Sunday, May 10, 2015

কলকাতায় মোদির পাশে মমতা:প্রথম অালো

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আবার তা প্রমাণ করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় গতকাল শনিবার এক মঞ্চে তিনি বসলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশে। নিজের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে এসে প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একসঙ্গে কাজ করলে দেশেরই উন্নয়ন হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে তিনিও একমত। নরে
ন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন গত বছর। কিন্তু মোদির সঙ্গে মমতার সম্পর্ক ছিল ‘আদায়-কাঁচকলায়’। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদিকে ’দাঙ্গাবাজ’ বলতেও ‘কসুর’ করেননি মমতা। এমনকি মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেননি। সব সময় কঠোর সমালোচনা করে গেছেন মোদির। সেই মোদির পাশে বসেই তাঁকে জানান রাজ্যের দাবি-দাওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দুদিনের সফরে গতকাল কলকাতায় পৌঁছান মোদি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মোদি ও মমতা। সেখানেই ভারতের তিনটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মোদি। এই তিনটি প্রকল্প হলো প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা এবং অটল পেনশন যোজনা। এর আগে নজরুল মঞ্চে পৌঁছেই মঞ্চের সাজঘরে প্রায় আধঘণ্টা একান্ত বৈঠক করেন মোদি-মমতা। বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা জানা না গেলেও সরকারি মহল থেকে এটুকু জানা গেছে, মূলত রাজ্যের আর্থিক দাবি-দাওয়া, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের অর্থ ছাঁটাই করা এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মমতা মঞ্চে মোদির পাশে বসে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একসঙ্গে কাজ করলে দেশেরই উন্নয়ন হবে।’ আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সব গ্রামে ব্যাংকিং সুবিধা নেই। সব গ্রামে ব্যাংকের শাখা চাই।’ মোদিও তাঁর ভাষণে মমতার এই দাবির যথার্থ উত্তর দিয়ে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানেন, সমাধান আমি-ই করব। গরিবের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যেতে হবে আমাদের।’ এর আগে কবিগুরুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন মোদি। পরে তিনি বলেন, ভারতের ইতিহাসে বাংলার গুরুত্ব অনেক। বাংলা থেকেই পরিবর্তনের শুরু। একসময় ভারতের আর্থিক বিকাশের ভিত্তি ছিল এই বাংলা। বহু পরিবর্তনের সূচনা এই বাংলা থেকেই। তবে মোদির ভাষণে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোনো উল্লেখ ছিল না। নজরুল মঞ্চ থেকে মোদি কলকাতার রাম কৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে রাম কৃষ্ণ মিশনের অসুস্থ স্বামী আস্থানান্দকে দেখতে যান। সেখান থেকে যান রাজ্যপালের বাসভবন রাজভবনে। পরে মমতাও সেখানে যান এবং দুজন প্রায় আধঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকের আলোচ্যসূচি জানা না গেলেও একটি টেলিভিশন চ্যানেল জানায়, সেখানে মোদির হাতে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি স্মারকলিপি তুলে দেন মমতা। এতে আছে রাজ্যের দাবি-দাওয়া। পরে মমতা রাজভবন থেকে চলে যান। তবে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে রাজ্যপালের দেওয়া নৈশভোজে আবার মমতার যোগ দেওয়ার কথা ছিল। রাতে মোদি রাজভবনেই থাকবেন বলে জানায় সরকারি সূত্র।

No comments:

Post a Comment