Wednesday, April 22, 2015

আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি:যুগান্তর

ঢাকার উপকণ্ঠে আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মি স্টাইলে সশস্ত্র ডাকাত দল ব্যাংকে গ্রেনেড ফাটিয়ে ও গুলি ছুড়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করে। এতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ নিহত হয়েছেন আটজন। আহতের সংখ্যা ২০। গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯-এ। আহতদের ১৬ জনকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।
প্রাথমিক তথ্যমতে ডাকাতরা ৩৫ লাখ টাকা লুট করে। জনতার হাতে আটক ডাকাতদের কাছ থেকে লুটের ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংকের ভেতরে লাগানো দ্ুিট সিসি ক্যামেরা পুলিশ জব্দ করেছে। তবে এ ব্যাপারে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক মো. সোহেল যুগান্তরকে বলেন, তাদের কাউন্টারে ৭ লাখ টাকা ছিল। সেখান থেকে ৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্টে হানা দিতে পারেনি। তিনি বলেন, আজও ব্যাংকের শাখা খোলা থাকবে। ব্যাংকের সামনে নিহত ম্যানেজারের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় জনগণ ডাকাত দলটিকে ধাওয়া করে তাদের তিন সদস্যকে আটক করে। এর মধ্যে একজন গণপিটুনিতে মারা যায়। অন্যরা পালিয়ে গেছে। পালানোর সময় ডাকাতরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে এবং বোমা ফাটায়। ডাকাত দলের আটক দু’জনের মধ্যে একজন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে আছে। অপরজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। তার নাম বোরহান উদ্দিন মৃধা। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ। সে শিবিরকর্মী বলে জানিয়েছেন এএসপি মো. রাসেল শেখ। ডাকাতদের গুলি ও বোমার আঘাতে নিহতরা হলেন- ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অলি উল্যাহ (৪০), নিরাপত্তাকর্মী ইব্রাহীম (৩৯), ব্যাংকের গ্রাহক মো. পলাশ (৫৫), মুদি দোকানি মনির (৬০), স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপের মালিক জিল্লুর রহমান (৪০), পথচারী জামিল, চাল ব্যবসায়ী নূর হোসেন, অজ্ঞাত একজন এবং ডাকাত দলের এক সদস্য। ঘটনার পরপর নিহতদের স্বজন ও ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের পাশে উপস্থিত হন। এ সময় তাদের কান্না ও আহজারিতে হাসপাতালে শোকের ছায়া নেমে আসে। এনাম মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ারুল নাজিম জানান, নিহতদের লাশ সুরতহাল শেষে পুলিশের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। ডা. এনামুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে সাভারে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে সাভার ও আশুলিয়ায় পরপর দু’দিন ডাকাতির ঘটনা রহস্যজনক। তিনি বলেন আটক ডাকাতকে জিজ্ঞাবাদ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক ডাকাতি এবং ডাকাতদের এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমা ফাটানোর ঘটনায় সাভার এলাকাজুড়ে আতংক বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা আতংকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। এলাকাজুড়ে র‌্যাব, পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও আতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া ডাকাতদের গ্রেফতারে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। তবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার তরিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, তিনি ব্যাংকের ভেতর থেকে দেখেছেন দুপুর ২টার দিকে তিনটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাংকের সামনে আসে। তারা গ্রাহক বেশে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে। এরপর তারা ব্যবস্থাপক ওয়ালিউল্লাহকে গ্রেনেড দেখিয়ে জিম্মি করে ভল্টের চাবি চায়। কিন্তু ব্যবস্থাপক তা দিতে অস্বীকার করলে দুর্বৃত্তরা তাকে ও গানম্যানকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় জনগণ এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের ভেতরেই গ্রেনেড ফাটায় এবং গুলি চালিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এ সময় তারা ক্যাশ থেকে টাকা লুটে নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ব্যাংকের ভেতর থেকে গ্রেনেড, গুলি ও চিৎ?কার শুনে আশপাশের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন। তারা ব্যাংকটি ঘেরাও করে দুর্বৃত্তদের আটক করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ডাকাতরা গুলি চালাতে চালাতে ও গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে বের হয়ে যায়। এ সময় জনতা দুটি মোটরসাইকেল ধাওয়া করে ২ জনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ জানান, পালানোর সময় ডাকাতরা ২০টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে ৩টি বিস্ফোরিত হলেও ১৭টি গ্রেনেড অক্ষত অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকে। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলায় ২০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মহিউদ্দিনও ঘটনা সম্পর্কে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের বাইরে হাঁটার সময় দেখেন দুপুর আড়াইটার দিকে ৬টি মোটরসাইকেলযোগে ১২-১৫ জনের একদল লোক গ্রাহক বেশে ওই ব্যাংকে প্রবেশ করে। এ সময় কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ব্যাংকের অভ্যন্তরে ম্যানেজারসহ কর্মকর্তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। তিনি পরে বুঝতে পারেন ওই লোকগুলোই ডাকাত দলের সদস্য। তারা একপর্যায়ে ব্যাংকের ভেতর বোমা ও গুলি ছুড়ে আতংক সৃষ্টি করে লুটপাট শুরু করে। ক্যাশের ভোল্ট ভাঙতে না পেরে ডাকাতরা ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের ওপর বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে এবং ব্যাংকের ভেতরে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। গুলি ও বোমায় ব্যাংকের ভেতরে ঘটনাস্থলেই মারা যান শাখা ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহসহ এক নিরাপত্তাকর্মী। তিনি বলেন, ডাকাতরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় জনতা দু’জনকে আটক করে এবং তাদের গণধোলাই দেয়। এ সময় এক ডাকাত নিহত হয়। পুলিশ এক ডাকাতকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তার কাছ থেকে লুটের ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে ব্যাংকটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। ডাকাত দলের সদস্যরা এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লুটে নিয়েছে নগদ টাকা।  

No comments:

Post a Comment