ক্ষমতাসীন দলের ১৬ এমপির (সংসদ সদস্য) বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত বোধ করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। এসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় এদের কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের অভিযোগও। পাশাপাশি টিআর-কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ দলের ভেতর কোন্দল জিইয়ে রাখছেন তারা। এসব ঘটনা কখনও
কখনও সংসদ সদস্যরা সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন অথবা তাদের ছেলেমেয়ে, নিকট আত্মীয় ও দলের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ঘটাচ্ছেন। এমপি ও তাদের ক্যাডারদের এসব অপকর্মে একদিকে যেমন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, অন্যদিকে দোষীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা অথবা তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাথমিক অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে নিতে পারছে না কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। এসব ঘটনা যদি মিডিয়ায় প্রচার হয় এবং সরকারের উপরমহলের সবুজ সংকেত মেলে, শুধু সেক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে নানা চাপে ‘ধীরে চল নীতি’ অনুসরণ করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এমপি ও তাদের আশীর্বাদপুষ্টদের এসব অপকর্মে ক্ষমতসীন দলের কোনো পর্যায়েরই নীতি-নির্ধারকরা ভালো চোখে দেখছেন না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় দলের একাধিক সভায় এসব বিতর্কিত সদস্যকে সতর্ক করেছেন। ভবিষ্যতে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে হুশিয়ার করেছেন। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং অনেকেই দিন দিন আরও লাগামহীন এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি এক সংসদ সদস্যের ছেলে রাতের অন্ধকারে দু’জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরপরই ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও তদের আত্মীয়স্বজনদের অপকর্মের বিষয়টি সরকারের উপরমহলকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, অপরাধী যেই হোক না কেন আইন সবার জন্য সমান। এখানে কে মন্ত্রী, কে সংসদ সদস্য কিংবা কে মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়স্বজন, তা দেখার বিষয় নয়। অপরাধীর ক্ষেত্রে আইন সমানভাবেই কার্যকর হবে। এখানে কাউকে ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি আরও বলেন, একজন মহিলা সংসদ সদস্যের ছেলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আওয়ামী লীগের যে ১৬ এমপি নিজেদের অপকর্ম অথবা তাদের আত্মীয়স্বজন ও নিজস্ব ক্যাডার-বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বিতর্কিত হয়েছেন তারা হলেন- চাঁদপুর-২ আসনের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সৈয়দ মহসিন আলী, কক্সবাজার-৪ আসনের আবদুর রহমান বদি, টাঙ্গাইল-৩ আসনের আমানুর রহমান খান রানা, ফেনী-২ আসনের নিজাম উদ্দিন হাজারী, পটুয়াখালী-২ আসনের আসম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৪ আসনের মাহবুবুর রহমান, পিরোজপুর-১ আসনের একেএমএ আউয়াল, ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-৪ আসনের রণজিতকুমার রায়, চাঁপাইনবাবঞ্জ-১ আসনের গোলাম রব্বানী, রাজশাহী-৪ আসনের মো. এনামুল হক, টাঙ্গাইল-৪ আসনের আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পিনু খান। তাদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপির মেয়ের জামাই লে. কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। লে. কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ তখন র্যাব-১১-এর সিওর (অধিনায়ক) দায়িত্বে ছিলেন। এ ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও এ ঘটনায় দলের ভেতরে এবং সরকারে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তার ছেলে দিপু চৌধুরীর বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। বাবার রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে দিপুর বিরুদ্ধে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এমপি প্রকাশ্যে ধূমপান, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়া এবং কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে নানা সময় আলোচনায় থাকেন। ১০ জুন জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বলে সম্বোধন না করায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে আবার আলোচনায় ওঠে আসেন সৈয়দ মহসিন আলী। ওই সভায় তিনি দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে জেলা পুলিশ সুপার, তিন থানার ওসি, র্যাব ও আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি স্বীকার করে সৈয়দ মহসিন আলী শনিবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তিনি শাসন করেছেন। এর বাইরে কিছু হয়নি। বছরের প্রথম দিকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদ। বর্তমানে কারাগারে আটক এই নেতা বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকার ও দলকে বেশ বড় ধরনের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন। সর্বশেষ ১৩ এপ্রিল রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছেলে বখতিয়ার আলম রনি কর্তৃক দুই নিরীহ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় আলোচনায় ওঠে এসেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান। নিউ ইস্কাটন রোডে মায়ের প্রাডো জিপে থাকা অবস্থায় নির্বিচারে গুলি চালান বখতিয়ার আলম রনি। এতে সিএনজিচালক ইয়াকুব এবং রিকশাচালক হাকিম গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থা তারা দু’জনই মারা যান। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মা পিনু খান সব ধরনের চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় দেড় মাস ঘটনাটি কেউ প্রকাশ করেনি। কিন্তু মিডিয়ায় খবরটি প্রকাশ হওয়ায় পিনু খানের সব তদবির আপাতত ভেস্তে গেছে। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। ছেলেকে রক্ষায় দল ও সরকারের নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন এই সংসদ সদস্য। বছরজুড়েই কোনো না কোনোভাবে আলোচনায় রয়েছেন কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। অবৈধ সম্পদ উপার্জনের অভিযোগে তার এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জমি দখল- প্রায় সব অভিযোগেই অভিযুক্ত তিনি। সম্প্রতি মানব পাচারের ভয়াবহ চিত্র উদ্ঘাটিত হলে এ চক্রেরও গডফাদার হিসেবে উঠে আসে তার নাম। ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা এবং চোরাচালনও একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন আবদুর রহমান বদি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তার ভয়ে তটস্ত থাকেন সব সময়। একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন সরকারদলীয় এ সংসদ সদস্য। স্থানীয় সাংবাদিকরাও তার হাত থেকে রক্ষা পাননি। গত বছর ২০ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেনী শহরের বিলাশী সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে খুন হন ফুলগাজি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম। অভিযোগ রয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডে সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর লোকজন সরাসরি নেতৃত্ব দেয়। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠলেও তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাঝখানে কিছুটা নীরব থাকলেও আবার আলোচনায় চলে আসেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। ৬ জুন সন্ধ্যায় ফেনী শহরতলির লালপুল এলাকায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ২৬ জনকে আটক করে র্যাব। তারা সবাই নিজাম উদ্দিন হাজারীর লোক বলে পরিচিত। আটকৃতদের রাতেই যাতে মুক্তি দেয়া হয়, সেজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রেলপথ, আঞ্চলিক মহাসড়ক বন্ধ করে দেয় নিজাম উদ্দিন হাজারীর অনুসারীরা। কিন্তু র্যাব সদস্যরা অনড় থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। এ অভিযোগ অস্বীকার করেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, একরামুল হক একরাম হত্যায় তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। রাজনৈতিভাবে হেয় করার জন্যই একটি কুচক্রী মহল তাকে এ ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও বারবার এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছি।’ টাঙ্গাইল-৩ আসনের সরকারদলীয় সদস্য আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও রয়েছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমিদখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহম্মেদ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারকৃতরা এ ঘটনায় আমানুর রহমান রানার সম্পৃক্ততা রয়েছে দাবি করে অদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, টাঙ্গাইলেন সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি ও তার লোকজন। হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভোলা-৩ আসনের সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধেও। তার গাড়িতে, তারই পিস্তলের গুলিতে নিহত হন যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম। ওই ঘটনায় ইব্রাহিমের স্ত্রী সরাসরি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। নগর ভবনে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এসব অপপ্রচার।’ পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ। দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হলে তাকে করা হয় চিফ হুইপ। সংসদ সদস্য ভবনের একাধিক ফ্ল্যাট, কার্যালয় নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নির্বাচনী এলাকায়ও নানা কারণে বিতর্কিত আসম ফিরোজ। পটুয়াখালী-৪ আসনের সদস্য মাহবুবুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেই সময় তার সম্পদ বেড়ে যায় বহুগুণ। মাহবুবুর রহমান এবং তার স্ত্রী পৃথি রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। এছাড়াও কুয়াকাটায় জমি দখলসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করেন পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল। এ জেলায় যা হয় সবই তার ইশারায়, তার নির্দেশে। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। পিরোজপুর-১ আসনের একেএমএ আউয়াল বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আমার বিজয় সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা প্রথম থেকেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে আছে।’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে প্রকাশ্যে চাবুক মারার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ গোটা সিলেট নগরী। সরাসরি চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে যশোর-১ আসনের সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে প্রতিবেদন দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিতকুমার রায়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, যশোরের অভয়নগরে কাউন্সিলর মোল্লা ওয়ালিয়ার রহমান হত্যাকাণ্ডের পেছনে মদদ রয়েছে তার। এ ঘটনায় রণজিতকুমার রায়ের বিচার দাবি করে সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিতকুমার রায় বলেন, ‘এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। স্বার্থান্বেসী একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। একসময়কার কানসাট আন্দোলনের এ নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য হন। এর পরপরই বদলে যেতে থাকে তার আচরণ। সন্ত্রাস, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও দলের ভেতরে কোন্দল সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে। রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. এনামুল হক রাজউকের সঙ্গে মিলে উত্তরায় ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই তিনি টাকা তুলে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়িয়েছে। রাজশাহী শহরে সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় সিটি সেন্টার নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ নেয় মো. এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান এনা প্রোপার্টিজ। কিন্তু এ কাজও শেষ হয়নি গত তিন বছরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শনিবার যুগান্তরকে বলেন, যখন কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে সরকারি দলের কোনো এমপি বা তার আত্মীয়স্বজন ও নিজস্ব ক্যাডার-বাহিনীর লোকজন জড়িত থাকেন, তখন পুলিশকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই প্রভাবশালী মহলের টেলিফোন চলে আসে। সেক্ষেত্রে সরকারের উপরমহলের সবুজ সংকেত ছাড়া কোনোভাবেই অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এ কারণে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধামাচাপা পড়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে উপরের নির্দেশে অপরাধী প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
No comments:
Post a Comment