Friday, August 22, 2014

খালেদা ও তারেক গ্রেনেড হামলায় সরাসরি জড়িত : শেখ হাসিনা:নয়াদিগন্ত

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে খুনি পরিবার আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় খালেদা জিয়া সরাসরি জড়িত। আর শুধু খালেদা জিয়াই নয়; তার ছেলে তারেক রহমান ও তৎকালীন সময়ে তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাও গ্রেনেড হামলায় জড়িত।  গ্রেনেড হামলার দশম বার্ষিকী উ
পলক্ষে গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সামনে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।  জিয়াউর রহমানের পরিবারকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ খুনি পরিবারটি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাঙালির আশা-আকাক্সাকে ধূলিসাৎ করে দিতে চায়। কেবল খুন আর দুর্নীতিই তাদের প্রধান কাজ। তারা মানুষ হত্যা করে দেশের জনগণের উন্নয়নকে পদদলিত করতে চায়। এ খুনি পরিবারের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আর এ খুনিদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না।  বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী সেই ভয়াল ২১ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দেন। মাঝে মাঝে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখ লাগে আমার ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হলো। হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমার জীবনটা নিয়েও যদি আমার নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকত, স্বাভাবিক জীবন যাপন করত আমার কোনো কষ্ট ছিল না। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে এমন গ্রেনেড হামলা কেউ দেখেনি। একের পর এক এভাবে ১৩টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মনে হয় একটা কেয়ামত হচ্ছে। কখন থামবে কেউ জানে না। এ অবস্থায় পুলিশ লাঠিচার্জ-টিয়ার শেল (কাঁদানে গ্যাস) নিক্ষেপ করতে ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়নি। এলাকাকে কর্ডন (বেষ্টন) করে রাখার কথা ছিল তা করা হয়নি। তাড়াতাড়ি সব সরিয়ে ফেলা হয়। তাজা গ্রেনেড ছিল তা-ও রক্ষা করা হয়নি। যদি হাতের ছাপে জড়িতরা বের হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে বিএনপিপন্থী ডাক্তাররা কেউ চিকিৎসা দিতে আসেনি। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হয়নি। এখান থেকে অনেকেই ফিরে আসে। এ ঘটনায় বিএনপিকে অভিযুক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারে তখন বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা সংসদে আলোচনা করার জন্য মুলতবি প্রস্তাব দিলাম। সংসদ নেতা বিএনপি নেত্রী বললেন, এটা নিয়ে কোনো আলোচনাই হবে না। বিএনপি নেত্রী বললেন, আমি (শেখ হাসিনা) নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে এসব গ্রেনেড নিয়ে এসেছি। এ ছোট ব্যাগে ১৩টি গ্রেনেড কেমনে জায়গা হবে। আর আমি গ্রেনেড ছুড়ায় বিশেষজ্ঞ কি না দেশবাসী দেখেছে। এসব বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।  নারী নেত্রী আইভী রহমানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আইভী রহমানকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে সিএমএইচ-এ নেয়া হলো। সেখানে চলল চিকিৎসার নামে একটি খেলা। তার ছেলেমেয়েকে একটি কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। তখন খালেদা জিয়া আইভী রহমানকে দেখার নাম করে সেখানে যান। ছবি তুলেন। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ থেকেই বোঝা যায় তাদের (বিএনপির) উদ্দেশ্য কী ছিল। বাংলাদেশ হবে যারা মেনে নিতে পারেনি। তারা পঁচাত্তর ঘটিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খুনিদের সাক্ষাৎকারে জিয়ার নামও এসেছে। তিনি উৎসাহ দিয়েছিলেন। জিয়া বলেছে সে সরাসরি থাকবে না। তবে সফল হলে তাদের সাথে থাকবে। আর সেই জিয়ার পরিবারই ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। সরকারের মদদ না থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব না। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে উপস্থিত হন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ১৪ দল নেত্রী হিসেবে বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। পরে ২১ আগস্ট আহত ও নিহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment