Monday, May 18, 2015

লিবিয়ায় আকাশপথে মানবপাচারে ১০ চক্র:কালের কন্ঠ

কয়েক মাস আগেও লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তাঁরা। মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে জাল ভিসা, ট্রাভেল ডকুমেন্ট জালিয়াতি, অবৈধভাবে পাড়ি দেওয়াসহ নানা অভিযোগে আটক হয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় শতাধিক বাংলাদেশির ঠিকানা হয়েছে লিবিয়ার বন্দিশিবির। আকাশপথে মানবপাচারের এমন ঘটনায় বিস্মিত লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মীরাও। পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখের প্রায় এক বছর আগে ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণ, আস
া-যাওয়ার 'এন্ট্রি' ও 'এক্সিট' সিলমোহর- কী নেই তাঁদের পাসপোর্টে! জানা গেছে, ২০১২ সালেই বাংলাদেশ সরকার লিবিয়ার পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে সীমিত পরিসরে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র সাপেক্ষে বৈধভাবে সেখানে জনশক্তি পাঠানো হয়েছে। তবে প্রায় এক বছর ধরে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটির সংঘাতময় পরিস্থিতি ও অনিশ্চয়তার কারণে জনশক্তি না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আসছে। কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র অবৈধভাবে লিবিয়ায় মানবপাচার করছে। লিবিয়ায় আটক বাংলাদেশিরা এ জন্য বাংলাদেশের ১০টি চক্রকে দায়ী করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস ওই ১০ চক্রের কথা ঢাকাকে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। ওই চক্রগুলো হলো ঢাকার ফার্মগেটের নাতাশা ট্রাভেলস লিমিটেডের আনিসুর রহমান, একরামুল হক সবুজ, মনির হোসেন, জুলহাস ও আনোয়ার হোসেন; পুরানা পল্টনের মল্লিক কমপ্লেক্সের বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল; বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ারের আবদুল মতিন ও তাঁর দল; ফকিরাপুলের নজরুল, হায়দার ও মিজান; কক্সবাজারের চকরিয়ার এলাহাদাদ মাস্টারের ছেলে আনোয়ারুল কবিরের নেতৃত্বাধীন চক্র, পেকুয়ার আবুল হোসেন শিকদারের ছেলে নুরুল কবির ও তাঁর সহযোগীরা; মাদারীপুরের দুরাইলের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর খালাসির নেতৃত্বাধীন চক্র, শাহীন নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীরা; জনৈক শওকতের ছেলে মনির হোসেন ও তাঁর দল এবং জাহিদ খানের নেতৃত্বাধীন চক্র। ভালো চাকরির প্রলোভনে অবৈধভাবে পাড়ি জমিয়ে বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আন্দামান সাগর ও মালাক্কা প্রণালিতে নৌকায় মুমূর্ষু অবস্থায় ভাসতে থাকার সংবাদ যখন বিশ্বের গণমাধ্যমে নিয়মিত শিরোনাম হচ্ছে, তখন মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে লিবিয়ার মরুভূমিতেও নেমেছে বাংলাদেশিদের বিপর্যয়। বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে ৯৩ জন বাংলাদেশি বৈধভাবে লিবিয়া গেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারই তার কর্মীদের লিবিয়া যাওয়া প্রায় বন্ধ করেছে বছরখানেক আগে। কিন্তু মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যায়নি। অবৈধভাবে লিবিয়ায় গেছে বৈধ সংখ্যার কয়েক গুণ। সর্বশেষ গত শনিবার লিবিয়া সরকারই বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, লিবিয়া সরকার বাংলাদেশি কর্মী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। সারা বিশ্ব এখন জানছে যে অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় লিবিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। এর প্রভাব পড়তে পারে সামগ্রিক শ্রমবাজারের ওপরও। জানা গেছে, মানবপাচারকারীরা চার লাখ থেকে সাত লাখ টাকা নিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে