![](https://lh3.googleusercontent.com/-VTNFZRumBXk/VVaXJU5cYJI/AAAAAAAAN9I/bb5gqB0YBLI/01_222456.jpg)
্জ থেকে চারজনকে আটক করে। আজকালের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তার করা চারজন হলো গিয়াস, সাগর, মাহবুবুল ও আরিফ। আরিফ ও গিয়াসকে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে এবং সাগরকে কিশোরগঞ্জের ইটনা ও মাহবুবুলকে অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে আটক করা হয়। সাগর ও মাহবুবুলকে কিশোরগঞ্জ থেকে গতকাল সকালে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। যে দুজনকে পুলিশ খুঁজছে তাদের মধ্যে একজনের নাম মাসুদ। অন্যজনের নাম জানা যায়নি। জানা যায়, ব্যাংকের নৈশপ্রহরী মো. ইব্রাহিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনের একটি কলের সূত্র ধরে খুনিদের অবস্থান চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত ছয় অপরাধীকে শনাক্ত করে এর মধ্যে চারজনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে দুজন ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ কারণে ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া এবং জড়িতরা ঘটনার কথা স্বীকার করার পরও হঠাৎ করে পুলিশ নিশ্চুপ হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর গতকাল পুলিশের ওই কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। অনেকেই ফোনও ধরছেন না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছে গিয়াস। তার বাসা বাকলিয়া থানাধীন বগার বিল এলাকায়। সে ওই এলাকায় যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে কোনো সাংগঠনিক কমিটির কোনো পদে সে নেই। সে গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচিত সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরের অনুসারী বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনের মধ্যে চারজন সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে মাহবুব, সাগর ও মাসুদ ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। বাইরে ছিল গিয়াস। মাহবুব ও সাগর সরাসরি খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা হয় বগার বিল এলাকায় আরিফের বাসায়। বৃহস্পতিবার রাতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, খুনিদের উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকে ডাকাতি করা। সেটা করতে গিয়ে তারা নিরাপত্তারক্ষীকে খুন করেছে। উল্লেখ্য, গত ৭ মে রাতে নগরের আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুরাদপুর শাখা কার্যালয়ে ঢুকে গলা কেটে হত্যা করা হয় ব্যাংকের নৈশপ্রহরী মো. ইব্রাহিমকে (৩৪)। ওই রাতে ঘটনা ঘটলেও পরদিন ৮ মে রাতে পুলিশ ঘটনাটি জানতে পারে। ইব্রাহিম চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভার আলী আহমদের ছেলে। এ ঘটনায় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আলী নেওয়াজ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জড়িতদের মধ্যে চারজনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর সোমবার থেকে অভিযান শুরু করেন তাঁরা। প্রথম চট্টগ্রাম নগর থেকে আরিফ ও গিয়াসকে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাগর ও মাহবুবকে কিশোরগঞ্জ থেকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, ওই ব্যাংকে তারা চারজন মিলে ডাকাতি করতে গিয়েছিল। তিনজন ব্যাংকে প্রবেশ করে এবং একজন বাইরে ছিল। এ মামলার তদারকি কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম তানভীর আরাফাতের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার কুসুম দেওয়ান শুক্রবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অভিযান অব্যহত আছে। তদন্তের স্বার্থে এখন আসামিদের নাম-পরিচয় জানানো সম্ভব না। শনি-রবিবারের মধ্যে মিডিয়াকে বিস্তারিত জানানো হবে।' তিনজন মিলে নৈশপ্রহরী ইব্রাহিমকে গলা কেটে হত্যা : ব্যাংকের ভিডিও ফুটেজ এবং আরিফ ও গিয়াসকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ৭ মে রাত ২টা ২৪ মিনিটের দিকে ব্যাংকের পেছনের দিকের জানালার গ্রিল কেটে তিনজন ভেতরে ঢোকে। এই তিনজন হলো মাহবুব, মাসুদ ও সাগর। আর গিয়াস ব্যাংকের বাইরে তদারকি করছিল। পুরো ঘটনার নেতৃত্বে ছিল গিয়াস। তিনজন যখন ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে তখন ক্যাশ শাখার সামনে মেঝেতে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন নৈশপ্রহরী ইব্রাহিম। ব্যাংকে ঢুকেই ঘুমন্ত ইব্রাহিমের মাথায় আঘাত করে মাসুদ। আঘাতের পর ইব্রাহিম নড়েচড়ে উঠলে মাসুদ তাঁর মাথা ও মুখ চেপে ধরে। এ সময় মাহবুব তাঁর দুই পা চেপে ধরে। আর সাগর গলা কেটে হত্যা করে। এরপর সাগর নিহত ইব্রাহিমের মোবাইল ফোনসেটটি নিজের হেফাজতে নেয়। পরে তারা তিনজনই ব্যাংকের ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তারা জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসে। ব্যাংকের ভেতরে তারা ছিল ২৩ মিনিট। সব মিলিয়ে তাদের সময় লাগে ৪০ মিনিটের মতো। হত্যাকাণ্ডের পরের ঘটনা : নাম প্রকাশ না করে গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর মাহবুব ও মাসুদ যায় বাকলিয়া থানাধীন বগার বিল মৌসুমী বিল্ডিং এলাকায় আরিফের বাসায়। এ বাসায়ই গিয়াস, মাহবুব, মাসুদ, সাগর, আরিফসহ ছয়জন মিলে ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। সেই বৈঠকে আরিফের বাসাকে ডাকাতির পূর্বাপর আস্তানা হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। আরিফের বাসা থেকেই গিয়াস, মাহবুব, মাসুদ ও সাগর ডাকাতির জন্য মুরাদপুরে যায়। ঘটনার পর রাত ৩টার দিকে মাহবুব ও মাসুদ আরিফের বাসায় আসে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ জানিয়েছে, তার (আরিফ) বাসায় প্রথমে যায় মাহবুব। গিয়েই সে বিছানায় শুয়ে পড়ে। এরপর মাসুদকে ফোন দেয় মাহবুব। মাসুদ যাওয়ার পর দুজন মিলে ইয়াবা সেবন করে। আরিফ মাসুদের প্যান্টে রক্ত দেখে চিৎকার করে ওঠে, 'দোস্ত, তোর প্যান্টে রক্ত কেন?' মাসুদ বলে, 'চুপ। আমরা খুন কইরা ফালাইছি।' এরপর মাসুদ বগার বিল এলাকায় নিজের বাসায় গিয়ে রক্তমাখা প্যান্ট খুলে আবারও আরিফের বাসায় ফিরে আসে। মাহবুব ও মাসুদ আরিফের বাথরুমে গোসল করে। গোসলের পর মাহবুব সাগরকে ফোন করে। সাগর প্রায় আধাঘণ্টা পর আরিফের বাসায় আসে। সাগর আসার পর মাহবুব রিকশা নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় মাহবুব কোথায় যাচ্ছে সেটা কাউকে জানায়নি। সাগর এসে গিয়াসকে ফোন করে বলে, 'বস, আমি পালিয়ে যাব।' গিয়াস বলে, 'গেলে যা। কয়েক দিন নিরাপদে থাক। আমার কোনো সমস্যা নেই।' এরপর সাগর আরিফকে বলে, 'আমাকে ট্রেনের টিকিট করে দে। আমি চলে যাব।' জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ পুলিশকে জানায়, মাসুদ ও সাগর একসঙ্গে রেলস্টেশনে যায়। কিন্তু ঢাকার কোনো টিকিট না পেয়ে তারা অলংকার মোড়ের বাসস্ট্যান্ডে চলে যায়। যাওয়ার সময় বিআরটিসি মার্কেট থেকে সাগরের জন্য কিশোরগঞ্জের বাসের একটি টিকিট কেনে। এর মধ্যে সে আলাদাভাবে বাসা থেকে অলংকার মোড়ের বাসস্ট্যান্ডে যায়। সে সাগরকে বিদায় দেয়। মাসুদকে দেখে কুমিল্লার একটি বাসে চড়ে বসতে। এরপর সে বাসায় ফিরে আসে। ততক্ষণে ভোর হয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment