Tuesday, October 21, 2014

পুঁজি লুটের ফাঁদ বহুমুখী সমবায় সমিতি:যুগান্তর

সমবায়ের নামে সাধারণ মানুষের ৯ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। গত এক বছরে ২১টি সমবায় সমিতির ৯ লাখ সদস্যের এই টাকা নিয়ে ওরা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইনগত দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা, তদারকির অভাবে একাধিক প্রতারক চক্র বহুমুখী সমিতির নামে সারা দেশে সাধারণ মানুষের পুঁজি লুটে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ ধরনের প্রতারণা রোধে সমবায় অধিদফতরের জোরালো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষ
তিগ্রস্তরা। সঞ্চয়ের টাকা লোপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ৫ হাজার সমবায় সমিতিকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতারণা রোধে এই পাঁচ হাজার সমিতি ঘিরে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা নেই সমবায় অধিদফতরের। ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ থানায় মামলা করলে স্থানীয় প্রশাসন ওই সমিতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ কাদের সরকার যুগান্তরকে বলেন, একটা সময় সমবায়ের নামে অনেক প্রতারণার কথা শোনা গেছে। কিন্তু এখন আর শোনা যায় না। সমবায়ের নামে প্রতারণা কিংবা ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো অথবা একাধিক শাখা রাখার সুযোগ নেই। ২০১১ সালের সংশোধিত আইনে প্রতারণার এ সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ওই আইন সংশোধনের পর নতুন করে কোনো সমবায় কিংবা বহুমুখী সমবায়ের অনুমোদনও দেয়া হয়নি। আবার যেহেতু একাধিক শাখা খোলার সুযোগ নেই, তাই সমবায়ের নামে প্রতারণার অভিযোগও আগের চেয়ে কমে গেছে। ঢাকায় এ অভিযোগ শূন্যের কোঠায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে একটি-দুটি ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাঠের বাস্তবতার সঙ্গে সরকারি বক্তব্যের কোনো মিল নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুমুখী সমবায়ের নামে প্রতারণার হার বেড়েই চলেছে। একের পর এক অঘটনেও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেসামাল হয়ে উঠছে সমবায় খাত। এ সুযোগে ‘বহুমুখী সমবায়’ কার্যক্রমের নামে স্থানীয় ছোট ও মাঝারি সঞ্চয়ীদের পুঁজি লুটের ফাঁদ পেতে বসেছে প্রতারকরা। এতে সরকারি অনুমোদিত সার্টিফিকেটকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি তহবিলে ‘মাত্র ৩০০ টাকা’ জামানত ফি দিয়েই যে কেউ নিতে পারেন বহুমুখী সমবায় সমিতি চালুর সনদ। একটি সনদ নিয়ে একাধিক শাখা খুলে বসার নজির রয়েছে। খুব সহজে এ ধরনের সনদ মিলে যাওয়ায় সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত এক বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য। অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমিয় কুমার চট্টোপাধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, সমবায়ের তদারকি জোরদারে বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। বিশেষ করে, ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে সন্দেহজনক অন্তত ৫ হাজার সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিশেষভাবে তদারক করা হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে, ওইসব প্রতিষ্ঠানে যে কোনো অনিয়মের দায় তাদেরই বহন করতে হবে। তিনি বলেন, সমিতিগুলোর প্রতারণা, অসঙ্গতি, অনিয়ম তদারকির জন্য জেলা সমবায় কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা সমবায় কর্মকর্তা প্রতি মাসে তদারকি কর্মকর্তার কাছ থেকে জমা খরচের হিসাব ও প্রতিবেদন নেন। এরপর তিনি এসব রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন। সেখানে কোনো ত্র“টি থাকলে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি অসঙ্গতিপূর্ণ সমবায় পরিদর্শনের জন্য জেলা সমবায় কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া আছে। জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেশে ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৯টি সমবায় সমিতির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক সমবায় সমিতির সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৪। কেন্দ্রীয় সমিতির সংখ্যা ১ হাজার ১১৩ ও জাতীয় সমিতি ২২টি। এসব সমিতির সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৯৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৭। অনুমোদিত সমিতির মধ্যে অসাধু চক্রের নিয়ন্ত্রণাধীন সমিতিগুলো শুরু থেকেই পুঁজি লুটের ফন্দি আঁটতে থাকে। তারা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অফিস নিয়ে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে সমিতির সদস্য সংগ্রহের কাজে নামে। প্রচার চালায় সমিতির সদস্যের বাইরেও ঋণ দেয়া হবে। সঞ্চয়ের বিপরীতে দেয়া হবে লাভজনক মুনাফা ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকায় মাসে ১৬শ’ টাকা মুনাফা দেয়ার প্রস্তাব প্রচার করা হয়। এ হিসাবে বছরে ১৯ হাজার ২০০ টাকা। সমপরিমাণ টাকা ব্যাংকে রাখলে মুনাফা মেলে বছরে ১০ হাজার টাকা। সেখানে ব্যাংকের চাইতেও দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়ার মতো প্রলোভন দেয়া হচ্ছে প্রতারকদের প্রতিষ্ঠান থেকে। এলাকা ভেদে একেক সমবায় প্রতিষ্ঠান সদস্য হওয়ার শর্তে দিচ্ছে একেক রকম প্রস্তাব। অনেক প্রতিষ্ঠান সদস্যের বাইরের সঞ্চয়ীদেরও প্রভাবিত করছে। এভাবে লোভ দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে এ চক্র নানা কায়দায় প্রতারণার জালে জড়াচ্ছে। এদের লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে অনেক শিক্ষিত ও সচেতনরাও ধরা দিচ্ছেন। এরপর দিনে দিনে স্থানীয় বিভিন্ন আয়ের মানুষের ঘাম ঝরানো সঞ্চয় কিংবা প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত টাকা স্রোতের ঘূর্ণির মতোই ঘুরে ঘুরে এসে জমা হচ্ছে প্রতারকদের জালে। লোভে পড়ে অনেকে জমিজমা বিক্রি করেও টাকা দিচ্ছেন। প্রথমদিকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে আকর্ষণীয় মুনাফাও দেয়া হচ্ছে গ্রাহককে। এর ফলে ব্যাংকের পরিবর্তে সেই সমবায়ী প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের সঞ্চয়ী অর্থ আরও বেশি করে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু এরপরই ঘটছে ঘটনাটি। ওই সমবায়ের কাছে গ্রাহকের রক্ষিত আমানত লাখ থেকে কোটি কিংবা কোটি থেকে শত কোটি পা রাখতেই প্রতারকদের আসল রূপ ধরা পড়ছে। সবার অজান্তে হঠাৎ করেই একদিন রাতের আঁধারে সাইনবোর্ড গুটিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম গুটিয়ে না নেয়া হলেও মুনাফা দেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে। শেষে টাকা উঠাতে গেলে নয়ছয় বলে সময়ক্ষেপণ এবং একপর্যায়ে গ্রাহককেই হুমকি-ধমকি দেয়া হয়ে থাকে। এ প্রতারক শ্রেণীর অংশটি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাধর। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস গ্রাহকের নেই। এভাবেই সমবায়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ছে। এতে লাভ তো দূরের কথা, সংশ্লিষ্ট সমবায়ের অনুকূলে রাখা গচ্ছিত আমানতও গ্রাহক ফিরে পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, স্থানীয় সমবায় কর্মকর্তাদের হয় পর্যাপ্ত তদারকি ও সদিচ্ছার অভাব, নয়তো ‘ম্যানেজিং পলিসিতে নতজানু’ থাকায় প্রতারণার আগে-পরে এদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। মূলত এভাবেই গ্রাহকের গচ্ছিত আমানতে এসব সমবায় প্রতিষ্ঠান অল্পদিনেই ফুলে-ফেঁপে উঠছে। সূত্র জানায়, সমবায় সমিতি (সংশোধন) আইন-২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো সমবায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের নামের সঙ্গে ব্যাংক শব্দ যুক্ত করতে পারবে না। ফলে ব্যাংকিং কার্যক্রমও চালাতে পারবে না। শুধু সদস্যদের আমানত বিভিন্ন ধরনের লাভজনক খাতে পরিচালনা করতে পারবে। কিন্তু বেশিরভাগ সমবায়ই সদস্যের বাইরে থেকেও ঋণ দেয়া-নেয়া, এফডিআর সংগ্রহ এবং উচ্চহারের সুদে দাদন ব্যবসার মতো অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আবার আইন অনুযায়ী একের অধিক শাখা খোলার বিধান না থাকলেও দেশজুড়ে অধিকাংশ বহুমুখী সমবায়েরই রয়েছে একাধিক থেকে সহস্রাধিক শাখা। এসব শাখায় গ্রাহকের অর্থ নিয়ে প্রতিনিয়ত নয়ছয় হলেও এসব শাখা বন্ধে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান সমবায় অধিদফতরের কোনো উদ্যোগ নেই। অনুমোদন ছাড়া কোনো সমিতির মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালালে সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজা ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু এ বিধান কার্যকরের কোনো নজির নেই। অপরদিকে আইন অনুযায়ী যাদের একের অধিক শাখা অফিস রয়েছে, আইন কার্যকরের ৬ মাসের মধ্যে তা একীভূত করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সংশোধিত আইনের বয়স দেড় বছর গত হলেও তা পালন করেনি বেশির ভাগ বহুমুখী সমবায় প্রতিষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে সমবায় সমবায় অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমিয় কুমার চট্টোপধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, একের অধিক শাখা রয়েছে এমন সমিতিগুলো আইন অনুযায়ী আর চালাতে পারবে না। তবে বিপুলসংখ্যক সদস্যের পুঁজি নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে তাদের কিছুটা সময় দেয়া হয়েছে। যারা সমবায়ের নামে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রেই দুর্বলতা রয়েছে। নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় আইন, নীতি-কাঠামোও যথেষ্ট সবল নয়। অন্যদিকে আমাদের সমাজে