Tuesday, April 28, 2015

পর্যটক হারানোর ঝুঁকিতে নেপাল:প্রথম অালো

রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার প্রচণ্ড ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকে হিমালয় দুহিতার বুকজুড়ে এখন শোকের মাতম। নেপালে ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর চলছে উদ্ধার তৎপরতা। সময় যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ লন্ডভন্ড করে দিয়েছে নেপালের রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকাকে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে মারাত্মক। শনিবারের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে কেবল কয়েক হাজ
ার মানুষের প্রাণই যায়নি—এতে নেপাল নামের উন্নয়নশীল দেশটির প্রধান নির্ভরতা যে পর্যটনশিল্পের ওপর, তা-ও বিরাট ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এর জের টানতে হবে দেশের অর্থনীতিকে। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার প্রচণ্ড ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকে হিমালয় দুহিতার বুকজুড়ে এখন শোকের মাতম। নেপালে ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর চলছে উদ্ধার তৎপরতা। সময় যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। শনিবারের ভূমিকম্পের পর একের পর এক পরঘাত অনুভূত হচ্ছে। এতে শুধু উদ্ধার তৎপরতাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, এটি বড় বিপর্যয়ের সংকেত দিচ্ছে দেশের অর্থনীতির জন্য। যারা বেঁচে আছে তাদের এখন ভুগতে হবে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে একটি পর্যটন কোম্পানির এজেন্ট ভূমিকম্প আঘাত হানার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ১০০০টি আগাম বুকিং পেয়েছিলেন। গত রোববার ৯০ শতাংশ পর্যটকই বুকিং বাতিল করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি, মৃতের সংখ্যা এখন যেমন প্রতি ক্ষণে বাড়ছে, এর সঙ্গেই বাড়বে এভাবে বুকিং বাতিলের সংখ্যা। নেপালের পর্যটনশিল্প অনেকাংশে নির্ভর করে দেশটির অবকাঠামোর ওপর। ভূমিকম্পে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির অবকাঠামো খাত। আগামী কয়েক সপ্তাহে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে নেপালে আসা যাত্রীদের তালিকায় থাকবেন বিভিন্ন বিদেশি ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তা, কর্মী আর বিদেশি সাংবাদিকেরা। তবে যেসব ফ্লাইট নেপাল ছাড়বে এর তালিকায় থাকবে বিপুলসংখ্যক পর্যটক। তাঁরা ভয়াল এ ভূমিকম্পের স্মৃতি নিয়ে ফিরে যাবেন যার যার দেশে। নেপালে কাজ করা বিদেশি পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জরুরি ভিত্তিতে তাদের পর্যটকদের দেশে ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানবিক বিপর্যয়ে আক্রান্ত এই অঞ্চল থেকে সবাই এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। ব্রিটিশ পর্যটক সংস্থা এক্সোডাস কাঠমান্ডু থেকে তাদের সব পর্যটককে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে। এরা তাদের গ্রাহকদের খোলা মাঠে পাতা তাঁবুতে রেখেছে। নতুন ভূমিকম্পের আশঙ্কায় তারা হোটেলে রাখছে না পর্যটকদের। নেপালে এখন চলছে বাঁচা-মরা আর তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বিশেষ করে যেসব মানুষ পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল তাদের পরিস্থিতি সঙ্গীন হয়ে পড়বে। বিদেশি অনেক পর্যটন প্রতিষ্ঠানই নেপালে আগামী কয়েক মাসের সব বুকিং বাতিল করেছে। আবার পর্যটনসহায়ক পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এরা ফিরছেন না। সত্যি বলতে, নেপালে এমন পরিস্থিতি কখনোই বিরাজ করবে না যখন বলা যাবে, এটাই সবচেয়ে নিরাপদ সময়। দেশটির অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল ব্যবস্থা সুবিধার নয়। সেখানে অতীতে অনেক বিদেশি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অশান্ত ছিল দীর্ঘদিন ধরে। নিরাপত্তার জন্য অনেক জায়গায় পর্যটকদের টাকা গুনতে হয়। নেপালে এবারের ভূমিকম্পে একটি বড় আঘাত এভারেস্টে পর্বতারোহীদের তুষার ধসে মৃত্যুর ঘটনা। তবে দেশি-বিদেশি পর্বতারোহীরা এভারেস্টের টানে এখানে ছুটে আসবেনই, তা বলা যায়। আগামী বছর নেপালের অর্থনীতিতে হাজার হাজার ডলার ঢালবেন এসব পর্বতারোহী। দেশটিতে শুধু ব্রিটিশ পর্যটকই আসে বছরে ৪০ হাজার। এদের বেশির ভাগই সুপরিচিত স্থানগুলোতে ট্রেকিং করে। নেপালের নিম্নভূমির বন্য প্রাণী তাদের আরেক আকর্ষণ। প্রায় কোনো পর্যটকই একটি জায়গায় বেড়ানো বাদ দেন না। সেই আকর্ষণের জায়গাটি হলো ইতিহাসের উজ্জ্বল নিদর্শনে ভরা প্রাণবন্ত রাজধানী কাঠমান্ডু। এখন এই ইতিহাসসমৃদ্ধ নগরের প্রায় সবটাই বিপর্যস্ত। ত্রাণ তৎপরতার চেয়ে নেপালের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে বিদেশি পর্যটকদের ফিরে আসার পরিস্থিতি তৈরি করা। সূত্র: দি ইনডিপেনডেন্ট

No comments:

Post a Comment