Saturday, May 9, 2015

অনন্য একক ক্যামেরন:কালের কন্ঠ

ব্রিটেনের নির্বাচনপূর্ব জরিপগুলোর পূর্বাভাস ছিল- এবারের নির্বাচন হবে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রধান দুই দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি সমানসংখ্যক আসন পাবে। ব্রিটেনে আসবে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউই পাবে না। কিন্তু সব আভাস উড়িয়ে দিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ‘অপ্রত্যাশিত মধুরতম’ জয় পেল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। এর
মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন অখণ্ড যুক্তরাজ্য ধরে রাখার প্রবল প্রত্যয়ী ডেভিড ক্যামেরন। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ ফলাফল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দল কনজারভেটিভ পার্টি ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৩৩১টিতে বিজয়ী হয়েছে। নির্বাচনে বাংলাদেশে আলোচিত বিষয় ছিল এ দেশের বংশোদ্ভূত তিন নারীর প্রার্থিতা। শেষ পর্যন্ত তাঁরা তিনজনই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁরা হলেন রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও ড. রুপা হক। নির্বাচনে তাঁদের নিজ দল লেবার পার্টি গত বছর থেকে এবার কম আসন পেয়ে ভরাডুবি হলেও তাঁরা ঠিকই জয় ছিনিয়ে আনেন। মধুরতম বিজয় বললেন ক্যামেরন : সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হওয়ায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন ডেভিড ক্যামেরন। এ সময় তিনি বলেন, গত কয়েক প্রজন্মের মধ্যে এটা কনজারভেটিভদের জন্য ‘মধুরতম বিজয়’। এ সময় তিনি সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার এবং ব্রিটেনকে অখণ্ড রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। উৎসাহী দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য মধুরতম বিজয়। এটাই প্রকৃত কারণ আজ রাতটি উদ্যাপন করার জন্য, এটাই প্রকৃত কারণ গর্বিত হওয়ার জন্য, দেশকে সেবা করার জন্য সুযোগ পেয়ে উল্লসিত হওয়ার এটাই আসল কারণ।’ তবে এবারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেলেও উত্তরে স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতাপন্থী স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৫৯টি আসনের মধ্যে ৫৬টিতেই জয়লাভ করার বিষয়টি আলাদা মাথাব্যথা হয়ে থাকবে ক্যামেরনের জন্য। অন্যদিকে ব্রিটেনের আরেক কেন্দ্রীয় দল লেবার পার্টির যে শক্ত ঘাঁটি ছিল স্কটল্যান্ডে, সেখানে তাদেরও ভরাডুবি হয়েছে। ফলে স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার জোয়ার নতুন করে বইতে শুরু করলে অখণ্ড ব্রিটেন ধরে রাখা এক চ্যালেঞ্জ হবে ডেভিড ক্যামেরনের জন্য। অবশ্য এই জয় পেয়ে উল্লসিত স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতা নিকোলা স্টারজেন। ফলাফল : যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় স্থানীয় সময় রাত ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা)। পরে ভোট গণনা শেষে ফল প্রকাশ হতে থাকে। প্রথম দিকে লেবার পার্টির প্রার্থীরা এগিয়ে থাকার খবর আসতে থাকলেও ধীরে ধীরে ফলাফলে জয়ের পাল্লা ভারী হতে থাকে কনজারভেটিভ পার্টির। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হাউস অব কমন্সের ৬৫০ আসনেরই পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষিত হয়। এতে ৩৩১ আসনে জয় নিয়ে এককভাবে সরকার গঠন নিশ্চিত করে কনজারভেটিভ পার্টি। আর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দেওয়া লেবার পার্টি পেয়েছে মাত্র ২৩২টি আসন। এ ছাড়া স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) ৫৬ আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পেয়েছে আটটি আসন। ইউনাইটেড কিংডম ইনডিপেনডেন্ট পার্টি (ইউকেআইপি) ও জিআরএন পেয়েছে একটি করে আসন। অন্য দলগুলো জয় পেয়েছে ২১টি আসনে। কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে ভোট পড়েছে ৩৬.৯ শতাংশ। আর লেবার পার্টির পক্ষে ভোট পড়েছে ৩০.৫ শতাংশ। প্রসঙ্গত, গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছিল ৩০৬ আসন। এ কারণে তাদের লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করতে হয়েছিল। বিপরীতে ২৫৮ আসন পেয়ে ৫৫তম সংসদে দাপুটে বিরোধী ছিল লেবার পার্টি। এবার আগেরবারের ২৬ আসন খোয়াতে হয়েছে মিলিব্যান্ডের দলকে। রানির কাছে ছুটে গেলেন ক্যামেরন : নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হলে রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসে যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে ছুটে যান ক্যামেরন। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ফলাফল জানান এবং এককভাবে ‘নতুন ধারা’র সরকার গঠনের কথা বলেন। বিশ্ব নেতাদের অভিনন্দন : নির্বাচনে জয়লাভ করায় বিশ্ব নেতাদের অভিনন্দনে ভাসছেন ডেভিড ক্যামেরন ও তাঁর দল। ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের সরকার-রাষ্ট্রপ্রধানরা। কনজারভেটিভ দলের জয়ে সতর্ক অভিনন্দন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কারণ কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী  ক্যামেরনের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল তিনি জয়ী হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের থাকার ব্যাপারে গণভোটের আয়োজন করবেন। তাই নির্বাচনে ক্যামেরন জয়লাভের পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লাউড জাংকার অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি খুব দ্রুত ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় আছেন। এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ব্রিটিশ প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখতে চাই।’ ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানিয়ে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ জয়কে ‘চমকপ্রদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এক টুইট বার্তায় ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তিনি ক্যামেরনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যারিয়ানো র‌্যাজয় বলেন, ক্যামেরনের সংস্কারের সিদ্ধান্তের জন্য এ বিজয় প্রাপ্য ছিল। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়ে এ জয়কে ‘নাক্ষত্রিক কৃতিত্ব’ বলে অভিহিত করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এ জয়কে ‘হৃদয়গ্রাহী’ বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ জয়কে ‘সম্পর্কের গৌরব’ বলে অভিহিত করে ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানান। দুই নেতার পদত্যাগ : ক্যামেরন প্রশংসায় ভাসলেও নির্বাচনে হারের গ্লানি নিয়ে দলের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন লেবার ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের প্রধানরা। চূড়ান্ত ফল পাওয়ার আগেই গতকাল সকালে পরাজয় স্বীকার করে নেন লেবার দলের নেতা এড মিলিব্যান্ড। দলের জন্য গত রাতকে খুবই হতাশাব্যঞ্জক ও কঠিন বলে বর্ণনা করে গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। ২০১০ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ ৩০৭, লেবার ২৫৮ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ৫৭ আসনে জয়ী হয়েছিল। ওই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের সঙ্গে জোট বেঁধে কনজারভেটিভ পার্টি যুক্তরাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে প্রথম জোট সরকার গঠন করে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।

No comments:

Post a Comment