Monday, May 11, 2015

দুদক চলছে ৩২ বছরের পুরনো অর্গানোগ্রামে:যুগান্তর

সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চলছে ৩২ বছরের পুরনো অর্গানোগ্রামে (জনবল কাঠামো)। সময়োপযোগী, বাস্তবানুগ একটি অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন করতে না পারার কারণ হিসেবে সরকারের অসহযোগিতা, কারিগরি ত্র“টিসহ নানা সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কমিশনের সদিচ্ছা না থাকাকেও প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে দুদক আশা করছে, জনবলের এ সংকট সহসাই কেটে যাবে। ইতিমধ্যে নতুন জনবল ক
াঠামোর একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে দুদক। এটি এখন কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায়। দুদক সূত্র জানায়, ১৯৮৩ সালে তৎকালীন ‘দুর্নীতি দমন সংস্থা’ সর্বশেষ জনবল কাঠামো প্রণয়ন করে। ওই সময় দেশের জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিস্তার ছিল এখনকার প্রায় অর্ধেক। ৩২ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ এবং দুর্নীতির বহুমাত্রিক বিস্তার ঘটলেও দুর্নীতিবিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির জনবল কাঠামো রয়ে গেছে আগেরটাই। বিলুপ্ত ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ চলেছে ১ হাজার ২৬৩ জনের জনবল কাঠামো নিয়ে। ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত করে দিয়ে বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা হলেও পরিবর্তন আসেনি জনবল কাঠামোয়। বরং কমিশন প্রতিষ্ঠার পরপর সরকার কর্তৃক কমিশনে ‘বহাল-অবহাল’ চিহ্নিত করে তীব্র জনবল সংকট সৃষ্টি করা হয়। অকার্যকর করে রাখা হয় দুদককে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মধ্যে কমিশনের জনবল সংকট আপাতভাবে নিরসন করা হয়। কার্যকর করা হয় দুদককে। তবে দেশে দুর্নীতির বহুমাত্রিক বিস্তারের নিরিখে জনবল সংকট থেকেই যায়। এ সংকট নিরসনে জনবল নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়লেও তা আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। সর্বোপরি নতুন জনবল কাঠামো প্রণীত না হওয়ার জন্য বিগত কমিশনগুলোর সদিচ্ছার অভাবকেও দায়ী করা হয়। সূত্র মতে, বিদ্যমান জনবল কাঠামোয় ১২৬৩টি পদ থাকলেও ১৯১টি পদ সুপার নিউমারারি। সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর অবসর গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব পদ। ৩৭ ধরনের পদে কার্যত জনবল রয়েছে ১ হাজার ৭৩ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ২৬০টি পদের মধ্যে রয়েছেন ১ চেয়ারম্যান, ২ কমিশনার, ১ সচিব, ৬ মহাপরিচালক, ১৯ পরিচালক, ৮১ উপপরিচালক, ১৩৩ সহকারী পরিচালক, ১ সিস্টেম এনালিস্ট, ১ প্রোগ্রামার, ১০ প্রসিকিউটর, ৪ একান্ত সচিব এবং ১ জনসংযোগ কর্মকর্তা। দ্বিতীয় শ্রেণীর ১৪৮টি পদের মধ্যে রয়েছে ১২৪ উপসহকারী পরিচালক, ২১ কোর্ট পরিদর্শক, ১ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ১ পরিবহর কর্মকর্তা, ১ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। তৃতীয় শ্রেণীর ৮১২টি পদের মধ্যে ১৬ প্রধান সহকারী, ১৩০ সহকারী পরিদর্শক, ৭ হিসাবরক্ষক, ১০ সাঁটলিপিকার বা ব্যক্তিগত সহকারী, ১ লাইব্রেরিয়ান, ২২ সাঁটমুদ্রাক্ষরিক, ৪৫ উচ্চমান সহকারী, ৫৫ কোর্ট সহকারী (এএসআই), ৪৯ ড্রাইভার, ২ টেলিফোন অপারেটর কাম রিসিপশনিস্ট, ২ ক্যাশিয়ার, ১০৪ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ৩ হেড কনস্টেবল, ৩৬২ কনস্টেবল এবং ৪ ড্রাইভার কনস্টেবল। চতুর্থ শ্রেণীর ৪৩টি পদের মধ্যে রয়েছে ২ প্রধান নিরাপত্তারক্ষী, ২ ডেসপাচ রাইডার, ১ দপ্তরি, ২৫ অফিস সহায়ক এবং ১৩টি নিরাপত্তারক্ষীর পদ রয়েছে। পদোন্নতি, অবসরগ্রহণ, মৃত্যবরণ, সুপার নিউমারারি পদ বিলুপ্তি এবং শূন্যপদ পূরণ না করার ফলে কার্যত দুদকের জনবল ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান কমিশন নতুন জনবল কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে মহাপরিচালক (অনিষ্পন্ন) আবু মো. মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ৭ এপ্রিল জনবল কাঠামো প্রস্তাব করে। প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে বাড়ানো হয়েছে ১৪ ধরনের ৯৩৩টি পদ। এতে প্রথম শ্রেণীর ২৩৭টি পদের মধ্যে ১টি মহাপরিচালক, ৫টি পরিচালক, ৮৯টি উপপরিচালক, ১৫৩টি সহকারী পরিচালকের পদ। দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ বাড়ানো হয়েছে ২৩৫টি। এর মধ্যে উপসহকারী পরিচালক ১৮৩টি। কোর্ট পরিদর্শক ৫১টি পদ রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীর পদ বাড়ানো হয়েছে ৩২২টি। চতুর্থ শ্রেণীর পদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ১২৪টি। সব শ্রেণী থেকে বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে ১৪টি পদ। প্রথম শ্রেণীর সর্বোচ্চ পদে (সচিব) বেতন স্কেল প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন (প্রটোকল অফিসার) ১১ হাজার থেকে ২০ হাজার ৩৭০ টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণীর বেতন স্কেল প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫৪০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণীর সর্বোচ্চ বেতন স্কেল প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১৪ হাজার ২৫৫ টাকা। সর্বনিু ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৯ হাজার ৯৫ টাকা। চতুর্থ শ্রেণীর সর্বোচ্চ বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৫৮০ টাকা। সর্বনিু ৪ হাজার ১০০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৭৪০ টাকা। প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো কমিশনে অনুমোদন লাভ করলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাবে। আমলাতন্ত্রের দীর্ঘ পথ সামনে থাকায় কবে এ জনবল কাঠামো চূড়ান্ত রূপ লাভ করবে- তা বলতে পারছে না খোদ কমিশনও। হালনাগাদ জনবল কাঠামো প্রণয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, জনসংখ্যা ও দুর্নীতির বহুমাত্রিক বিস্তারের ফলে দুদকের বিদ্যমান জনবল যথেষ্ট নয়। এতদিনেও কেন নতুন জনবল কাঠামো প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি- তা খুঁজতে গেলে হয়তো ১০০টি কারণ দাঁড় করানো সম্ভব। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, এ বিষয়ে কমিশনের সদিচ্ছা থাকাটাই জরুরি ছিল। দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু যুগান্তরকে বলেন, প্রায় ২২শ’ জনবলের নতুন একটি অর্গানোগ্রাম প্রস্তাব করা হয়েছে। রোববার কমিশনের সভায় জনবল বৃদ্ধির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন লাভের পরই এটি কেবিনেটে যাবে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে অনেক প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, দুদকের জনবল সংকট সহসাই দূর হবে।  

No comments:

Post a Comment