লোকজনকে। বিনিময়ে তাদের দিয়েছে জাল ভিসা, অতীতে লিবিয়ায় আসা-যাওয়ার ভুয়া ডকুমেন্ট। আর এসব নিয়ে লিবিয়ায় ধরা পড়ার পর তাদের ঠিকানা হয়েছে আটককেন্দ্র। কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, সাগরপথে অবৈধ অভিবাসন রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রবল চাপের মুখে লিবিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। গত শনিবারের ঘোষণাটি এসেছে লিবিয়ার আন্তর্জাতিক সমর্থনপুষ্ট সরকারের পক্ষ থেকে। দেশটির রাজধানী ত্রিপোলিতে ওই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে ত্রিপোলি যে সরকারের নিয়ন্ত্রণে তারাও ত্রিপোলি ও মিসরাতায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। জানা গেছে, সাগরপথে অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় ইইউয়ের চাপের মুখে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া খুব কঠিন ছিল না। কারণ বিমানযোগে লিবিয়ায় বিদেশি কর্মী যায় একমাত্র বাংলাদেশ থেকেই। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে স্থলপথে লিবিয়ায় বিদেশি কিছু কর্মী ঢোকে নাজুক সীমান্ত ব্যবস্থাপনার সুযোগে। তবে বিদেশি কর্মীদের অনেকেই চেষ্টা করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলো, বিশেষ করে ইতালিতে পৌঁছতে। লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বেনগাজিতে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী ছিলেন। ধারণা করা হয়, তাঁদের মধ্যে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কর্মী অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে লিবিয়ায় একক বৈধ সরকার নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অবনতিশীল। এ সুযোগে মানবপাচারকারীরা ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে অবৈধভাবে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে লিবিয়াকে ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করা নৌযানগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি থাকার খবর পাওয়া যায়। সম্প্রতি লিবিয়া থেকে ইতালির দিকে রওনা হয়ে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে উদ্ধার হওয়া এক বাংলাদেশি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ওই নৌকায় আরো ২৫-৩০ জন বাংলাদেশি ছিলেন। তাঁরা সবাই নিখোঁজ আছেন। ভূমধ্যসাগরে প্রায়ই অভিবাসীবোঝাই নৌকাডুবি ঘটে। এতে কতজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন আর কজনই বা ইউরোপে পাড়ি জমাতে পেরেছেন তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। বর্তমানে লিবিয়ায় বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারে নেমেছে। বন্দিশিবিরে বাংলাদেশিদের দুর্বিষহ জীবন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে ও চলতি মাসে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার বিভিন্ন কারাগারে থাকা বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ঢাকাকে অবহিত করেছে। ওই বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে লিবিয়ায় যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এরপর ধরা পড়ে তাঁদের ঠিকানা হচ্ছে বন্দিশিবির। লিবিয়ায় আটক টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের হারুন আল মামুন ছাড়া পেয়েছেন বন্দিশিবির থেকে। মামুনের বিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করতেই দেলদুয়ারে থাকা তাঁর স্ত্রী ফরিদা আক্তার মুন্নি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, 'গত তিন মাস আপনারা সাংবাদিকরা কোথায় ছিলেন?' তিনি জানান, সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে লিবিয়া গিয়ে ধরা পড়ে প্রায় তিন মাস বন্দিশিবিরে ছিলেন হারুন। গতকাল রবিবারই হারুন লিবিয়া থেকে ফোন করে নিজের মুক্তি পাওয়ার খবর জানিয়েছেন। আগামী দিনগুলো নিয়ে হারুনের পরিবারে এখন অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা। এতটুকু সান্ত্বনা, আশ্বাস দেওয়ার যেন কেউ নেই। সব কিছুই জাল : সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, বন্দিশিবিরে আটক বাংলাদেশিদের অনেকেই আগে কখনো লিবিয়ায় যাননি। অথচ তাঁদের পাসপোর্টে জাল ভিসা, লিবিয়ায় একাধিকবার আসা-যাওয়ার ভুয়া এন্ট্রি-এক্সিট সিল জুড়ে দিয়েছে দালাল ও মানবপাচারকারীরা। এমনকি একজনের কাছে থাকা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) ছবির সঙ্গে তাঁর চেহারার মিল নেই। অন্য একজনের এমআরপি দিয়ে তাঁকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়েছে। আটক বাংলাদেশিদের পাসপোর্টগুলোর কোথাও বিএমইটির অনুমোদন বা বহির্গমন ছাড়পত্র সিল বা সই নেই। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও মনে করেন, ওই বাংলাদেশিদের পুরো অভিবাসনপ্রক্রিয়াটিই ছিল অবৈধ। জানা গেছে, লিবিয়া কারা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিদলকে সতর্ক করে বলেছে যে অবৈধ অভিবাসনপ্রবণতা বন্ধ না হলে তাদের ফেরত পাঠানোর খরচ বাংলাদেশ দূতাবাসকেই দিতে হবে কিংবা অবৈধ সব বাংলাদেশি অভিবাসীকে একযোগে ফেরত পাঠানো হবে। চট্টগ্রাম থেকে লাবারাক : সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছর অবৈধভাবে লিবিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে লিবিয়ার জাল ভিসাসহ ১১ জন ধরাও পড়েছে। জানা গেছে, মানবপাচারকারীরা এমন বিমানবন্দর ব্যবহার করে, যেগুলোতে জাল ভিসা শনাক্ত করার মতো উচ্চ প্রযুক্তি নেই। অভিবাসন কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করতে অন্য দেশের জাল ভিসা এমনভাবে পাসপোর্টে সংযুক্ত করা হয় যাতে মনে হয়, ওই যাত্রী আগে একাধিকবার বিদেশে যাতায়াত করেছে। লিবিয়ার বন্দিশিবিরগুলোতে আটক বাংলাদেশিরা লিবিয়ায় পৌঁছার ক্ষেত্রে দুটি রুটের কথা জানিয়েছে। এর একটি হলো চট্টগ্রাম-দুবাই-আম্মান-লাবারাক। চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাই দুবাই নামের এয়ারলাইনসের ফ্লাইটযোগে জর্দানের রাজধানী আম্মান পৌঁছে পরে লিবিয়ান এয়ারলাইনসযোগে লাবারাকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সড়কপথে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়ার চেষ্টা করে অবৈধ অভিবাসীরা। মানবপাচারের দ্বিতীয় রুটটি হলো চট্টগ্রাম-শারজাহ-কায়রো-তিউনিস-লাবারাক। জানা গেছে, মানবপাচারকারীরা চট্টগ্রাম থেকে ইতিহাদ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটযোগে শারজাহ হয়ে কায়রোতে নেয় অবৈধ অভিবাসীদের। এরপর ইজিপশিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটযোগে কায়রো থেকে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে নিয়ে পরে আবার লিবিয়ান এয়ারলাইনসযোগে লিবিয়ার লাবারাকে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রামে সবার হোটেল, পাচারকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় অভিন্ন : লিবিয়ায় বন্দিশিবিরে আটক বাংলাদেশিরা জানায়, চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়ার আগে তাদের প্রায় সবাই মায়ারি হোটেল, বিআরটিসি মার্কেট ও বিআরটিসি মোড়ে অবস্থান করে। সেখানেই এজেন্টরা তাদের ভিসাসহ পাসপোর্ট দিয়েছিল। আটক বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই ঢাকার ফার্মগেটে এয়ারপোর্ট সুপার মার্কেটের নাতাশা ট্রাভেলস লিমিটেডের মাধ্যমে জাল ভিসাসহ লিবিয়ায় আসার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। আটক অন্য বাংলাদেশিরা ঢাকার বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ারের আবদুল মতিনের ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে লিবিয়ায় যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলেছে। অভিযুক্তদের দাবি, সব ষড়যন্ত্র : পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাচারকারী ৯টি চক্রের কোনো না কোনো সদস্যের মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। সেই নম্বরের সূত্র ধরেই গতকাল বিকেলে তাদের প্রায় সবার সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কালের কণ্ঠ'র পক্ষ থেকে। সে সময় তাদের কারো কারো মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আবার কেউ কেউ সাংবাদিক পরিচয় শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যারা ফোন ধরেছে, তাদের কেউ কেউ অভিযোগ অস্বীকার করে এগুলোকে ষড়যন্ত্র বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা নাতাশা ট্রাভেলস পরিচালনকারী একরামুল হক সবুজ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগে লিবিয়ায় লোক পাঠানো হতো। এখন সেখানে লোক পাঠানো হয় না। যারা বলছে আমি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আপনারা তদন্ত করে দেখেন আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না।' অন্য একটি চক্রের সদস্য মনির হোসেন অভিযোগ শুনে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে শুধু বলেন, 'ভাই, আমি কোনো মানুষ পাচারের সঙ্গে জড়িত না।' আরেক চক্রের জাহিদ খান বলেন, 'আমি নিজে ২০০৯ সালে ইরাকে গিয়ে চার বছর ছিলাম। দেশে আসার পর এখন ব্যবসা করছি; কিন্তু কোনো মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত নই। যারা এমন অভিযোগ করছে, তারা আমার ক্ষতির জন্য এমনটি বলে বেড়াচ্ছে।' কক্সবাজারের পেকুয়ার আবুল হোসেন সিকদারের ছেলে দালাল নুরুল কবির বলেন, 'এখন তো লিবিয়ায় কোনো লোক পাঠানো হয় না। আমি সৌদি আরবে ভিসার কাজ করে থাকি। যারা বলছে, আমি লিবিয়ায় লোক পাঠাই, তারা ভুল বলছে। সরকারিভাবে সৌদি আরবে নারী-পুরুষ নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে আমি কাজ করছি।' আল মামুন ট্রাভেলসের নজরুল ইসলাম বলেন, 'লিবিয়ায় আমরা লোক পাঠাই। তবে এখন হয়তো দু-এক মাস দেরি হবে। সব রাস্তায়ই কড়াকড়ি হয়েছে।' লিবিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পরও কিভাবে লোক পাঠান- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শ্রমবাজার তো আজ রবিবার সে দেশের সরকার বন্ধ ঘোষণা করল। আমরা তো আবার অন্য পথে লোক পাঠাই। বাংলাদেশে এখন লিবিয়ার ডেলিগেটস আসছে। তারা যাচাই-বাছাই করেই লিবিয়ায় লোক নেয়।' সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি বলেন, 'আপনি আগে পরিচয় দেবেন না?' সঙ্গে সঙ্গে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ঢাকার পুরানা পল্টনের বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী এইচ এম বাবলু গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সৌদি আরবে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। তবে লিবিয়ায় লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে এখন একটু গরম অবস্থা আছে। কড়াকড়ি চলছে। ১০-১২ দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন লিবিয়ায় লোক পাঠাতে পারব।' প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, লিবিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'লিবিয়ায় অবৈধ কোনো শ্রমিক কিংবা কর্মী প্রবেশ করতে পারবে না। লিবিয়ার সরকার সে দেশে তাদের থাকতে দেবে না। যাদের বিএমইটির ছাড়পত্র ও বৈধ ভিসা আছে, তারাই কেবল লিবিয়া যেতে পারবে।' তিনি বলেন, 'লিবিয়ার শ্রমবাজার কিন্তু বন্ধ হয়নি। সেখানে বৈধভাবে লোক পাঠানো হয়। আমাদের পাসপোর্ট-ভিসাসহ বৈধ কর্মীদের লিবিয়ায় পাঠানো হয়ে থাকে। তবে ট্যুরিস্ট ভিসাসহ অন্য কোনো ভিসায় সেখানে যেতে পারবে না।'

No comments:

Post a Comment