
পরেও হাটবাজারে ন্যায্যমূল্যের জন্য কৃষকের হাহাকার বেড়েছে। সরকার প্রতি কেজি চাল বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ টাকা এবং গম ৮ টাকা বেশি দরে সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়েছে। কৃষকের উৎপাদন খরচের চেয়ে ২০ শতাংশ মুনাফা দিয়ে নির্ধারণ করা হলেও সেই দামের সুফল কৃষক পাচ্ছেন না। সরকার সংগ্রহ করছে ব্যবসায়ী ও চালকলমালিকদের কাছ থেকে। ফলে এই বাড়তি মুনাফা যাচ্ছে তাঁদের পকেটে। চালের বাজারের এই চিত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এস মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের এই পার্থক্য স্বাভাবিক নয়। কোথায় সমস্যা আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। চালের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম কমার চিত্রও বাজারের স্বতঃসিদ্ধ নিয়মে হচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার খাদ্য অধিদপ্তরের দৈনিক খাদ্যশস্যবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে মোটা ও মাঝারি চালের পাইকারি মূল্য কমেছে ৭ ও ৯ শতাংশ। আর খুচরা বাজারে দাম কমেছে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ শতাংশ। প্রতি কেজি মোটা চাল ২২ থেকে ৩০ টাকা আর মাঝারি মানের চাল ২৭ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার জন্য গঠিত কমিটিতে স্থানীয় সাংসদকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। ওই কমিটিগুলো এখনো বসতে না পারায় সরকারি সংগ্রহ শুরুর ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো এক কেজি চালও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। ফলে হাটবাজারে ধানের দর আর বাড়েনি। প্রতি মণ ধানের সরকারি সংগ্রহমূল্য ৮৮০ টাকা ও চাল ১ হাজার ২৮০ টাকা। আর বাজারে প্রতি মণ ধান ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ও চাল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার দেড় লাখ টন গম সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়ার ২৭ দিনের মাথায় অর্ধেক গম সংগ্রহ হয়ে গেছে। প্রতি কেজি আমদানি করা গমের দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা পড়ছে। আর সরকার গম সংগ্রহ করছে ২৮ টাকা কেজি দরে। বাড়তি লাভের আশায় সরকারি গুদামে গম সরবরাহকারীদের তালিকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা যোগ দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গম সরবরাহ করা নিয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারদলীয় নেতাদের হাতে মার খাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফয়েজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটিগুলোর সভা শেষ না হওয়ায় এখনো গুদামে চাল আসেনি। আশা করি, চাল দ্রুত গুদামে আসা শুরু হবে।’ গম সংগ্রহ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ গণমাধ্যমে দেখতে পেয়ে তা আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সরকার নীতিগতভাবে খাদ্য সংগ্রহের কারণ হিসেবে সরকারি মজুত বাড়ানো এবং কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেওয়ার কথাই বলে থাকে। ভারত থেকে শূন্য শুল্কের সুযোগে গত বছর বেসরকারিভাবে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। আর এই অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৮ হাজার টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। এই চালের প্রভাবেই বাজারে ধান ও চালের দাম কমছে। ভারত থেকে আসা প্রতি কেজি মোটা চাল ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment