চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে চোরাচালানে জব্দকৃত সোনা জমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। চোরাচালানের যেসব সোনা চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ হয়, তা জমা দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে সোনাসহ অন্যান্য ধাতব দ্রব্য জমা রাখার ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, চট্টগ্রামে তা করা হয় না। এ নিয়ে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় চিঠি দিয়ে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষ। কাস্টম কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমান প্রক্রিয়ায় সোনা জমা নিয়ে পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে। ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জব্দকৃত সোনার বার বুলিয়ান ভোল্টে জমা গ্রহণের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা কর্তৃপক্ষ ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সোনার বারের গুণগত মান যাচাইসহ ওজন সম্পর্কে সনদ ইস্যু করে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময়ে জব্দকৃত সোনার বার কাস্টম হাউসের কাস্টডিয়ান শাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় জমা হয়। কিন্তু সেখানে জমা হওয়ার সময় এসব সোনার বারের ওজন, গুণগত মান ও সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্যই লিপিবদ্ধ হচ্ছে না। এ পদ্ধতিকে অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় গত ১৫ মে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ। কাস্টমসের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় সোনার বারগুলো অস্থায়ীভাবে সেফ ভোল্টে জমা গ্রহণের যে পদ্ধতি চালু রয়েছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই জব্দকৃত সোনার বারের গুণগত মান, সত্যতা, সংখ্যা ও ওজনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিশ্চিত হয়ে সনদ ইস্যুর মাধ্যমে সোনার বার গ্রহণের ব্যাপারে কার্যক্রম গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়। শুল্ক কর্তৃপক্ষের এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জবাব দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে যে প্রক্রিয়ায় সোনা বা ধাতব পদার্থ জমা রাখা হয়, ব্যাংকের অন্যান্য কার্যালয়ের ভল্টের অবকাঠামো সে রকম নয়। তাই চট্টগ্রাম শাখায় একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তাই মতিঝিল অফিস ব্যতীত অন্যান্য অফিসে বর্তমানে যেভাবে সোনা ও মূল্যবান ধাতব পদার্থ জমা রাখা হচ্ছে আপাতত সে পদ্ধতিই বহাল রাখার যুক্তি দেখানো হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে কাস্টম কর্তৃপক্ষের মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে মতিঝিল অফিসে জব্দকৃত সোনা জমা করার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে এ উত্তর সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. মাসুদ সাদিক জানান, জব্দকৃত সোনা হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি অনিরাপদ মনে হওয়ায় সনদ ইস্যুর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় ইতিপূর্বে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু চিঠির উত্তরে বলা হয়েছে, ঢাকার মতো করে চট্টগ্রামে সনদ ইস্যু করা সম্ভব নয়। সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় এখন সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হবে। তিনি জানান, সোনা জমার বর্তমান প্রক্রিয়া একসময়ে গিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রক্রিয়াটি এখন থেকেই স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। কাস্টডিয়ান শাখার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাস্টডিয়ান শাখার মাধ্যমে স্টিল বক্সে যৌথ স্বাক্ষর করে সিল করা হয়। প্রতিটি বাক্স সাদা কাপড় দিয়ে আবৃত করে ছয়টি পয়েন্টে সিলগালার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় একটি লট নম্বরের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে সেফ ভোল্টে জমা রাখা হয়। সেখানে জমা গ্রহণের পর এসব সোনার বারের একটি রিসিভ কপি ইস্যু করা হয়। কপিতে শুধু একটি নম্বর লেখা থাকে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত এ রিসিভ কপিতে সোনার বারের গুণগত মান, সত্যতা, সংখ্যা ও ওজন সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকে না। ফলে প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ সোনা জমা হচ্ছে কিংবা আদৌ এর কোনো সত্যতা রয়েছে কিনা, তার কোনো হিসাব থাকছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসিভ নথিতে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাস্টডিয়ান শাখার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২৩০ তোলা, ফেব্র“য়ারিতে ৫ হাজার ১০০, মার্চে ১০ হাজার ৭০, এপ্রিলে ১ হাজার ৫৩০ তোলা, জুনে ৫ কেজি ৮৫ গ্রাম, জুলাইতে ১ হাজার ৪০ তোলা এবং আগস্ট মাসে ৩ হাজার ৫৫০ তোলা সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় ৬৯৩টি স্বর্ণবারে (১৪টি লটে) ৬ হাজার ৯৩০ তোলা স্বর্ণ জমা দেয়া হয়েছে কাস্টডিয়ান শাখার মাধ্যমে।
No comments:
Post a Comment