বলেও গতি আর বাউন্সে দর্শকদের মন কেড়ে নেন রুবেল। একটু পরেই পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজকে সরাসরি বোল্ড করে আরাফাত সানি বুঝিয়ে দিলেন এটা শুধু পেসারদেরই উইকেট না। রুবেল-আরাফাতের দুর্দান্ত সূচনায় মুহূর্তেই ম্যাচের লাগাম হাতে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ২২ ওভারের মধ্যেই ৭৭ রানে পাকিস্তানের পাঁচ উইকেটের পতন ঘটে। ততক্ষণে নাসির ও সাকিব তুলে নেন একটি করে উইকেট। পাকিস্তান কি ১৫০ করতে পারবে! জবাবের অপেক্ষায় টাইগারভক্তরা। প্রতিপক্ষকে আরও চাপে ফেলতে ফিল্ডিংয়েও পরিবর্তন আনেন মাশরাফি। আইসিসির নতুন নিয়মে চারজন ফিল্ডারকে বৃত্তের বাইরে রাখতে হয় বলে এমনিতেই বোলারদের পক্ষে রান নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে মাশরাফি বৃত্তের বাইরে রাখলেন মাত্র দু’জন ফিল্ডার। পাঁচ উইকেট হারানোর পর সফরকারী দল ১০০ পার করেছে ২৯ ওভারে গিয়ে। ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানকে তখন আশার আলো দেখিয়ে চলেছেন হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম। ৭৭ রান তুলে নেয় এ জুটি। প্রথম স্পেলে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফি। তবে পাওয়ার প্লেতে নিজেই বল তুলে নিয়ে হারিস সোহেলকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তান এক উইকেটে হারিয়ে তোলে ৪৪ রান। মাশরাফি শেষদিকে কাকে রেখে কাকে বল করাবেন, এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছেন। তবে হারিস সোহেলের পর আর কোনো উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। শেষ ১১ ওভারে তারা তুলে নেয় ৮৫ রান। সাদ নাসিমের সঙ্গে তখন রানের গতি বাড়িয়েছেন পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। ৪০ বলে পাঁচ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৯৬ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন সাদ নাসিম। একসময় দেড়শ’ রানের মধ্যে অলআউট হওয়ার আশংকায় থাকা পাকিস্তান পৌঁছে যায় ২৩৯ রানে। শেষদিকে স্পিনাররা রান দিতে থাকলেও রুবেল হোসেনকে ডেথ ওভারে বল দেননি মাশরাফি। রুবেলের বাকি ছিল তিন ওভার। এছাড়া মাশরাফি ও তাসকিনের থেকে যায় দুটি করে ওভার। সাকিব দুটি উইকেট নেন। একটি করে ঝুলিতে পুরেছেন রুবেল, মাশরাফি, নাসির ও আরাফাত সানি।  

No comments:

Post a Comment