ওমরাহ ভিসায় মানব পাচারের অভিযোগে ৪৯টি ওমরাহ হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে পবিত্র ওমরাহ হজ পালনের জন্য ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে ১১ হাজার ৪১৭ ব্যক্তি দেশে ফেরেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, মানব পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব প্রতিষ্ঠানের ওমরাহ হজ লাইসেন্স বাতিলসহ এগুলোর বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এবং ওমরাহ
নীতি, ২০১৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্র আরও জানায়, সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে আবার ওমরাহ ভিসা চালু হলে এই ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করার চিন্তাভাবনা করছে। এ ছাড়া কোনো ওমরাহ এজেন্সি যেন একসঙ্গে অধিকসংখ্যক ব্যক্তিকে পবিত্র ওমরাহ পালনে পাঠাতে না পারে, সে বিষয়টিও দেখা হবে। জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫১ হাজার ৩২১ জন ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব যান। এঁদের বেশির ভাগকেই ৩০ দিনের ভিসা দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ওমরাহ পালন শেষে ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁদের ফিরে আসার কথা। কিন্তু তাঁদের একটি বড় অংশ দেশে ফিরে আসেননি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখা গত সোমবার ওই ৪৯টি ওমরাহ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, এসব এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া ওমরাহযাত্রীদের মধ্যে অনেকে দেশে ফেরত আসেননি। সৌদি আরবে অবৈধভাবে অবস্থানকারী ওই ওমরাহযাত্রীদের যথাসময়ে দেশে ফেরত আনতে তারা কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। এ কারণে সৌদি সরকারের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসব কারণে কেন এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এই ৪৯ এজেন্সির মধ্যে মেগাটপ ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনালের ১০৪ জন, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ৬৭ জন, মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ২১৪, হাসিম এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ১৮, মাসুদ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ৬৮৯, রয়েল এয়ার সার্ভিস সিস্টেমের ১৫৬, খাদেম এয়ার সার্ভিসের ৮৬, আল নূর ইন্টারন্যাশনালের ২১৯, সবুজ বাংলা ইন্টারন্যাশনালের ৬২২, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ৪২০, এলাইট ট্রাভেলসের ৯৯২, জেমিনি ট্রাভেলসের ৯৩৯, রওশন ট্রাভেলসের ২৫৩, ফ্লাই হোম ট্রাভেলসের ২১৫, রব্বানী ওভারসিজ সার্ভিসেসের ৩১১, ইজিওয়ে ট্রাভেলসের ৩৩৮, ইউনাইটেড স্টারস ট্যুরসের ২১৩, থ্রি-স্টার ট্রাভেলসের ২৪১, অঞ্জন এয়ার ট্রাভেলসের ১৮২, কেএসপি ট্রাভেলসের ১৮২, টপকন ওভারসিজের ৩৭১, মল্লিক ট্রাভেলসের ৩১৮, এডমায়ার এয়ার ট্রাভেলসের ২১৯, মারুফ ট্রাভেলসের ৫৮১, গালফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ১৪১, আলহাজ ট্রাভেলস ট্রেডের ৯, এয়ার এক্সপ্রেসের ১৯৮, আভিয়া ওভারসিজের ১৮৬, বাংলাদেশ ওভারসিজ সার্ভিসেসের ১১৮, কনকর্ড ইন্টারন্যাশনালের ২০৮, লাব্বাইক ওভারসিজের ১৯৭, এম এম আর এভিয়েশনের ২১২, এম পি ট্রাভেলসের ১৭৯, পারাবত ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ২১৫, উইংস ট্রাভেলসের ১০৩, ওয়েসিস এয়ার সার্ভিসেসের ১৮৭, সিটি নিয়ন ট্রাভেলসের ২১৩, পারপল এভিয়েশনের ১৯৯, এভারগ্রীন ট্রাভেলসের ২৮৭, রাজশাহী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ৩৭, হাসিস ওভারসিজের ৯৬, ইস্টার্ন ট্রাভেলসের ৫৯, ফারহান এভিয়েশন সার্ভিসেসের ৬০, কামিজ ট্রাভেলসের ১৬, লর্ড ট্রাভেলসের ৭৭, মদিনা এয়ার ট্রাভেলস লিমিটেডের ৬৩, মিমস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের তিনজন ও শরীফ এয়ার সার্ভিস লিমিটেডের ৩৬ জন ওমরাহ ভিসায় গিয়ে ফেরেননি। জানতে চাইলে ধর্মসচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওমরাহ ভিসায় মানব পাচারের সঙ্গে কর্মকর্তা বা এজেন্সি যেই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা লাইসেন্স বাতিল করাসহ আইনানুযায়ী সব ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, ‘দিন দিন এজেন্সির তালিকা বড় হচ্ছে। আমরা সৌদি দূতাবাস ও হজ কাউন্সিলরের কাছ থেকে একাধিক তালিকা পেয়েছি। ওই সব তালিকা সমন্বয় করেই আমরা ওমরাহ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়েছি।’ ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওমরাহ ভিসায় মানব পাচারের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নির্বাহী সদস্যসহ কয়েকজন সদস্যের এজেন্সির বিরুদ্ধেও। প্রতিদিন অভিযোগ আসছে। সূত্রটি আরও জানায়, সৌদি আরবের ন্যাশনাল কমিটি ফর হজ অ্যান্ড ওমরাহর চেয়ারম্যান ওসামা বিন ইয়াহিয়া ফিলালি সম্প্রতি মদিনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জানিয়েছেন, এখন থেকে ওমরাহ-সংক্রান্ত বিষয়ে কড়াকড়ি করা হবে। এ বিষয়ে আগামী ডিসেম্বরে নতুন আইন কার্যকর হতে পারে। ওমরাহ ভিসায় গিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি দেশে না ফেরায় গত ২২ মার্চ থেকে সৌদি আরব বাংলাদেশে ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দেয়। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ওমরাহ ভিসা চালু হয়নি। অবশ্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ করার বিষয়ে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কিছু জানানো হয়নি। মানব পাচারের অভিযোগে সৌদি আরব সেখানকার কয়েকটি ওমরাহ এজেন্সির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এসব এজেন্সি অভিযোগ করে, সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ হজ মিশনে। মিশন জানায় মন্ত্রণালয়কে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, পবিত্র ওমরাহ পালনে যেতে পুলিশি নোটিফিকেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে না বলে কিছু এজেন্সি ওমরাহ ভিসায় লোক পাঠাচ্ছে। ওমরাহ ভিসায় গেলেও তাঁরা যাচ্ছেন আসলে কাজের জন্য। তাই ভিসার মেয়াদ শেষেও তাঁরা ফিরছেন না।
No comments:
Post a Comment