Thursday, September 4, 2014

৩০০০ পুলিশ অনড়:কালের কন্ঠ

কনস্টেবল বদরুল আহসান তালুকদার প্রায় দেড় যুগ ধরে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত। নানা অভিযোগ ওঠায় ২০১১ সালে তাঁকে বদলি করা হয় বরিশাল রেঞ্জে। কিন্তু রাজনৈতিক তদবিরে বদলির আদেশ বাতিল করিয়ে তিনি থেকে যান পুরনো কর্মস্থলে। আবারও অভিযোগ ওঠায় দেড় বছর আগে তাঁকে বদলি করা হয় শেরপুর জেলায়। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নতুন কর্মস্থলে আর যোগই দেননি। তদবির বাণিজ্য করে তিনি কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গ
েছে। ঢাকার শ্যামপুর থানার এএসআই জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। তিনি ১০ বছর ধরে ওয়ারী জোনে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও ওই এলাকায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এভাবে সারা দেশে অন্তত তিন হাজার পুলিশ সদস্য বছরের পর বছর ঘুরেফিরে একই থানা, জোন, জেলা, মেট্রোপলিটন এলাকা ও রেঞ্জে চাকরি করে আসছেন। পাঁচ বছর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত একই স্থানে বহাল তবিয়তে থাকার নজিরও রয়েছে। একই শহর বা রেঞ্জে থেকে অনেকে কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেতে পেতে ইন্সপেক্টর ও সহকারী পুলিশ সুপার পর্যন্ত হয়ে গেছেন। এর পরও তাঁদের বদলি নেই। আবার দেখা যায়, গুরুতর অপরাধের কারণে কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তি হিসেবে অন্য জেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু মাসখানেক থেকে ফের ওই জেলায় চলে আসেন তাঁরা। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বদলির আদেশ আসার পরও রহস্যজনক কারণে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়। অথচ পুলিশ প্রবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কোনো পুলিশ সদস্য দুই বছর এক স্থানে থাকতে পারবেন না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে সময়ের মেয়াদ কিছুদিন বাড়াতে পারে। আবার বেশি দিন একই জায়গায় থাকার সুবাদে অসাধুচক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে পুলিশ সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ফলে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে প্রভাব খাটিয়ে একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার মূল উদ্দেশ্যই হলো অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়া। এ রকম বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে। এ ছাড়া একটি গোয়েন্দা সংস্থাও এ রকম পুলিশ সদস্যদের একটি তালিকা করছে বলে জানা গেছে। বদরুল আহসান তালুকদারের ঢাকার কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারসংলগ্ন এক হাজার ৫০০ স্কয়ার ফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট ও শাহজাহানপুরে আরেকটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। কল্যাণপুরের ফ্ল্যাটটি তাঁর প্রথম স্ত্রী শিরিনের নামে কেনা। দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমার নামে আছে ব্যাংক ব্যালান্স। এ ছাড়া মালেক স্পিনিং, আইএফআইসি ব্যাংক, বিকন গ্রুপসহ কয়েকটি কম্পানির শেয়ারে প্রায় কোটি টাকা বিনোয়োগ আছে তাঁর। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার মাইজহাটি বাজারে একটি তিনতলা মার্কেট করেছেন, বাজারের পাশেই প্রায় দুই একর জায়গায় গড়ে তুলেছেন একটি মাছের ঘের। এটি দেখাশোনা করেন ম্যানেজার একলাছ মাস্টার। এ ছাড়া ওই এলাকায় একটি বাড়িও বানিয়েছেন বদরুল আহসান। এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার ফোন করা হলেও বদরুল আহসান ফোন ধরেননি। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনায় ফতুল্লা থানার ওসি আকতার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল মতিনসহ ৮৩ জন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। তাঁদের সবাই পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলায় কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন থাকার কারণেই তাঁদের সঙ্গে অপরাধীদের সখ্য গড়ে ওঠে। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চাকরিসংক্রান্ত যেকোনো আইন বা বিধান যেকোনো প্রতিষ্ঠানকেই মানতে হয়। পুলিশের ক্ষেত্রেও তা হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতিকরা পুলিশকে এমনভাবে ব্যবহার করছেন, তাঁদের বদলি করেও সরানো যাচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা ঘুরেফিরে একই থানা বা একই রেঞ্জে চাকরি করে আসছেন।’ তিনি বলেন, পুলিশের চাকরিসংক্রান্ত কোনো নিয়ম আছে বলে মনে হয় না। এ ছাড়া রাষ্ট্রও এ ক্ষেত্রে কোনো কিছু করছে না। দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় থাকায় পুলিশ সদস্যদের নিজেদের ও পৃষ্ঠপোষকদের সুবিধা হচ্ছে। জনগণ কোনো সুফল পাচ্ছে না। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, সব কটি সংস্থারই নিজস্ব পলিসি আছে। পুলিশের মধ্যেও তা আছে। যেসব পুলিশ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে একই থানা, রেঞ্জ বা শহরে থাকছেন তাঁদের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। দীর্ঘদিন থাকার ফলে তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিক ও অপরাধীদের সখ্য গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি নিজেদের স্বার্থ তো রয়েছেই। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকেই পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পুলিশের প্রবিধানে যা আছে তা মানতেই হবে। এক স্থানে বেশি দিন থাকা উচিত নয়। বদলির আদেশ বাতিল করাও উচিত নয়। যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে একই স্থান বা রেঞ্জে থাকছেন তাঁদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করছি। এ ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, প্রশাসনিক কাজে অনেককে বেশি সময় ধরে একই রেঞ্জ, জেলা বা থানায় রাখা হয়। আবার মাঝেমধ্যে মানবিক দিকও বিবেচনা করা হয়। তবে দুই বছরের বেশি হয়ে গেলে অনেককেই বদলি করা হচ্ছে। কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে থেকে দুর্নীতি করে সম্পদ বানান এবং অপরাধীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন, সেই তথ্যাদি প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, পুলিশের মধ্যে থেকে কোনো দুর্নীতি করা যাবে না। নিয়মের মধ্যে থেকে সব কিছু মানতে হবে। পুলিশ বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো বদনাম রটানো যাবে না। ইতিমধ্যে নানা অভিযোগে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ আগস্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার মো. শামসুদ্দীনকে খুলনা মেট্রোপলিটনে (কেএমপি), কেএমপি কমিশনার শফিকুর রহমানকে চট্টগ্রাম মেট্রোলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার এস এম মনির-উজ-জামানকে ডিআইজি খুলনা রেঞ্জে, সিআইডি ঢাকার ডিআইজি (চলতি দায়িত্ব) শৈবাল কান্তি চৌধুরীকে বিএমপি কমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘ শান্তি মিশন ফেরত নড়াইলের এসপি এস এম ফজলুর রহমানকে কেএমপির উপকমিশনার, মিশন ফেরত বেতবুনিয়ার কমান্ড্যান্ট (এসপি) মো. মোরশেদ আলমকে এসপি পিবিআই ঢাকা, পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মো. ছিবগাত উল্লাহকে অধিনায়ক (এসপি) পঞ্চম এপিবিএন ঢাকা, বান্দরবানের এসপি মো. কামরুল হাসানকে এআইজি পুলিশ সদর দপ্তর, বরিশাল রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত এসপি মো. আসাদুজ্জামানকে এআইজি পুলিশ সদর দপ্তর, রংপুর রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত এসপি দেবদাস ভট্টাচার্য্যকে বান্দরবানের এসপি, রাজশাহী রেঞ্জে সংযুক্ত ও গাইবান্ধার প্রাক্তন এসপি এ কে এম নাহিদুল ইসলামকে এসপি মেহেরপুর, মেহেরপুরের এসপি মো. মোফাজ্জল হোসেনকে হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর অঞ্চলের এসপি, এআইজি পুলিশ সদর দপ্তরের মো. মুশফেকুর রহমানকে উপপুলিশ কমিশনার এসএমপি পদে বদলি করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নতুন কর্মস্থলে যোগ দিলেও বেশির ভাগই এখনো স্বপদে আগের জায়গায়ই রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগে সিএসপি কমিশনার শফিকুল ইসলামকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে পাওয়া দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার প্রকৌশলী বনজ কুমার মজুমদার ছয় বছর, (এর আগে তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ছিলেন), সিএমপির এডিসি (পশ্চিম) তানভীর আহম্মেদ আট বছর (চট্টগ্রাম রেঞ্জসহ), কোতোয়ালি থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম সিএমপি ও চট্টগ্রাম জেলায় আট বছর, পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ সিএমপি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে আট বছর, ডবলমুরিং থানার ওসি মাতাউল ইসলাম সিএমপি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে চার বছর, ইন্সপেক্টর বাবুল ভৌমিক, আবু জাফর ও মো. ওমর ফারুক সিএমপি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১০ বছর, এ ছাড়া এসআই ও কনস্টেবল আছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক যাঁরা পাঁচ থেকে ১০ বছর ধরে সিএমপিতে কর্মরত; সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মকবুল হোসেন ভূঁইয়া (চার বছর), হবিগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি ও বর্তমানে সিলেটের ডিবি ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল হক সাত বছর (এর আগে তিনি সিলেট রেঞ্জে ছিলেন), সিলেট কোতোয়ালি থানার এসআই মোহাম্মদ মোবাশ্বির ছয় বছর, এএসআই শফিকুল ইসলাম চার বছর, এএসআই ইয়ার হোসেন চার বছর, সিলেট রেঞ্জের এসআই গাজী আবদুল কাইয়ুম ছয় বছর, এসআই ফয়েজ উদ্দিন ছয় বছর, কনস্টেবল ওয়ালিউল্লাহ ১৯ বছর, কনস্টেবল জীবন মিয়া ১৯ বছর, কামাল উদ্দিন ১৭ বছর, এসআই আবদুল খালেক প্রায় ছয় বছর, জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার পাঁচ বছর, এএসআই মো. আবদুস সাত্তার ১৬ বছর, মিজানুর রহমান ১৫ বছর, কনস্টেবল আফতাব আলী ১৬ বছর, কনস্টেবল ময়না মিয়া ১৬ বছর, কনস্টেবল আমির হোসেন ১৩ বছর, কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম ১১ বছর; হবিগঞ্জ জেলার এসআই আসলাম আট বছর, প্রভাকর রায় আট বছর, এএসআই ইসলাম হোসেন ১৮ বছর ও নারায়ণ গুপ্ত ১৬ বছর, কনস্টেবল শওকত আলী ১৯ বছর, গাজী জাহাঙ্গীর আলম ২০ বছর, ফরহাদ হোসেন ২০ বছর, আবুল কালাম আজাদ ২০ বছর; ঢাকার মিরপুর থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ খান ডিএমপিতে প্রায় সাত বছর, কাফরুল থানার সাবেক ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী ডিএমপিতে ১২ বছর, উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি রফিকুল ইসলাম সাত বছর, উত্তরা জোনের ডিসি নিসারুল আরিফ প্রায় সাত বছর, পুলিশ সদর দপ্তরের এএসআই মিলন প্রায় ১২ বছর, সিটি এসবির এসআই বসু মিয়া ১৯ বছর, এসআই সাহারুল (এসবি) ১০ বছর, এএসআই রফিকুল ইসলাম (এসবি) ১০ বছর, কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন (এসবি) ১০ বছর, ডিবির এসআই নাসিম ১৪ বছর, শেরে বাংলানগর থানার ওসি মোমিন হোসেন আট বছর, এসি (রমনা) শিবলী নোমান সাত বছর, ডিবির এসআই কবির আট বছর, কদমতলী থানার এসআই কিবরিয়া ওয়ারী জোনে আট বছর, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবনী শংকর ওয়ারী জোনে ৯ বছর, কদমতলী থানার এসআই ওয়ারী জোনে ১০ বছর, তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ডিএমপিতে প্রায় আট বছর, খিলগাঁও থানার ওসি শেখ সিরাজুল ইসলাম প্রায় সাত বছর, রমনা ওসি মশিউর রহমান সাত বছর; বিএমপির (বরিশাল) কোতোয়ালি থানার এএসআই রফিকুল ইসলাম বরিশাল রেঞ্জে ১২ বছর, উজিরপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন ১২ বছর (বরিশাল রেঞ্জসহ), কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মহিউদ্দিন ছয় বছর, কোতোয়ালি থানার ওসি সাখাওয়াত হোসাইন বিএমপিতে ছয় বছর, কোতোয়ালি থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন আট বছর, বরিশাল আদালতের এসআই সামাদ ১০ বছর; কোর্ট ইন্সপেক্টর শহিদ শুকরানা ময়মনসিংহ জেলায় ছয় বছর, ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি এস আলম ময়মনসিংহ জেলায় ছয় বছর, সিটি এসবির (ঢাকা) ইন্সপেক্টর আবু তালেব ছয় বছর; ডিবির ইন্সপেক্টর ডিএমপিতে প্রায় আট বছর, ঢাকা জেলার এসআই শাহাদৎ হোসেন ১২ বছর, লালবাগ জোনের উপপুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ পদোন্নতি পেয়ে ডিএমপিতে প্রায় সাত বছর কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলায় বদলি করা হয়। এর আগে তাঁকে মানিকগঞ্জে বদলি করা হলে তা বাতিল করে ঢাকায় থেকে যান। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৭ জুলাই তৎকালীন বিরোধীদলীয় হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে নির্যাতন করার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুকসহ (সাত বছর) সহস্রাধিক সদস্য পাঁচ থেকে ১০ বছর ধরে ডিএমপিতে কর্মরত আছেন। রাজশাহী ও খুলনা রেঞ্জে অন্তত দেড় হাজার সদস্য দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। এ রকম তিন হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্যের নাম জানা গেছে, কিন্তু স্থান সংকুলান হবে না বলে সবার নাম ছাপানো সম্ভব হলো না। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সততা-নিষ্ঠা ও নিয়মের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছি। ১৯৮৯ সালে সিলেট রেঞ্জ দিয়ে চাকরি শুরু হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেঞ্জে এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পদোন্নতি পেয়ে ডিএমপি ও ঢাকা জেলায় চাকরি করি। পরবর্তী সময়ে আবার  আমাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়। একই রেঞ্জে বেশি দিন চাকরি করলেও আল্লাহর রহমতে কেউ বদনাম করতে পারবে না। চাকরি করছি নিজের যোগ্যতা দিয়ে। কখনো কারো লেজুড়বৃত্তি করতে হয়নি। ভবিষ্যতে হবেও না।’ ডবলমুরিং থানার ওসি মাতাউল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম রেঞ্জে সব মিলিয়ে চার বছরের মতো চাকরি করছি। এর আগে জাতিসংঘ মিশনে দেড় বছর ছিলাম। কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলে সেভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। এক জায়গায় বেশি দিন থাকলে অসৎ পথে চলতে হবে- এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।’ পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে থেকে পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অন্য সদস্যরা সেখানে ‘মধু’ পেয়ে যান। অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকার পরও মূলত রাজনৈতিক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তাদেরই লেজুড়বৃত্তি করে আমাদের ওই শ্রেণির সহকর্মীরা।

No comments:

Post a Comment