লোক ঠকানো, প্রতারণা ও দুর্বৃত্তায়ন ব্যাধি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যদিও অনেক ভালো ভালো আইন আছে আমাদের। কিন্তু ওইসব আইনের প্রয়োগ সেভাবে ঘটছে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিদষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠছে। এ কারণেই এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। তিনি মনে করেন, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, দক্ষতা, আন্তরিকতা, পর্যাপ্ত তদারকি এবং আইন ও নীতি কাঠামোর সক্ষমতা বৃদ্ধিই পারে এসব প্রতারণা ঠেকাতে। এ প্রসঙ্গ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ তাদের জীবনের চাকা ঘুরানোর আশা নিয়ে ছোট ছোট সমবায় সমিতি গঠন করে প্রতারিত হচ্ছেন। এটি খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক। সমবায়ের নামে বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক যত অনিয়ম : যশোরে এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান রিয়েল স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডে দশ হাজার গ্রাহকের লগ্নি করা আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাটের আশংকা করা হচ্ছে। গ্রাহকরা লগ্নি ও লভ্যাংশের কোনো কিছুই হাতে পাচ্ছে না। কর্মকর্তাদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। মুনাফা নয় লগ্নিকৃত টাকাই ফেরত পেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন গ্রাহকরা সম্প্রতি যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে। অভিযোগ রয়েছে, কয়েক বছর আগে যশোর শহরের চৌরাস্তা মোড়ে অফিস খুলে এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান রিয়েল স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড মাসে এক লাখে ১৬শ’ টাকা মুনাফার প্রতিশ্র“তি দিয়ে টাকা জমা নিতে থাকে। এ প্রলোভনে এ অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জমা দেন। এখন জমাকৃত টাকার লভ্যাংশও দিচ্ছে না, আবার লগ্নিকৃত টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। রাজশাহী বিভাগীয় সমবায় দফতরের সূত্রমতে, এ বিভাগে অন্তত ১০ হাজার অর্থলগ্নিকারী মাল্টিপারপাস কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বর্তমানে রয়েছে অকার্যকর। আর চালু থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা অভিযোগ। সম্প্রতি বরেন্দ্র মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী অঞ্চলের গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, শেখ শাহীন আকতার ২০০৮ সালের শেষদিকে জেলা সমবায় অধিদফতর থেকে বরেন্দ্র মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেন। এরপর তিনি নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় অফিস খুলে বসেন। তিনি নিজেই ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ও স্ত্রী মনজিলা আকতার ছানুকে পরিচালক করেন। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে রাজশাহী নগরী ও নগরীর বাইরে মোট সাতটি অবৈধ শাখা খুলে বসেন। যার মধ্যে রয়েছে নগরীর কাদিরগঞ্জ, পুঠিয়ার বানেশ্বর, বাঘা, দুর্গাপুরের কানপাড়া, পাবনার টেবুনিয়া, ঈশ্বরদী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর। এরই মধ্যে গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহীর বাঘা ও দুর্গাপুর, পাবনার ঈশ্বরদী ও টেবুনিয়া শাখা বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে রাজশাহীতে গ্রাহকদের ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ডিজিটাল বিজনেস প্লাস নামে অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া উত্তরা ইনভেস্টমেন্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামের আরও আরেকটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান অর্ধকোটি টাকার আমানত নিয়ে অফিস বন্ধ করে দেয়। এছাড়া ইউনিরুট, সাকসেস প্রপার্টিজ লিমিটেড, আমানা গ্রুপ, পপুলার মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ডিজিটাল বিজনেস প্লাস এবং সাকসেস প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে একাধিক মামলা। মাল্টিপারপাস কোম্পানির নামে সিরাজগঞ্জেও একই প্রতারণা চলছে। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জে চারটি মাল্টিপারপাস কোম্পানি গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। মেহেরপুর জেলায় ৪০টি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে আর ফেরত দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এরই মধ্যে অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়েছে। চাঁদপুরে গ্রাহকদের সঞ্চয় করা অর্থ নিয়ে উধাও হচ্ছে সরকার নিবন্ধিত সমবায় সমিতি। টঙ্গী ও গাজীপুরেও গড়ে উঠেছে এ ধরনের প্রতারণামূলক অসংখ্য মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি।  

No comments:

Post a Comment