Friday, April 24, 2015

সরকার ও আ. লীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া:কালের কন্ঠ

ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে বারবার হামলার ঘটনায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ মনে করেন খালেদার আক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ তাঁর ওপর হরতাল-অবরোধে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীনদের আরেকটি অংশ মনে করে, খালেদা জিয়া আক্রান্ত হওয়ার ফলে জনমনে সরকারের বিরুদ্ধ
ে একটি বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে। জনগণ ধরে নেবে, এ হামলার পেছনে সরকারের ইন্ধন আছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'খালেদা জিয়ার ওপর হামলা সরকার বা আওয়ামী লীগ কেউই সমর্থন করে না। এ কাজকে আমরা উৎসাহিতও করি না। যেকোনো নেতার ওপর হামলার বিরুদ্ধে আমরা। যারা এর সঙ্গে জড়িত সরকার তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে একই সঙ্গে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে খালেদা জিয়াকে গাড়িবহর নিয়ে মহড়া বন্ধ করতে হবে। তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গাড়িবহর নিয়ে মহড়া দিয়ে উসকানি দিচ্ছেন। এতে করে হরতাল-অবরোধে ব্যবহৃত পেট্রলবোমার আগুনে পোড়া মানুষরা বিক্ষুব্ধ হচ্ছে।' খালেদা জিয়ার প্রচারণায় নামা উচিত হয়নি মন্তব্য করে নাসিম বলেন, 'শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছিল। সব দলের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। কেউ কাউকে বাধা দেয়নি। কিন্তু উনি মাঠে নেমেই সব এলোমেলো করে দিচ্ছেন। মাঠে নামার আগে তাঁর সন্ত্রাসের শিকার যারা হয়েছে তাদের কী প্রতিক্রিয়া হবে তা ভাবা উচিত ছিল।' তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, 'খালেদা জিয়া নিজেই একটি উসকানির বস্তু। সাম্প্রতিককালে তিনি জঘন্য আগুনযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশে পোড়া মানুষের স্তূপ তৈরি করেছেন। তিনি নিজেই উত্তেজনা সৃষ্টিকারী। সুতরাং তাঁর স্থান-কাল-পাত্র জ্ঞান থাকা উচিত। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে উনাকে দেখলেই মানুষের ক্ষোভ হতে পারে। উনার ধৈর্যশীল হওয়া উচিত, ঘরের ভেতর বসে থাকাই মঙ্গলজনক উনার জন্য।' গতকাল বুধবার তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিন মাস লাগাতার জ্বালাও-পোড়াও করে খালেদা জিয়া আপাতত এ পথ থেকে সরেছেন। তিনি মানুষ হত্যা বাদ দিয়ে ভোট চাইতে নেমেছেন। এমন সময়ে যারাই হামলা করে থাকুক না কেন, এ ধরনের হামলা কাম্য নয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড খালেদা জিয়া করুক বা অন্য যে কেউ করুক তা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমাদের মতো দেশে নির্বাচনের আগে এমনটা একেবারেই হবে না তা ভাবা উচিত নয়।' বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়ে নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, 'তাঁর ভোট চাওয়ার অধিকার নেই, এটি বলব না। তবে তিনি যেভাবে গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণায় নামছেন তা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দুইবারের প্রধানমন্ত্রীর এভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন গ্রহণযোগ্য নয়।' ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'খালেদা জিয়া নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য মাঠে নেমেছেন। তিনি মাঠে নামার পর থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এত দিন আনন্দঘন ও উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ ছিল। কোথাও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু খালেদা জিয়া দুরভিসন্ধি নিয়ে প্রচারণায় নেমে সমস্যা তৈরি করছেন।' খাদ্যমন্ত্রী আরো বলেন, 'খালেদা যখন বুঝতে পেরেছেন নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থীর ভরাডুবি হবে, তখনই তিনি ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তিনি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চাইছেন। এ ছাড়া তিনি যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে।' ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয়কারী কর্নেল অব. ফারুক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শান্তিপূর্ণ একটি পরিবেশ তৈরি করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু খালেদা জিয়ার কারণে এ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তিনি ইচ্ছা করে এমনটা করছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে তাঁর আগুনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা প্রতিবাদ করবে, এটাই স্বাভাবিক। সব মানুষেরই ব্যথা-বেদনার অনুভূতি আছে।' সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান আরো বলেন, 'খালেদা জিয়ার ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মাত্র। এটিকে কোনোভাবেই হামলা বলা যায় না।' তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার ওপর হামলা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার সুযোগ তৈরি করবে। তিন মাসের লাগাতার কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সিটি নির্বাচনের আয়োজন করে সরকারই তাদের একটা পথ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া আপাতত তাঁর কর্মসূচি থেকে সরে এসেছেন। এখন এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা ঠিক হবে না যার মাধ্যমে তিনি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধির কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ নেতা প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামতে পারছেন না। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরেরও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে পুরোদমে মাঠে নামছেন না। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া প্রচারণায় নামায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খালেদার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করে বিগত দিনে তাঁর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে আলোচনায় আনতে পারলে আওয়ামী লীগ লাভবান হবে বলে মনে করেন দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নেমে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর চারবার হামলার শিকার হয়। সবশেষ গত বুধবার খালেদা জিয়া যে গাড়িতে ছিলেন, তাতেও হামলা হয়।

No comments:

Post a Comment