Monday, May 18, 2015

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া আবারও বন্ধ করল লিবিয়া:প্রথম অালো

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া আবারও বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে লিবিয়া। দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সরকার এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য লিবিয়া গিয়ে সেখান থেকে অবৈধভাবে নৌপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে দেশটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলভিত্তিক
সরকারের মুখপাত্র হাতেম উরাইবি গত শনিবার বাংলাদেশি শ্রমিকদের দেশটিতে প্রবেশে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি শ্রমিকেরা লিবিয়ায় কাজ করতে আসেন। কিন্তু এরপর তাঁরা অবৈধভাবে নৌযানে চড়ে ইউরোপে পাড়ি জমান। অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে সরকারি তৎপরতার অংশ হিসেবেই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’ এই নিষেধাজ্ঞা পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সরকারের আওতাভুক্ত স্থলসীমান্ত, নদী ও সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরে কার্যকর হবে। অবশ্য বাংলাদেশ সরকার ও জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, লিবিয়ার এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ, একবছর ধরে লিবিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো প্রায় বন্ধই আছে। তবে এ সিদ্ধান্তে অবৈধভাবে লিবিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা বন্ধ হবে। কিন্তু থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া উপকূলে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী আটক হওয়ার সময়ে একইভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে লিবিয়ায় কর্মী নেওয়া বন্ধের ঘোষণা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) আ স ম আশরাফুল ইসলাম গতকাল রোববার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।’ হঠাৎ এই ঘোষণা দেওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাইনি। তবে অনেক বাংলাদেশি লিবিয়ায় এসে নৌপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা শুনেছি।’ লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের ওপর পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। রাজধানী ত্রিপোলি পতনের পর পশ্চিমাঞ্চলে পাল্টা সরকার গঠন করেছে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলকে মানব পাচারের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে মানব পাচারকারীরা। গত মাসে ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌযান ডুবে প্রায় ৯০০ অভিবাসী প্রাণ হারান। লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিরা আসলেই নৌপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন কি না, জানতে চাইলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কারা এভাবে গেছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা আমাদের কাছে নেই। তবে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে একটি জাহাজ ডুবে কয়েক শ মানুষ মারা যায়। ওই জাহাজ থেকে এক বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, “জাহাজটিতে আরও অন্তত ২৫ জন বাংলাদেশি ছিলেন।” ওই ঘটনার পর আমরা দেশে চিঠি পাঠিয়ে অবৈধভাবে লোক পাঠানো বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল।’ এরপর লিবিয়া যাওয়ার পধে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ১১ জন ধরা পড়েন। আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধভাবে লিবিয়া আসার চেষ্টা এবার বন্ধ হবে বলে আমরা আশা করছি। তবে এর ফলে আমাদের বৈধ বাজার সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ গত কয়েক মাস এমনিতেই বৈধভাবে লোক আসা বন্ধ আছে। আমরাও নতুন করে কোনো চাহিদাপত্র অনুমোদন করছি না।’ একসময় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার ছিল লিবিয়া। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০০৯ ও ২০১০ সালে ৩৫ হাজার বাংলাদেশি লিবিয়ায় গেছেন। কিন্তু সম্ভাবনাময় লিবিয়ার বাজারে সেই সময়ে জাল ভিসায় লোক পাঠানো শুরু করে দালালচক্র। এঁদের অনেকেই বিমানবন্দরে আটক হন। এসব কারণেই ২০১০ সালে লিবিয়া বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে ২০১১ সালে দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা শুরুর পর ৩৬ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসেন। ওই বছর মাত্র ৮৯ জন বাংলাদেশি লিবিয়ায় যান। তবে গাদ্দাফি সরকারের পতনের পর দেশটির পুনর্গঠনের কাজ শুরু হলে আবারও লোক নেওয়া শুরু করে লিবিয়া। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ১৪ হাজার ৯৭৫ জন, ২০১৩ সালে ৭ হাজার ১৭৫ জন, ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৪৬১ জন কর্মী যান দেশটিতে। আর এ বছর এখন পর্যন্ত ৯৩ জন কর্মী গেছেন। আর বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে একটা বড় অংশই আছেন রাজধানী ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সহসভাপতি গোলাম কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিবিয়ায় যুদ্ধাবস্থাসহ নানা সংকটের কারণে বৈধভাবে সেখানে খুব বেশি লোক যাচ্ছিল না। কিন্তু অবৈধভাবে লোক পাঠানো অব্যাহত আছে। আবার সেখান থেকে ইউরোপ যাওয়া খুব সহজ। কাজেই অনেকে সেই চেষ্টাও করেন। এসব কারণে বৈধভাবে যাঁরা ব্যবসা করতে চান তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অবৈধভাবে এই বিদেশযাত্রা বন্ধ করা দরকার।’

No comments:

Post a Comment