ফলের নাম অ্যাভোকাডো। পৃথিবীতে পুষ্টিকর ফলগুলোর মধ্যে অ্যাভোকাডো একটি। কেননা, এর মধ্যে আছে নানা ঔষধি গুণও। অ্যাভোকাডো সম্পর্কে কৃষিবিদদের মন্তব্য এমনই। বাংলাদেশে অ্যাভোকাডোর গাছ আছে মাত্র ৮-১০টি। এর মধ্যে দুটি আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে। হর্টিকালচার সেন্টারের দুটি গাছের মধ্যে একটি গাছে চার বছর থেকে ফল ধরছে। এবার বিশেষ যত্নে এ গাছের ৫৮টি পরিপক্ব ফল পাওয়া গেছে বলে জানালেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ
হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ সাইফুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এস এম কামরুজ্জামান ২০০২ সালে একটি ফলের বিচি রোপণ করেন। সেই রোপণ করা বিচির গাছে ফল ধরেছে। ঢাকার একটি অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে তিনি ৫০০ গ্রামের ফলটি কেনেন ৪০০ টাকা দিয়ে। ফলের গাছটি তিনি লাগান চাঁপাইনবাবগঞ্জের হর্টিকালচার সেন্টারে। কামরুজ্জামান জানালেন, এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এ, সি, ই ও কে। আছে প্রচুর পটাসিয়াম, যা কলার চেয়ে ৬০ ভাগ বেশি। ১৮ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, ৩৪% স্যাচুরেটেড ফ্যাট। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভালো কোলেস্টেরল, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। অর্থাৎ শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। এটি শিশুদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট মানের খাবার। শিশুদের পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে। যকৃৎকে সুরক্ষা দেয়। জন্ডিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফল বিজ্ঞানী উইলসন পোপেনোর মতে, অ্যাভোকাডো হচ্ছে পৃথিবীর মানুষের জন্য ঈশ্বরের একটি বড় উপহার। উদ্যানতত্ত্ববিদ সাইফুর রহমান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে দ্বিতীয় গাছটি লাগানো হয়েছে ২০০৮ সালে। এটির চারা দিয়েছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কম্পোনেন্ট প্রকল্পের উপদেষ্টা কৃষিবিদ সামশুল আলম। তিনি এ ফলটির দারুণ ভক্ত। সাইফুর রহমান বলেন, এ সেন্টারে যে ফলগুলো ধরেছে, তার ওজন ৫৫০ থেকে ৬০০ গ্রাম। দেখতে বড় আকারের লম্বাটে কাঁচা পেয়ারার মতো। গাঢ় সবুজ রঙের। পাকলে রঙের পরিবর্তন হয়। ফলের ভেতরে বড় একটি বিচি থাকে। বিচিটি আস্ত রেখে ফালি করে কেটে পাতলা খোসা ছড়িয়ে খেতে হয়। ফলটি মাখনের মতো মোলায়েম, স্বাদ হালকা মিষ্টি ধরনের। হর্টিকালচার সেন্টারে চারা দিয়েছিলেন যিনি, সেই সামশুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমি এ ফলটির স্বাদ গ্রহণ করি। ফল খেয়ে আমি বিচি নিয়ে এসে বাড়িতে চারা তৈরি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে দিই।’ ফলটি ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় দারুণ চাহিদাসম্পন্ন ও দামি ফল। অনেকে এ ফল দিয়ে নাশতা করে। সালাদ করেও খায়। ঢাকার কোনো কোনো অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেও অ্যাভোকাডো ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বাংলাদেশে খাগড়াছড়ি, মধুপুর মিশন, সারদা পুলিশ একাডেমিতে মাত্র কয়েকটি গাছ রয়েছে। উদ্যানতত্ত্ববিদ কামরুজ্জামান বলেন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইতিমধ্যে ১২টি জাত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলোর চারা কলম তৈরি করা হচ্ছে। সাধারণত ছয়-সাত বছরের একটি গাছে ফল ধরে। ফল পাকে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। কাঁচা ফল সবজি হিসেবেও খাওয়া যায়। ভবিষ্যতে অ্যাভোকাডো সম্প্রসারণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment