র গোলা ও বিমান থেকে ফেলা বোমায় প্রকম্পিত হয়ে উঠছে পুরো শাজাইয়া। প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে স্থানীয় বাসিন্দারা। রাস্তাঘাটে পড়ে রয়েছে নিহত নারী-শিশুর লাশ। ছিন্নভিন্ন দেহের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। শাজাইয়া থেকে পালিয়ে আসা এক নারী বলেন, ‘রাতেই বাড়ি ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু অন্ধকার বলে বের হওয়ার সাহস পাইনি। পুরো শহরে ভুতুড়ে পরিবেশ...। শহরজুড়েই লাশের গন্ধ আর বোমা-গুলির ভীতিকর আওয়াজ।’ ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহত নারীদের অনেকেই জীবন বাঁচাতে প্রিয় সন্তানকে বুকে নিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি অভিযান তাঁদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ফিলিস্তিন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এক বিবৃতিতে বলেছে, শাজাইয়া থেকে যারা সরে যেতে পারেনি, ইসরায়েলি অভিযানে তারা মূলত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা অনিশ্চিত। শাজাইয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান এলাকা থেকে পালিয়ে এসে রাস্তায় ট্যাক্সি খুঁজছিলেন ইবতেসাম বাতনিজি। তাঁকে ঘিরে আছে তিনটি শিশু। কোলেও আছে একটি। ইবতেসাম বলেন, ‘কোথায় যাব, জানি না। শাজাইয়া শহরের প্রতিটি এলাকায় নির্বিচার হামলা চালানো হচ্ছে।’ গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জাতিসংঘের আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নিয়েছেন। এখন সেখানেও আর জায়গা নেই। তাই অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন গাজার আল-শিফা হাসপাতালের সামনে চত্বরে। ওই চত্বরে ঘাসের ওপর বসে আছেন নাদা আবু আমর নামের এক নারী। পাশে খেলছে তাঁর দুই শিশু। নাদা বলেন, ‘এটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলি বোমায় আমাদের পাশের বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ওই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিই।’ আতাইত আইয়াদ তাঁর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ওই চত্বরে। তিনি বলেন, ‘...আমরা হামাসের সদস্য নই, আমরা হামলাকারীও নই, তার পরও ইসরায়েল আমাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ফিরে গিয়ে বাড়িটি অক্ষত অবস্থায় পাব, সেই আশা করতে পারছি না।’ জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সির (ইউএনআরডব্লিউএ) নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খারিয়া আলা মুকাইদ। ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১২ সালে ইসরায়েলি হামলার সময়ও তিনি জাতিসংঘের শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। খারিয়া বলেন, ‘এবারের পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম। আগের দুবার শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার দু-এক দিনের মধ্যেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার কবে যুদ্ধ বন্ধ হবে, তা কেউ জানে না।’ ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র আদনান আবু হাসানা জানান, ধারণক্ষমতার চেয়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি হামলার সময়ও এত বেশি মানুষ শিবিরে আশ্রয় নেয়নি। ইসরায়েলি বাহিনী রোববার রাতে শাজাইয়া ছাড়াও খান ইউনিস, রাফাসহ কয়েকটি এলাকায় হামলা চালিয়েছে। খান ইউনিস ও রাফায় হামলায় অন্তত ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রাফায় হামলায় একটি চারতলা ভবন বিধ্বস্ত হলে অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হামাসসহ ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে শাজাইয়ায়। এ কারণেই এখানে স্থল অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৭ জুলাই থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে সোমবার পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষ। ‘শাজাইয়া হামাসের রকেটের ঘাঁটি,: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শাজাইয়ায় রক্তাক্ত অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, শাজাইয়া শহর ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থী সংগঠন হামাসের মজুত করা রকেটের ঘাঁটি। নেতানিয়াহু বিবিসির আরবি বিভাগের সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামাসসহ ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থীদের অস্ত্র মজুত রাখা সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করতে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ওই অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে পড়ে।জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অভিযান চালানোর পক্ষে সাফাই গেয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ওই ধরনের এলাকায় ঢোকা ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর আর কোনো উপায় ছিল না। তবে ওই অভিযানের আগেই ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Tuesday, July 22, 2014
শাজাইয়া এখন মৃত্যুপুরী:প্রথম অালো
র গোলা ও বিমান থেকে ফেলা বোমায় প্রকম্পিত হয়ে উঠছে পুরো শাজাইয়া। প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে স্থানীয় বাসিন্দারা। রাস্তাঘাটে পড়ে রয়েছে নিহত নারী-শিশুর লাশ। ছিন্নভিন্ন দেহের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। শাজাইয়া থেকে পালিয়ে আসা এক নারী বলেন, ‘রাতেই বাড়ি ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু অন্ধকার বলে বের হওয়ার সাহস পাইনি। পুরো শহরে ভুতুড়ে পরিবেশ...। শহরজুড়েই লাশের গন্ধ আর বোমা-গুলির ভীতিকর আওয়াজ।’ ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহত নারীদের অনেকেই জীবন বাঁচাতে প্রিয় সন্তানকে বুকে নিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি অভিযান তাঁদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ফিলিস্তিন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এক বিবৃতিতে বলেছে, শাজাইয়া থেকে যারা সরে যেতে পারেনি, ইসরায়েলি অভিযানে তারা মূলত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা অনিশ্চিত। শাজাইয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান এলাকা থেকে পালিয়ে এসে রাস্তায় ট্যাক্সি খুঁজছিলেন ইবতেসাম বাতনিজি। তাঁকে ঘিরে আছে তিনটি শিশু। কোলেও আছে একটি। ইবতেসাম বলেন, ‘কোথায় যাব, জানি না। শাজাইয়া শহরের প্রতিটি এলাকায় নির্বিচার হামলা চালানো হচ্ছে।’ গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জাতিসংঘের আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নিয়েছেন। এখন সেখানেও আর জায়গা নেই। তাই অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন গাজার আল-শিফা হাসপাতালের সামনে চত্বরে। ওই চত্বরে ঘাসের ওপর বসে আছেন নাদা আবু আমর নামের এক নারী। পাশে খেলছে তাঁর দুই শিশু। নাদা বলেন, ‘এটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েলি বোমায় আমাদের পাশের বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ওই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিই।’ আতাইত আইয়াদ তাঁর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ওই চত্বরে। তিনি বলেন, ‘...আমরা হামাসের সদস্য নই, আমরা হামলাকারীও নই, তার পরও ইসরায়েল আমাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ফিরে গিয়ে বাড়িটি অক্ষত অবস্থায় পাব, সেই আশা করতে পারছি না।’ জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সির (ইউএনআরডব্লিউএ) নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খারিয়া আলা মুকাইদ। ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১২ সালে ইসরায়েলি হামলার সময়ও তিনি জাতিসংঘের শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। খারিয়া বলেন, ‘এবারের পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম। আগের দুবার শিবিরে আশ্রয় নেওয়ার দু-এক দিনের মধ্যেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার কবে যুদ্ধ বন্ধ হবে, তা কেউ জানে না।’ ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র আদনান আবু হাসানা জানান, ধারণক্ষমতার চেয়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি হামলার সময়ও এত বেশি মানুষ শিবিরে আশ্রয় নেয়নি। ইসরায়েলি বাহিনী রোববার রাতে শাজাইয়া ছাড়াও খান ইউনিস, রাফাসহ কয়েকটি এলাকায় হামলা চালিয়েছে। খান ইউনিস ও রাফায় হামলায় অন্তত ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রাফায় হামলায় একটি চারতলা ভবন বিধ্বস্ত হলে অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হামাসসহ ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে শাজাইয়ায়। এ কারণেই এখানে স্থল অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৭ জুলাই থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে সোমবার পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষ। ‘শাজাইয়া হামাসের রকেটের ঘাঁটি,: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শাজাইয়ায় রক্তাক্ত অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, শাজাইয়া শহর ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থী সংগঠন হামাসের মজুত করা রকেটের ঘাঁটি। নেতানিয়াহু বিবিসির আরবি বিভাগের সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামাসসহ ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থীদের অস্ত্র মজুত রাখা সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করতে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ওই অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে পড়ে।জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অভিযান চালানোর পক্ষে সাফাই গেয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ওই ধরনের এলাকায় ঢোকা ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর আর কোনো উপায় ছিল না। তবে ওই অভিযানের আগেই ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment