Wednesday, May 13, 2015

বহাল থাকছে কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ:যুগান্তর

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ পড়লেও নতুন পে-স্কেলে অষ্টম বেতন কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ বহাল থাকছে। বিশেষ করে চাকরিসংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার সুপারিশগুলো কাটছাঁট করেনি পে-স্কেল পর্যালোচনা কমিটি। মঙ্গলবার কমিটি তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে। আজ পে-স্কেল পর্যালোচনা কমিটির এ রিপোর্ট হস্তান্তর করার সম্ভাবনা রয়েছে।
='_blank'> সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে ইতিপূর্বে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এ দুটি সুবিধা থেকে বঞ্চিতরা আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। এ জন্য নতুন বেতন স্কেলে বৈষম্য দূর করতে এ দুটি সুবিধা বাদ দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অষ্টম জাতীয় বেতন কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূইয়া নিজ দফতরে যুগান্তরকে বলেন, নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই অর্থমন্ত্রীর কাছে এ সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে। জানা গেছে, পে-স্কেল পর্যালোচনা কমিটি পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ১০ বছরের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর দেয়ার জন্য কমিশনের সুপারিশ অব্যাহত রেখেছে। পাঁচ বছর হলে শেষ বেতনের ২০ শতাংশ পেনশন পাবে। ২৫ বছরের ওপরে হলে পেনশন পাবে শেষ বেতনের ৯০ শতাংশ হারে। অবশ্য বিদ্যমান বেতন স্কেলে চাকরির মেয়াদ ১০ বছর না হলে পেনশনের যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। ১০ বছরের পেনশন দেয়া হতো ৩২ শতাংশ এবং ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৮০ শতাংশ হারে পেনশন দেয়ার বিধান রয়েছে। পাঁচ বছর বা ১০ বছরের কম এক টাকায় ২৭৫ টাকা, ১০ বছর বা ১৫ বছরের কম এক টাকায় ২৬০ টাকা, ১৫ বছর বা ২০ বছরের কম এক টাকা ২৪৫ টাকা, ২০ বছর বা ঊর্ধ্বে এক টাকায় ২৩০ টাকার সুপারিশ অব্যাহত আছে। নিট পেনশন সমর্পণের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সমর্পিত ৫০ শতাংশ পেনশনের অর্ধেক হারে আনুতোষিক প্রদানের প্রচলিত নিয়ম চালু রাখার কথা বলা হয়। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীর মেয়াদ পাঁচ বছরের আগেই অক্ষম হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে বিদ্যমান সুবিধার পাশাপাশি চাকরির মেয়াদের প্রতি বছরের জন্য নিজস্ব স্কেলের তিনটি মূল বেতনের সমপরিমাণ হারে এককালীন বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এ সুপারিশও অব্যাহত রাখা হয়েছে। ৬৫ বছর পর্যন্ত পেনশনভোগীর মাসিক চিকিৎসা ভাতা ১৫শ’ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতা বিদ্যমান এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫শ’ টাকা করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া অবসরভোগীর জন্য তার মাসিক নিট পেনশনের সমান দ্বিগুণ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা প্রদান। বর্তমান পেনশন গ্রহণকারী অবসরভোগীরা প্রতি বছর তাদের দু’ মাসের নিট পেনশনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া নিট পেনশনপ্রাপ্ত অবসরভোগীদের নিট পেনশনের হার যে প্রক্রিয়ায় বাড়ানো হয়, অনুরূপ একশ’ শতাংশ পেনশন সমর্পণকারীদের ক্ষেত্রেও শুধু উৎসব ভাতা প্রাপ্তির জন্য নিট পেনশনের হার বাড়বে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের সিনিয়র সিটিজেন বা জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবীণ নাগরিক কার্ড প্রবর্তন করতে পারে। চাকরিরত একজন বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পাঁচ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা, অক্ষমতার ক্ষেত্রে ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা, দাফন-কাফন অথবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তার পরিমাণ এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিজীবীদের শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করে অষ্টম বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। কমিশনের সুপারিশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বেতন এক লাখ টাকা এবং সিনিয়র সচিবদের বেতন ৮৮ হাজার, সচিবদের বেতন ৮০ হাজার এবং সর্বনিু স্কেল আট হাজার ২শ’ টাকা নির্ধারণ করেছিল। পে-স্কেল পর্যালোচনা কমিটি তাদের সুপারিশে সর্বোচ্চ বেতন ৭৫ হাজার ও সর্বনিু স্কেল সাড়ে আট হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বেতন ৯০ হাজার এবং সিনিয়র সচিবদের বেতন ৭৮ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে অষ্টম জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশকৃত ১৬ ধাপের বেতন কাঠামো থাকছে না। আগের নিয়মেই বেতন কাঠামো থাকছে ২০ ধাপের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ তোলা হবে। সূত্র মতে, পে-স্কেল রিপোর্ট পর্যালোচনা কমিটি অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বেতন ১০ হাজার, সিনিয়র সচিবদের বেতন ১০ হাজার, সচিবদের বেতন পাঁচ হাজার টাকা কর্তন করেছে। তবে সর্বনিু স্কেলে ৩শ’ টাকা বাড়ানো হয়েছে। মধ্যম পর্যায়ে স্কেলের বেতন কম কাটা হয়েছে। বর্তমান কল্যাণ তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিধি ও ক্ষমতা বৃদ্ধি, অবসরপ্রাপ্তদের জন্য ৪শ’ কোটি টাকা দিয়ে সোপন ব্যাংক করার সুপারিশ অব্যাহত রাখা হচ্ছে। জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে নতুন পে-স্কেলের ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। তবে নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হবে আগামী পহেলা জুলাই থেকে। এর জন্য আসন্ন বাজেটে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। জানা গেছে. নতুন বেতন কাঠামো এক সঙ্গে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে না। পর্যায়ক্রমে দু’ থেকে তিন ভাগে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।  

No comments:

Post a Comment