Thursday, May 21, 2015

সহায়তা পেতে পুলিশের ওপর আস্থাশীল নন ৯৫% নারী:প্রথম অালো

জনপরিসরে হয়রানি নিয়ে বিআইডিএসের গবেষণার তথ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সাতটি বিভাগীয় শহরে হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনায় সহায়তা পেতে পুলিশের ওপর ৯৫ শতাংশ নারী আস্থাশীল নন। হেনস্তার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা কোথাও অভিযোগও করেন না। ২০১৪ সালের মে-জুন মাসে পরিচালিত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একটি গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। জনপরিসরে নারীরা যেসব নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন, তার ধরন ও সমস্যা চ
িহ্নিত করতে গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় অংশ নেন ৮০০ জন নারী ও কিশোরী এবং ৪০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। এতে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী নারীদের ৮৪ শতাংশ যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার হলেও কোথাও কোনো অভিযোগ করেননি। লোকনিন্দার ভয় (৭৬ শতাংশ), পরিবারের সুনাম (৬৯ শতাংশ), অভিযোগ দাখিলের জটিল পদ্ধতি ও তাতে প্রতিকার না পাওয়া (৪৭ শতাংশ) এবং পুলিশের মাধ্যমে পুনরায় হয়রানির আশঙ্কাকে (৩০ শতাংশ) অভিযোগ না করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গবেষণায় অর্থায়ন করেছে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড। গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে সংস্থাটি আয়োজিত ‘নিরাপদ নগরী নির্ভয় নারী’ প্রচারণার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। অ্যাকশনএইড কাজ করে—বিশ্বের এমন ২০টি দেশে এ প্রচারণার উদ্বোধন হয় গতকাল। একই সঙ্গে সংস্থাটি প্রতিবছর ২০ মে ‘নিরাপদ নগরী, নির্ভয় নারী’ দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা দিয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা জনপরিসরে যৌন হয়রানি, অপর্যাপ্ত সড়কবাতি, অপ্রতুল মহিলা বাস এবং সক্রিয় ও কার্যকর পুলিশের অভাবকে নারীদের জন্য অন্যতম ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ নারী পুলিশের ওপর আস্থাশীল নন বলে উল্লেখ করেছেন। উত্তরদাতাদের ৬৫ শতাংশের মতে, পুলিশ অভিযোগকারীকেই দোষারোপ করে, ৫৭ শতাংশের মতে, মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে, ৫৩ শতাংশের মতে, অভিযোগ করে কোনো ফল পাওয়া যায় না। পুলিশ চাইলেই অপরাধীদের চিহ্নিত ও ধরতে পারে বলে মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে প্রয়োজন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি। সে জন্য সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তাতে সরকার ও প্রশাসন বাধ্য হবে ব্যবস্থা নিতে। বিচার না হওয়ার প্রবণতায় দিন দিন নারীর প্রতি হয়রানি-সহিংসতা বেড়েই যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক। গবেষণা চলাকালে বিগত তিন মাসে কটূক্তি ও অশোভন আচরণের শিকার হয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা ৮৪ শতাংশ। ৫৭ শতাংশকে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ বা গায়ে হাত দেওয়ার মতো হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছে। দেশে নারী নির্যাতনের এ চিত্র উদ্বেগজনক উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের সভাপতি অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব তো আছেই, তার ওপর অপরাধীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনেরও প্রশ্রয় পাচ্ছে। আইনকে প্রভাবিত করার এই চেষ্টা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।’ অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনসুর আহমেদ চৌধুরী, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক জাকির হোসেন প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে চারজনকে নাসরীন হক স্মৃতিপদক দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও পেশায় সৃজনশীলতা বিভাগে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, সহিংসতা প্রতিরোধে নারী বিভাগে শান্তি মালো, অপ্রথাগত পেশায় নারী বিভাগে রোখসানা খাতুন, সমাজ পরিবর্তনে যুবা নারী বিভাগে দনোমনি তিগ্যা পদক পেয়েছেন। অ্যাকশনএইডের প্রয়াত দেশীয় পরিচালক নাসরীন হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০০৭ সাল থেকে সংস্থাটি এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।

No comments:

Post a Comment